বিশেষ প্রতিনিধিঃ
বাণিজ্য নগরী নারায়ণগঞ্জের সাথে ঢাকার যোগাযোগের অন্যতম বড় মাধ্যম রেল। প্রায় ব্রিটিশ আমল থেকে পণ্য সামগ্রী সরবরাহে নদীপথের পরেই ছিল রেল যোগাযোগের ব্যবস্থা। কালের বিবর্তনে পণ্যবাহী ট্রেন উঠে গিয়ে শুধুমাত্র যাত্রী পরিবহনে সীমাবদ্ধ রয়েছে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ রেলপথে। কিন্তু যাত্রীদের নূন্যতম সেবাটাও দিতে যেন হিমশিম খেতে হচ্ছে রেল কতৃপক্ষকে। অথচ এই রুটে প্রতিদিন অর্ধ লক্ষেরও বেশী মানুষ যাতায়াত করে থাকে। একের পর এক অব্যবস্থাপনা আর দায়সাড়া কর্মকান্ডে সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তি দিনের পর দিন বেড়েই চলছে।
অথচ বছর কুড়ি পূর্বেও এই রুটে পণ্য পরিবহণ করতো ব্যবসায়ীরা। নারায়ণগঞ্জের ৫ নং ঘাট থেকে জাহাজে পণ্য খালাস হয়ে মালবাহী ট্রেনে করে পৌছে যেত কমলাপুরে। একই ভাবে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পণ্য আমদানীতেও রেলের ছিল উল্ল্যেখ যোগ্য ভূমিকা। কিন্তু অজানা কারনে ধীরে ধীরে রেলের চাইতে সড়ক পথে বেশী বিনিয়োগ বাড়তে থাকে সকল দিক থেকে। ফলশ্রুতিতে একসময়ে আরামের পরিবহণ হিসেবে পরিচিত ট্রেন পরিবর্তিত হয় ভোগান্তির বাহনে। যাত্রী থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীরাও ধীরে ধীরে মুখ ফিরিয়ে নেয়। শুধুমাত্র সময়মত ছাড়া ও পৌঁছুতে না পারার কারনে কয়েক লক্ষ কর্মঘন্টা নষ্ট করছে রেল। আর এ থেকে উত্তরণে একের পর এক মৌখিক উদ্যোগ নেয়া হলেও তা যাত্রীদের কাজে আসেনি।
জানা যায়, বর্তমানে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ রেলপথে দিনে ৩৮ বার চলাচল করে ট্রেন। এর ভেতর ৬ বার চলাচল করে ডিজেল চালিত ডেমু ট্রেন। বাকি ৩২ বার চলাচল করে পুরাতন চালিত ট্রেন। তবে কোন ট্রেনেই যাত্রীদের পর্যাপ্ত সেবা দিয়ে সন্তষ্ট করতে পারেনি। বরাবরের মত চলাচলের সময় অনিয়ম, মাঝপথে ট্রেন বিকল, বগিতে পর্যাপ্ত ফ্যানের অভাব, যাত্রীদের জন্য নেই পর্যাপ্ত বগি। অথচ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ট্রেনের উন্নয়নের জন্য ডেমু ট্রেন সংযুক্ত করেন। সেই ট্রেন একে একে বিকল হয়ে যাত্রীসেবায় গলার কাটা হয়ে দাঁড়ায়।
চলতি বছরের ২৮ জুলাই সকাল ৮টায় গেন্ডারিয়ায় লাইনচ্যুত হয়ে পরে ট্রেন। এসময় কোন যাত্রী হতাহত না হলেও দীর্ঘসময় অচল হয়ে পরে ট্রেন চলাচল। ১৫ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়ায় প্রায় সাড়ে ৩ ঘন্টা বিকল হয়ে বন্ধ করে রাখে নারায়ণগঞ্জের সাথে ঢাকা-পাগলা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়কের। একই ভাবে ১২ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জের ১ নং রেলগেইটের সামনে ট্রেন বিকল হয়ে শহরের যান চলাচল স্থবীর করে দেয়। সবশেষ ২৭ অক্টোবর দুপুর ২টায় পাগলা ওয়াসা এলাকায় বিকল হয়ে পরে ডেমু ট্রেন। দুর্ঘটনা কবলিত স্থান থেকে কাছের স্টেশন ও বেশ দূরে হওয়ায় ট্রেন উদ্ধার ও চলাচল স্বাভাবিক করতে প্রায় ৬ ঘন্টা সময় লাগে। কার্যত পুরো দিনব্যাপীই বন্ধ থাকে নারায়ণগঞ্জের সাথে ঢাকার রেল যোগাযোগ।
এ পথে নিয়মিত চলাচলরত যাত্রীরা বলছেন, রেলের এমন দুরবস্থার জন্য নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় প্রশাসন ও রেল কতৃপক্ষের উদাসীনতা দায়ী। অথচ ঢাকার সাথে কিশোরগঞ্জের সাথে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপুল উন্নতি সাধন হয়েছে শুধুমাত্র রাষ্ট্রপতির ইচ্ছা ও রেল প্রশাসনের কঠোর নজরদারীর কারনে। আর নারায়ণগঞ্জে রেল নিয়ে প্রশাসনের মাথাব্যাথা না থাকায় যাত্রী ভোগান্তি দিনে দিনে বাড়ছে।
পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রেলের উন্নতি না করতে দীর্ঘদিন যাবত বাস মালিকদের সাথে কিছু অসাধু কর্মকর্তারা চুক্তি করে থাকে। বিশেষ মাসোয়ারা বা এককালীন উৎকোচের বিনিয়মে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় ও ট্রেনে যাত্রীদের ভোগান্তির ব্যবস্থা করে রাখেন। আর এতে করে দিনে দিনে ট্রেন বিমুখ হয়ে যাত্রীরা বাধ্য হয়ে ছুটেন বাসে। গত কয়েকবছরে তা একেবারেই পরিষ্কার হয়েছে। ট্রেনের বিপুল পরিমান যাত্রী বাসে যুক্ত হয়েছে। আর বাসের সংখ্যা ও কোম্পানিও বেড়েছে একাধিক।
তবে রেলমন্ত্রীর নুরুল ইসলাম সুজনের নতুন আশ্বাস ও ডাবল রেল লাইনের পরিকল্পনা বাস্তবে কতটা ফলপ্রসূ হবে সেটি এখন দেখার বিষয়। যাত্রীরা বলছেন নতুন রেল লাইনে পুরাতন জরাজীর্ন ট্রেন আর দুর্নীতিগ্রস্থ পরিচালক দিয়ে ট্রেন পরিচালনা করলে ডুয়েল লাইনেও খুব একটা সুবিধা পাবে না যাত্রীরা। তার চেয়ে শিডিউল বিপর্যয় রোধ ও যাত্রী সেবার মান বৃদ্ধি করলে রেল পেতে পারে তার হারানো গৌরব ও যাত্রীদের ভরসা।