আজ শনিবার, ২৬শে শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই আগস্ট, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

নারায়ণগঞ্জে বাড়ছে থাইরয়েড রোগী

স্টাফ রিপোর্টার :

মানবদেহের অনেকগুলো গ্রন্থির মধ্যে একটি থাইরয়েড। যা গলার সামনের দিকে অবস্থিত এবং শরীরে থাইরয়েড হরমোনের প্রধান উৎস। এই হরমোন শরীরের প্রতিটি কোষ, টিস্যু ও অঙ্গের কার্যকারিতায় প্রভাব ফেলে; বিপাকের হার, হৃৎপিন্ডের কর্মক্ষমতা, হজমের প্রক্রিয়া, পেশি ও হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। শরীরে এই থাইরয়েড হরমোনের আবার একটা নির্দিষ্ট মাত্রা আছে। নির্দিষ্ট মাত্রার চাইতে কম বা বেশি হরমোন উৎপাদিত হলেই শরীরে এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। যার ফলে হরমোনের ঘাটতি বা হাইপো-থাইরয়ডিজম, হরমোনের আধিক্য বা হাইপার-থাইরয়ডিজম, গর্ভধারণে জটিলতা, প্রদাহ বা থাইরয়ডাইটিস, গলগন্ড ও ক্যানসারও হতে পারে।
সম্প্রতি সময়ে নারায়ণগঞ্জে থাইরয়েড রোগীর সংখ্যা অধিক পরিমাণে লক্ষ্য করছেন চিকিৎসকরা। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো তথ্য নেই জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে। তবে অ্যাসোসিয়েশন অব ক্লিনিক্যাল এন্ড্রোক্রাইনোলজি অ্যান্ড ডায়াবেটোলজিস্ট অব বাংলাদেশ (এসিইডিবি) তথ্যমতে, নারায়ণগঞ্জসহ সারাদেশে সাড়ে ৩ কোটি মানুষ থাইরয়েডের নানা সমস্যায় ভুগছেন। অথচ তাদের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ জানেন না যে, তারা এই সমস্যায় ভুগছেন। অজ্ঞতা ও অসচেতনার কারণে চিকিৎসা থেকে বিঞ্চত হচ্ছে রোগীরা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের তথ্যমতে, থাইরয়েড মূলত দুই ধরণের। শরীরে থাইরয়েড হরমোন কম উৎপন্ন হলে বলা হয় হাইপোথাইরয়েডিজম এবং বেশি উৎপন্ন হলে বলা হয় হাইপারথাইরয়েডিজম। রোগটি কতদূর এগিয়েছে তার ওপর নির্ভর করে শরীরে নানা রকম উপসর্গ বা লক্ষণ দেখা যায়। লক্ষণগুলো হলো, ক্লান্তি ক্লান্তি ভাব, অল্পতেই শীত শীত লাগবে, কোষ্ঠকাঠিন্য, ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া, হঠাৎ করে অস্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধি পাওয়া বা কমে যাওয়া, অনেক সময় মুখ ফুলে যেতে পারে, গলার স্বর বদলে যেতে পারে, পেশীর দুর্বলতা, পেশীতে ব্যথা, নারীদের ক্ষেত্রে মিন্সট্রোয়াল সাইকেল পরিবর্তন হয়ে যাওয়া, ডিপ্রেশন, চুল পড়ে যাওয়া বা চুল পাতলা হয়ে যাওয়া ও স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া।
থাইরয়েডের কারণ হিসেবে চিকিৎসকরা আয়োডিনের অভাব, শরীরে অন্যান্য গ্রন্থির ঠিক করে কাজ না করা, থাইরয়েড গ্রন্থির জন্মগত ত্রুটিকে চিহ্নিত করে থাকেন।
বাংলাদেশ এন্ড্রোক্রাইন সোসাইটির থাইরয়েড টাস্কফোর্সের মতে, বাংলাদেশে থাইরয়েডে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর থেকেও দ্বিগুণ। তবু এ বিষয়ে তেমন কোনো তথ্য নেই জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের আছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পরিসংখ্যানবিদ মো. আনোয়ার হোনের।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. মুশিউর রহমান বলেন, থাইরয়েড রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলা যাবে না। জেলায় কি পরিমাণ রোগী আছে সেটা আমাদের পক্ষে জানানো সম্ভব হয় না। কেনান থাইরয়েড সমস্যায় যারা ভুগছেন তারা বিভিন্ন চেম্বারে বা প্রাইভেট ক্লিনিকে গিয়ে ডাক্তার দেখান। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি লক্ষ্য করেছি, থাইরয়েডের রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আমি মনে করি, বংশগত, পরিবেশ দূষণ, ভেজাল খাদ্য ও অনিয়ন্ত্রিত গর্ভধারণের কারণে এমনটা হচ্ছে।
থাইরয়েড সমস্যার চিকিৎসা বিষয়ে তিনি বলেন, যেকোনো রোগ থেকে বাঁচতে চিকিৎসার বিকল্প নেই। চিকিৎসা পাশাপশি মেনে চলতে হবে কিছু নিয়ম-নীতি। কিন্তু থাইরয়েড রোগের চিকিৎসা নির্ভর করে থাকে রোগীর শরীরের অবস্থা এবং রোগের ধরনের ওপর। থাইরয়েড রোগের চিকিৎসার প্রধান বিষয় হলো চিকিৎসা, অস্ত্রোপচার, হরমোন ও বিকিরণ।
তিনি আরও বলেন, যদি থাইরয়েড রোগে কেউ আক্রান্ত হয় তাহলে তাকে সারাজীবন ওষুধ খেতে হয়। এমন একটা লম্বা সময় চিকিৎসা নিতে হয়, যা সত্যিই বিরক্তিকর ও কষ্টকর। তবে একটা স্বান্তনা এই যে, থাইরয়েডর চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত ওষধগুলোর মূল্য খুবই কম। সেইসঙ্গে ফুড সাপ্লিমেন্ট নেওয়া যায়।
থাইরয়েড প্রতিরোধে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ কাজ করছে জানিয়ে সিভিল সার্জন বলেন, মূলত আয়োডিনের অভাবে থাইরয়েডের সমস্যা দেখা দেয়। নারায়ণগঞ্জে যেহেতু অধিকাংশ লবণ কারখানাগুলো স্থাপিত, তাই আমরা লবণে আয়োডিনের মাত্রা নিশ্চিতে আমরা কাজ করছি। এ লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ সমন্বিতভাবে কারখানাগুলোকে তাদের উৎপাদিত লবণের নমুনা আমাদের পাঠাতে বলেছি। সে নমুনা আমরা ল্যাবে পরীক্ষা করে দেখবো এবং ল্যাব টেস্টের উপর নির্ভর করে আমরা কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো এবং পরামর্শ দেয়া হবে।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ