আজ মঙ্গলবার, ১৯শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৪ঠা মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

নাসিম ওসমানের শূন্যতা পূরনে ব্যর্থ সেলিম ওসমান!

সংবাদচর্চা রিপোর্ট:
বড় ভাই প্রয়াত সাংসদ একেএম নাসিম ওসমানের মৃত্যুর পর নারায়ণগঞ্জ জাতীয় পার্টীর হাল ধরতে নির্বাচন করেছিলেন ছোটভাই বর্তমান নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য ব্যবসায়ী নেতা একেএম সেলিম ওসমান। কিন্তু ৪বারের প্রয়াত সাংসদ নাসিম ওসমানের শূন্যস্থান পূরনে ব্যর্থ হয়েছেন জাতীয় পার্টীর এই বর্তমান সাংসদ একেএম সেলিম ওসমান, এমনটাই দাবী করেছেন জাতীয় পার্টির তৃনমূল নেতাকর্মীরা।

ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, সদর ও বন্দর নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন ঘঠিত। ১৯৮৬, ১৯৮৮, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে এই আসন থেকে নির্বাচিত সাংসদ ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম নাসিম ওসমান মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত প্রায় তিন দশকেরও বেশি সময় নারায়ণগঞ্জে জাতীয় পার্টির হাল ধরে ছিলেন। কাগজে-কলমে জেলা ও শহর জাতীয় পার্টির কমিটি থাকলেও নেপথ্যে দলটির প্রধান শক্তি ছিলেন তিনিই। নেতাকর্মীদের নিজের সন্তানের মতোই আগলে রেখেছিলেন এতো বছর। নেতাকর্মীদের মাথার উপর ছিলো একটি ছাদ, বসার জায়গা। কিন্তু ৩০ এপ্রিল ২০১৪ সালে তার মৃত্যুর পরই শুরু হয় নেতাকর্মীদের করুন দশা। শুধু তাই নয়, অস্থিত্ব সংকটে পরে যান নারায়ণগঞ্জ জাতীয় পার্টি।

নেতাকর্মীদের অনেক আশার আলো দেখিয়ে ২০১৪ সালের ২৬ জুন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে উপ-নির্বাচনে লাঙল প্রতীকে সাংসদ নির্বাচিত হন সেলিম ওসমান। কিন্তু এই দীর্ঘ ৫ বছর সময়ে তিনি শহরে নিজ আসনে জাতীয় পার্টির কার্যালয়টি সক্রিয় করতে পারেননি। এমনকি নতুন কোন কার্যালয়ও প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। এ নিয়ে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। কেউ কেউ বলছেন, এই আসনের এমপি নিজ দলীয় হওয়া সত্ত্বেও শহরে জাতীয় পার্টির কোন কার্যালয় নেই। পূর্বের যেই কার্যালয়টি ছিল সেটিও সক্রিয় করতে ব্যর্থ হয়েছেন সেলিম ওসমান। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর জেলা জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে বাতি দেয়ার লোকও ছিল না। এরপর ২০০৩ সালে নাসিম ওসমান গ্রেপ্তার হবার পর তাঁর মুক্তির দাবিতে বিশাল এক বিক্ষোভ মিছিল করে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা। পরবর্তীতে শহরের জাতীয় পার্টির অফিসটি দখল হয়ে যায়। সেখানে জাতীয় পার্টির নাম মুছে দিয়ে জিয়া পরিষদের নাম লিখে দেয়া হয়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে নারায়ণগঞ্জের রাজপথে প্রকাশ্যে না থাকলেও পরোক্ষভাবে সাংগঠনিক কাজ চালিয়ে যায় জাতীয় পার্টি। ৫ বছর পর ২০০৬ সালে ফের মাঠে সক্রিয় হন নাসিম ওসমান। ২০০৮ সালে প্রায় ৫০ হাজার ভোটের ব্যবধানে বিএনপির প্রার্থীকে পরাজিত করে তিনি এমপি নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ফের নির্বাচিত হন নাসিম ওসমান। এই সময়গুলোতে নারায়ণগঞ্জে জাতীয় পার্টির রাজনীতি ছিল খুব সরব। কার্যালয়ে নিয়মিত সাংগঠনিক বৈঠকসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হতো। কার্যালয়ে প্রাণ ছিল। রোজ শতাধিক নেতাকর্মীর আনাগোনা ছিল। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর থেকেই কার্যালয়ে তালা পড়ে। এরপর আবার জাতীয় পার্টির এমপি নির্বাচিত হলেও কার্যালয়টি আর সক্রিয় হয়ে ওঠেনি।

নিজ নির্বাচনী আসনে ব্যাপক উন্নয়ন করেও বারংবার সমলোচিত, ব্যর্থই হয়েছেন তিনি। নিজের আসনে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠাসহ ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। বন্দরবাসীদের নদী পারাপারের ভোগান্তি নিরসনে দিয়েছেন বেশ কয়েকটি ফেরি। কিন্তু নিজের দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে কখনই এক ছাদের নিচে বসতে পারেন নি। নাসিম ওসমানের মৃত্যুর পূর্বে শহরের দলীয় কার্যালয়টি ছিল সক্রিয়। রোজ শত শত জাতীয় পাটির নেতাকর্মীদের আনাগোনা থাকলেও সেলিম ওসমানের আমলে সেটা হয়েছে পরিত্যাক্ত।

কোন আলাপ আলোচনা করার জন্য বসার মতো কোন জায়গা নেই জাপা নেতাকর্মীদের। সাধারণ কর্মীদের অভিমত, নাসিম ওসমানের অবর্তমানে এই দলটিকে পরিচালনা করার মতো বলিষ্ঠ কোনো নেতৃত্ব এখনও তৈরি হয়নি এখানে। এই কারণেই এখন পর্যন্ত শহরে জাতীয় পার্টির কোন কার্যালয় নেই।

তৃনমূল জাতীয় পার্টির অনেক নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সেলিম ওসমান এমপি হতে পারলেও রাজনীতিবিদ হতে পারে নাই। কর্মীদের মনের ভাব যে বুঝতে না পারে সে কখনই নেতা হতে পারে না। সেলিম ওসমানের ছোট ভাই নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংদ একেএম শামীম ওসমান আওয়ামীলীগের সংসদ সদস্য। কিছুদিন পর পর দলীয় নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে বিশাল সভা সমাবেশ ডাকেন। তার ডাকে সাড়া দিয়ে নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে রাস্তাঘাট বন্ধ হবার উপক্রম হয়ে যায়। কিন্তু তারই বড়ভাই জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত সাংসদ সেলিম ওসমান এখনো পর্যন্ত একটি বিশাল সমাবেশ করতে পারে নাই।