সংবাদচর্চা রিপোর্ট:
ঢাকার পাশ্ববর্তী জেলা ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি জেলা। এই জেলা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অন্যতম একটি ঘাটি হিসেবে বিবেচিত। অবশ্য বিএনপির ক্ষেত্রে সেই প্রেক্ষাপটটি এখন আর তেমন বিবেচ্য বিষয় নয়।
জান যায়, জেলায় বিএনপির রাজনীতির ইতিহাসে মমিন উল্লাহ ডেভিড ও জাকির খাঁনের সময় কালে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম ছিলো চোখে পরার মতো। তবে সেই পটভূমি পরিবর্তন ঠিক তখন থেকেই শুরু হয় যখন নিজ দলের একটি সিদ্ধান্তের কারনে র্যাবের ক্রসফাঁয়ের নিহত হতে হয় মমিন উল্লাহ ডেভিড এবং ক্ষমতার পালাবদলের ঢেউ সামলে উঠতে না পেরে দেশান্তরিত হওয়া জাকির খাঁনের দেশ ত্যাগের মধ্য দিয়ে। বর্তমানে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল হিসেবে এই জেলার বিএনপির নেতৃবৃন্দরা গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করতে পুরোপুরি ব্যর্থ এমনটাই ধারনা বিশ্লেষক মহলের। তবে বিএনপি ব্যর্থ হলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ বিএনপির সেই দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করে যাচ্ছে বলে মনে করেন নগরীর বোদ্ধামহল।
দীর্ঘ দিন ধরে বর্তমান নারায়ণগঞ্জে গণতান্ত্রিক কোন অধিকার আদায়ের লক্ষে জেলার প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলগুলো যথাযথ ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ। বিএনপি ও জাতীয় পার্টি সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল ব্যর্থ হলেও জেলার বাম দলগুলো সহ বিভিন্ন সংগঠন যথার্থ গণতন্ত্র চর্চা করে যাচ্ছে বলে একাধিক মানুষের অভিমত। বিগত সময় ও বর্তমানের অধিকাংশ সময়ই নারায়ণগঞ্জের সিপিবি, বাসদ, গণসংহতি, নাগরিক কমিটি সহ সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকি মঞ্চ যথাযথ গণতন্ত্র চর্চা করছে এবং মানুষের বিভিন্ন দাবি আদায়ের লক্ষে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করে যাচ্ছে বলে একাধিক গণমাধ্যম সুত্রে পাওয়া যায়। বিএনপি ব্যতিত যে সকল সংগঠন গুলো আন্দোলন করছে তারা আওয়ামী লীগের মতো রাজপথে কাপন ধরাতে না পারলেও সঠিক ভূমি পালন করছে এটা অনেক বড় বিষয় বলে মনে করছে নগরীর সচেতন নাগরিক।
একটি সূত্রে জানা যায়, বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ যে সময়গুলোতে ক্ষমতার বাহিরে ছিলো সেই সময়গুলোতে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দরা সাংগঠনিক ভাবে চাঙ্গা ছিলো। দীর্ঘ সময় ধরে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার সেই প্রেক্ষপটের পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে। বিশ্লেষকদের মতে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার ফলে এই জেলার আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ এখন নিজেরাই নিজেদের প্রতিপক্ষ বনে গেছে। তাঁদের মতে প্রভাব আর ক্ষমতার লালসা থেকেই নিজেদের মধ্যে কোন্দলে জড়িয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ এমনটই ধারনা বিশ্লেষকদের।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন সহ জেলার অন্যান্য জনপ্রতিনিধিদের সাথে কথা বললে তারা জানায়, নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে অনেক কিছুরই পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। যখন দল ক্ষমতার বাহিরে ছিলো এবং সেই সময়গুলোতে যে সকল নেতা-কর্মীরা রাজপথের আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে তারা আজ অবহেলিত। ওই সময় যারা হামলা-মামলার শিকার হয়ে কারাবাস করেছে আজ তাদের অবদান নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে যারা দল পরিবর্তন করে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছে তারাই অধিক মূল্যায়িত হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী ও প্রবীন নেতা দৈনিক সংবাদচর্চার সাথে একান্ত আলাপচারিতায় জানান, এখন আর রাজনীতি আগের মতো নেই। যারা দালালি করছে এবং চাটুকারীতা করছেন আজ তারাই ভালো রয়েছে। এক সময় দেখা যাবে এ সকল চাটুকাররা ক্ষমতার পালাবদলের পরপরই দল পরিবর্তন করবে। তিনি আরো জানান, জননেত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ট নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। একটা সময় আমরা বিদ্যুৎ পেতাম না, যেতে পারতাম না নির্ধারিত সময়ে নিজ গন্তব্যে। বর্তমান সরকারের সময়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সেই সমস্যাগুলো থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি। যারা দল পরিবর্তন করে আওয়ামী লীগ করছে তারা সরকারের এ সকল উন্নয়নমুলক কর্মকান্ডের প্রচার করছে না। তারা শুধু নিজেদের আখের গোচাচ্ছে।