আজ শনিবার, ২০শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৪ঠা জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

নারায়ণগঞ্জে জাপার মত নির্বাসিত বিএনপি!

সংবাদচর্চা রিপোর্ট:
দলীয় কার্যালয়ের অভাবে নারায়ণগঞ্জে জাতীয় পার্টির মতো নির্বাসিত হতে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি-এমনটাই অভিমত দলটির তৃণমূল নেতাকর্মীদের। ডিআইটির দলীয় কার্যালয় নিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সাথে মামলায় হেরে যাওয়ায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি’র কার্যালয়। কখনো সেক্রেটারীর নিজস্ব অফিস কখনো কোন কনভেনশন হল তাদের আলাচনার স্থান। তাই নির্বাসিত হবার আশংকার কথা জানিয়েছেন তৃনমূল বিএনপি।

ঘটনাসূত্রে প্রকাশ, জাতীয় পার্টি থেকে চারবারের নির্বাচিত এমপি প্রয়াত নাসিম ওসমানের নেতৃত্বে সাংগঠনিকভাবে অত্যান্ত শক্তিশালী ছিলো নারায়ণগঞ্জ জাতীয় পার্টি। বিভিন্ন জাতীয় ও দলীয় কর্মসূচিতে রাজধানী ঢাকার সাথে পাল্লা দিয়েছে তারা। ফলে দেশব্যাপী সুনাম ছিলো তাদের। আর তাদের সাফল্যের সুতিকাগার ছিলো বিবি রোডস্থ জাতীয় পার্টির কার্যালয়টি। এখানে বসেই নেতাকর্মীরা পেয়েছেন বিভিন্ন দিক নির্দেশনা আর আগামী দিনে পথচলার পাথেয়।
কিন্তু ২০১৪ সালে ৩০ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ জাতীয় পার্টির প্রাণ পুরুষ একেএম নাসিম ওসমান আকষ্মিক মৃত্যুবরণ করলে অভিভাবক শূণ্য হয়ে পরে নারায়ণগঞ্জ জাতীয় পার্টি।

প্রয়াত নাসিম ওসমানের মতো পিতৃ ¯েœহে নেতাকর্মীদের আগলে রাখার মতো কেউ এগিয়ে আসেননি। প্রয়াত নাসিম ওসমানের শূণ্য আসনে উপ নির্বাচনে লাঙ্গল প্রতীকে সাংসদ নির্বাচিত হন তারই অনূজ একেএম সেলিম ওসমান। জাতীয় পার্টির ব্যানারে এমপি হলেও দল ও দলের নেতাকর্মীদের সংগঠিত করতে কোন উদ্যোগই তিনি গ্রহণ করেনি। এমনকি নারায়ণগঞ্জ জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের একমাত্র আশ্রয়স্থল দলীয় কার্যালয়টিও বন্ধ করে দেয়া হয়। বারংবার নতুন কার্যালয় স্থাপনের কথা বললেও ব্যর্থ হয়েছেন সেলিম ওসমান। ফলে সাংগঠনিক দক্ষতায় ঢাকার সাথে পাল্লা দেওয়া নারায়ণগঞ্জ জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের যে সুতায় গেথে রেখেছিলেন প্রয়াত নাসিম ওসমান, সে সুতা ছিড়ে দ্বিগবিদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায় তারা। যার প্রমাণ প্রায় পাচঁ বছর হতে চললো নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টিসহ কোন অঙ্গ সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কোন কমিটি গঠন হয়নি, আহবায়ক কমিটি দিয়ে কোন রকমে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা হয়েছে। সারা বছরে কোন কর্মসূচি পালনেও দেখা মিলে না তাদের। আর এসব কিছুর জন্য দলীয় কার্যালয় না থাকাকে দায়ী করেন নারায়ণগঞ্জ জাতীয় পার্টির মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। তাদের মতে, আগের মতো দলীয় কার্যালয়টা থাকলে, সেখানে সকল নেতাকর্মীদের সাথে দেখা সাক্ষাত হতো। সবার সাথে আলাপ আলোচনা করে সাংগঠনিক কর্মকান্ড এগিয়ে নেয়া যেতো, কিন্তু কার্যালয় না থাকায় এখন আমরা নির্বাসিত হয়ে গেছি।

নারায়ণগঞ্জ জাতীয় পার্টির মতো নারায়ণগঞ্জ বিএনপিও একই পরিস্থিতির মুখোমুখি। প্রায় চৌদ্দ বছর হতে চললো দলটি ক্ষতার বাইরে। এই দীর্ঘ সময়ে সরকারী দলের হামলা মামলার শিকার নেতাকর্মীদের প্রতিবাদ প্রতিরোধের একমাত্র ঠিকানা ছিলো ডিআইটির দলীয় কার্যালয়টি। জেলা ও মহানগর বিএনপিসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা নিয়মিত এখানে আসতেন এবং নিজেদের করণীয় ঠিক করতেন। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের জায়গায় লিজ নেওয়া দলীয় কার্যালযটি ভেঙ্গে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভবনটির মালিক নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন। পুরানো ভবনটি ভেঙ্গে নতুন করে ৯ তলা ভবন নির্মাণে করবে তারা। নাসিকের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি।

কিন্তু মামলায় হেরে যায় তারা, আর কার্যালয় হয়ে যায় হাত ছাড়া।
কার্যালয় না থাকায় হতাশায় ভোগচ্ছে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি’র নেতাকর্মীদের মাঝে। দীর্ঘদিন যাবত সরকার বিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্র বিন্দু এই কার্যালয় না থাকলে নেতাকর্মীরা সংগঠিত হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে এবং দল সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পরছে বলে দাবী তাদের।

তাই নারায়ণগঞ্জ জাতীয় পার্টির মতো নারায়ণগঞ্জ বিএনপিও মুখ থুবরে পরে নির্বাসিত হওয়ার উপক্রম হয়েছে বলে আশংকা তাদের।