স্টাফ রিপোর্টার : ভারতের কলকাতায় অলিগলির দোকান ও সুপারশপে খুচরায় প্রতি কেজি চিনির দাম ৪৫ থেকে ৫৫ রুপি, বাংলাদেশি টাকায় যা ৬৩ থেকে প্রায় ৭৭ টাকা। আর দেশের বাজারে চিনি বিক্রি হচ্ছে ১২৫-১৩০ টাকা কেজি। প্রতি কেজি চিনিতে দুই দেশে দামের ব্যবধান ৪৮ থেকে ৬৭ টাকা। দামের এই ব্যবধানের কারণে ভারত থেকে সীমান্ত দিয়ে চিনি চোরাচালান বেড়ে গেছে। নারায়ণগঞ্জের বাজারেও চোরাই পথে আসছে ভারতীয় এসব চিনি। ইতোমধ্যে জেলার বেশ কয়েকটি স্থান থেকে শত শত বস্তা ভারতীয় চিনি উদ্ধার হয়েছে। যা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে চিনি চোরাচালান বেড়ে যাওয়ার প্রভাব দুটি। প্রথমত সরকার সরাসরি বড় অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে। দ্বিতীয়ত দেশের চিনিশিল্প অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে। এ কারণে চিনি আমদানি কমিয়ে দিয়েছে দেশের পরিশোধন কারখানাগুলো। আমদানির তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত সাত বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম চিনি আমদানির রেকর্ড হয়েছে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল পর্যন্ত)।
সূত্র বলছে, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলা রয়েছে ৩০টি। এই সীমান্তের বড় অংশ দিয়েই চিনি আসছে দেশে। বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের হিসাবে, সিলেট বিভাগ, ফেনী জেলা, কিশোরগঞ্জ জেলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সাতক্ষীরা, বেনাপোল-এসব সীমান্ত দিয়ে চিনি চোরাচালান বেশি হচ্ছে। চোরাই পথে আসা চিনি দেশীয় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নামে মোড়কজাত করে বিক্রি করা হচ্ছে। গত ৩০ এপ্রিল সোনারগাঁ কাঁচপুর ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে একটি কভার্ডভ্যান থেকে ৩৮০ বস্তা অবৈধ ভারতীয় চিনিসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। এছাড়াও গেল ৪ মে রূপগঞ্জ উপজেলার নয়ানগর এলাকায় দেওয়ান এন্টারপ্রাইজের গোডাউনে অভিযান চালিয়ে ৪৮০ বস্তা ভারতীয় চিনির বস্তা এবং ১৪৪ বস্তা ফ্রেস স্টিকার যুক্ত ইন্ডিয়ান চিনির বস্তাসহ মোট ৬২৪ বস্তা ইন্ডিয়ান চিনি জব্দ করেছে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। জব্দকৃত চিনির আনুমানিক বাজার মূল্য ৩৯ লাখ টাকা। অভিযানের সময় উপস্থিত ছিলেন র্যাব-১১ এর উপ-অধিনায়ক মেজর অনাবিল ইমাম এবং জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মো. আতিকুল ইসলাম।
এদিকে অতি মুনাফার আশায় নারায়ণগঞ্জে দেদারছে এসব ভারতীয় চিনি প্রবেশ করানো হচ্ছে বলে অভিযোগ বৈধ ব্যবসায়ীদের। তারা বলছেন, চোরাচালিনির কারণে তাদের ব্যবসাতেও ধস নেমেছে। এসব চোরচালিনি বন্ধ করতে প্রশাসনের আরও বেশি তৎপরতা প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।
সূত্র জানায়, ৩০ এপ্রিল ভারতীয় চিনি উদ্ধারের ঘটনায় জেলা গোয়েন্দা শাখার সহকারী পরিদর্শক (এসআই) এ এইচ এম কামরুজ্জামান বাদী হয়ে ৩ জনের নাম উল্লেখ করে সোনারগাঁ থানায় একটি মামলা করেন। তারা হলেন, কভার্ড ভ্যান ড্রাইভার ও সিলেট জেলার দক্ষিণ সুরমা সিলামের নজরুল ইসলামের ছেলে মো. ইসলাম উদ্দিন (২৬), হেলপার ও একই এলাকার দুলু মিয়ার ছেলে মো. জুনায়েদ মিয়া (৩০) এবং তাদের সহযোগি পলাতক মো. জিয়া (৪০)।
মামলা এজহার সূত্রে জানা যায়, গত ২৯ এপ্রিল জেলা গোয়েন্দা শাখা গোপন সূত্রে খবর পায় কাঁচপুর সাকিন কাঁচপুর ডাইন বাইতুল আমান জামে মসজিদের সামনে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে কিছু লোক চোরাইভাবে ভারতীয় চিনি গাড়ি করে বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে অবস্থান করছে। ওই তথ্যের ভিত্তিতে রাত ১২টা ১০ মিনিটে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে হলুদ ও নীল রঙের টাটা কোম্পানির একটি কভার্ডভ্যান পালানোর চেষ্টা করলে ডিবি পুলিশ ওই ভ্যানসহ দুইজনকে আটক করে। এ সময় ওই কাভার্ড ভ্যান ও ভ্যানের ভিতরে থাকা ৩৮০ বস্তায় ১৯ হাজার কেজি ভারতীয় চিনি জব্দ করা হয়। যার বাজার মূল্য ২২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। জব্দকৃত ভারতীয় চিনির প্রকৃত কাগজপত্র দেখাতে না পারায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছে, জব্দকৃত ভারতীয় চিনির প্রকৃত মালিক জিয়া (৪০) নামে তাদের এক সহযোগি। তারা জিয়া’র সহায়তায় সুনামগঞ্জ জেলার ভারত সীমান্তবর্তী এলাকা হতে ট্রাক করে ভারতীয় চিনি চোরাইভাবে নিয়ে আসে। এবং ঘটনাস্থলে বিক্রির জন্য অপেক্ষা করছিল।
এ বিষয়ে জানতে সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম কামরুজ্জামানের মুঠফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।