আজ বুধবার, ২৪শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

নাসিকের ১৫ কাউন্সিলর মাদকের সাথে যুক্ত !

সংবাদচর্চা রিপোর্ট
১ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের (নাসিক) ২৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইফউদ্দিন আহমেদ দুলাল প্রধান চারজন সহযোগী নিয়ে ৫০ বোতল ফেনসিডিলসহ গ্রেপ্তার হয় জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের হাতে। এর আগে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আরিফুল হক হাসানকে ৪৮ ক্যান বিয়ার ও বোতল বিদেশী মদসহ গ্রেপ্তার করেছিলো র‌্যাব-১১’র একটি টিম। এ নিয়ে সচেতন মহলে প্রশ্ন উঠেছে, জনপ্রতিনিধিরা যদি মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকে তাহলে মাদক নির্মুল করবে কারা। সূত্র মতে, নাসিকের অন্তত ১৫ জন কাউন্সিলর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মাদকের সাথে জড়িত আছে।

কাউন্সিলর দুলাল প্রধান মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদেও আছেন। আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে তিনি শামীম ওসমানের অনুগত হিসেবে পরিচিত। মাদকসহ গ্রেপ্তারের পর তাকে ছাড়াতে রাতভর তদবির চলে বলে জানা গেছে। ডিবি পুলিদের দাবি, বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) সন্ধ্যায় শহরের নবীগঞ্জ খেয়াঘাট এলাকা থেকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি টিম নাসিক কাউন্সিলর দুলাল প্রধান ও ৪ সহযোগীকে আটক করে। সহযোগীরা হলো কামাল হাসান (৪৭), মনির হোসেন মনু (৫০), তানভীর আহম্মেদ সোহেল(৪১) এবং মো. মজিবর রহমান (৫২)। এরা প্রত্যেকেই দুলাল প্রধানের সহযোগি মাদক ব্যবসায়ী বলে জানিয়েছে পুলিশ। আটকের সময়ে তাদের কাছ থেকে ৫০ বোতর ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আটককৃতদের রিমান্ড চেয়েছিলো পুলিশ। তবে সোমবার আদালত থেকে জামিন পেয়ে কারাগার থেকে বের হয়েছে দুলাল প্রধান ও তার সহযোগীরা। এই দুলাল প্রধানের বিরুদ্ধে এর আগে জমি দখলের অভিযোগ উঠেছিলো। ভুক্তভোগী ৬৫ বছর বয়সী ফরিদা বেগম গত ২৫ এপ্রিল মানসিক প্রতিবন্ধী ছোট ছেলে মোস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে দুলালের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেন।

২০১৬ সালের ২৮ এপ্রিল বিকেলে আরিফুল হক হাসান, সহযোগি সুমন হোসেন ও আক্তার হোসেনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব ১১। ওই দিন বিকেল সাড়ে ৪টায় আদমজী ইপিজেডের সামনে একটি মাইক্রোবাস থেকে তাদের গ্রেপ্তারের সময়ে র‌্যাব সদস্যরা ৪৮ ক্যান বিয়ার ও বিদেশী মদ উদ্ধার করে। গ্রেফতারকৃত কাউন্সিলর আরিফুল হক হাছান জাতীয় শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি আবদুল মতিন মাস্টারের ছেলে। চাঞ্চল্যকর সাত খুনের মাস্টার মাইন্ড নূর হোসেনের নিকটজন সে। নূর হোসেনই তাকে শিমরাইল পিকআপ ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি করেছিলেন। এছাড়াও হাসানের নামে একটি বাইশ বোর রাইফেল, এবং পিস্তল এর লাইসেন্স করে দিয়েছিলো নূর হোসেন। সেভেন মার্ডারের পর প্রশাসন অস্ত্রগুলোর লাইসেন্স বাতিল করলে তার বাবা আব্দুল মতিন মাষ্টার সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় অস্ত্রগুলো জমা দেয়।

এই দুইজন কাউন্সিলরের মাদকসহ গ্রেপ্তারের পর নানা মহলে নানা সমালোচনা হয়েছে। কেউ বলেছে, জনপ্রতিনিধি যদি মাদক ব্যবসা করে তবে মাদক রুখবে কে। কারও কারও মন্তব্য ছিলো, প্রকাশ্যে মাদকের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে নিজেরাই যদি মাদক ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত হয় তবে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে। এদিকে বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে ও বিভিন্নজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নাসিকের ২৭ জন পুরুষ কাউন্সিলরের মধ্যে অন্তত ১৫ জন মাদকের সাথে জড়িত। এই ১৫ জন মাদক সেবন করে। বেশীর ভাগই ফেনসিডিল খায়। আবার কেউ কেউ ফেনসিডিলের পাশাপাশি গাঁজা, ইয়াবাও খায়। একজন নিয়মিত বাংলা মদ খায় বলে জানা গেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জের ৯ কাউন্সিলরের মধ্যে ৪ জন মাদক সেবন করে। তারা মাদক কারবারীদের সাথে উঠবস করে ও শেল্টার দেয়। এর মধ্যে হাসান মাদকসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলো। এ এলাকার সাবেক আলোচিত এক নারী কাউন্সিলর ইয়াবা সেবন করে।

নারায়ণগঞ্জ সদরের ৯ কাউন্সিলরের মধ্যে ৭ জন মাদকসেবী বলে জানা গেছে। এর মধ্যে দুইজন বাংলা মদ পান করে। আর ৫ জন ফেনসিডিল সেবন করে। কেউ কেউ ফেনসিডিলের অভাবে অথবা বাড়তি ফিলিংসের জন্য ফেনসিডিলের সাথে গাঁজাও সেবন করে।

বন্দরে ৪ থেকে ৫ জন মাদকের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন। তারা নিয়মিত ফেনসিডিল সেবন করে। কেউ কেউ কাউন্সিলর হওয়ার আগে থেকে মাদক নেয় বলে জানা গেছে। মাদক সেবনের সুবিধার্থে তারা এলাকার মাদক ব্যবসায়ীদের শেল্টার দেয়। কোন কোন কাউন্সিলর নিজেও মাদক ব্যবসায় বিনিয়োগ করে। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার কাউন্সিলর দুলাল প্রধান ফেনসিডিলসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলো ডিবি পুলিশের হাতে।

২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর নগর সমন্বয় উন্নয়ন কমিটির সিডিসিসি’র সভায় নাসিক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছিলেন, কোন এলাকায় অনুষ্ঠানে সেখানকার মানুষ মাদকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন। এমনকি রাস্তার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও মাদক প্রসঙ্গ উঠে। চারদিকে মাদকে ছেয়ে গেছে। এমনকি আমাদের কাউন্সিলরদের ছত্রচ্ছায়ায় মাদক বিক্রি হয়।

মেয়র আইভীর এ বক্তব্য ও দুই কাউন্সিলরের মাদকসহ গ্রেপ্তারের খবরে মানুষ হতাশা প্রকাশ করেছে। তাদের মধ্যে এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। সেখান থেকে প্রশ্ন উঠেছে, এই যদিই হয় অবস্থা তবে মাদক রুখবে কে।

সর্বশেষ সংবাদ