স্টাফ রিপোর্টার :
সময়ের ব্যবধানে নারায়ণগঞ্জে বৃদ্ধি পাচ্ছে গবাদি পশুর খামার। আয়তনের দিক থেকে ছোট্ট এই জেলায় ছোট বড় মিলিয়ে মোট খামারের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার হলেও নিবন্ধিত রয়েছে ৪ হাজার ৩শ’ ২৭টি। প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, এবছর নারায়ণগঞ্জে কোরবানীর পশুর চাহিদা ১ লাখ ৬৭ হাজার হলেও এর মধ্যে শুধু মাত্র নিবন্ধিত খামারেই রয়েছে ৭০ হাজারেরও বেশি কোরবানীর পশু। এক সময় এই-হাট ওই-হাট ঘুরে কোরবানির পশু ক্রয়ের বিকল্প না থাকলেও খামারিরা সেই ধারায় পরিবর্তন এনেছেন। গেল কয়েক বছর ধরেই হাটের ঝামেলা এড়াতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ খামারে গিয়ে গরু ক্রয়ের প্রতি আগ্রহী হতে শুরু করেছেন। অনলাইনেও হচ্ছে কোরবানীর পশু কেনা-বেচা। এবছরও কোরবানীকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জের গরুর খামারগুলোতে বেচা-বিক্রি শুরু হয়েছে। তবে, খামার থেকে কোরবানীর পশু ক্রয়ের ধারা চালু হওয়ায় চিন্তার ভাঁজ পড়েছে এই জেলার কোরবানির পশুর হাট ব্যবসায়ীদের (ইজারাদার) কপালে।
তারা বলছেন, কোরবানী ঈদকে কেন্দ্র করে মাত্র ৪ থেকে ৭দিনের জন্য পশুর হাট ইজারা নিতে সরকারকে নির্ধারিত অংকের রাজস্ব প্রদান করা হচ্ছে। তবে খামারিরা রাজস্ব প্রদান ছাড়াই পুরোদস্তর কোরবানীর পশু বিক্রি করে যাচ্ছেন। খামারিদের কারণে হাটে গরু বেচা-বিক্রিতে বিরুপ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা বিদ্যমান। ফলে হাট কর্তৃপক্ষ সরকারকে রাজস্ব দিয়ে লাভ-লোকসানের শঙ্কায় থাকলেও খামারিরা ব্যবসা করছেন নির্দিধায়। তারা পুরোদস্তর কোরবানীর পশু বেচা-বিক্রি করে লাভের মুখ দেখলেও সরকারকে কোনো রাজস্বই দিতে হচ্ছে না।
এই বিষয়ে ফতুল্লার একটি নিয়মিত কোরবানীর হাট কর্তৃপক্ষের একজন অংশিদার নাম প্রকাশে অনিচ্ছা পোষন করে বলেন, ‘প্রতিবছর হাট ইজারা নেয়ার ক্ষেত্রে নানা প্রতিযোগিতা ও প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে সরকারকে রাজস্ব প্রদানের মাধ্যমে হাট ইজারা নেয়া হয়। এরপর গরু বেচা-বিক্রির উপর নিজেদের লাভ লসের ভাগ্য নির্ভর করে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে, কোরবানী ঈদকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ সহ দেশের সব জায়গায় নামে বেনামে অসংখ্য গরুর খামার গড়ে উঠেছে। অনেক মানুষ খামারে গিয়ে কোরবানীর পশু ক্রয় করছে। এই খামারিরা কিন্তু সরকারকে কোনো রাজস্ব দিচ্ছে না বা দিতে হচ্ছে না। তারা একদিকে রাজস্ব প্রদান ছাড়াই যেমন কোরবানীর পশু বিক্রি করে যাচ্ছে, তেমনই তাদের খামারে বিক্রির কারণে আমরা যারা রাজস্ব দিয়ে হাটের ইজারা নিয়েছি, আমাদের হাটে কোরবানীর পশু বিক্রি কিছুটা হলেও কমেছে। খামারে যদি বিক্রি না হতো, তাহলে ক্রেতারা অবশ্যই কোনো না কোনো হাটে যেত। এতে হাটে বিক্রি বাড়ার পাশাপাশি ইজারাদারদের আয়ও বৃদ্ধি পেত। কিন্তু আমরা রাজস্ব দিয়েও এখন খামারিদের কারণে লাভ বের করতে শঙ্কায় থাকি।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জে প্রান্তিক কৃষক ছাড়াও বড় শিল্পপতিরা গরু, মহিষ ও ছাগলের খামার গড়ে তুলেছেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে বড় বড় গ্রুপ কোম্পানী কিংবা মিল ফ্যক্টরীর মালিকও গবাদি পশুর খামার গড়ে তুলেছেন। তারা কোরবানীর ঈদকেই মূল টার্গেটে রাখেন বলে জানা গেছে।
শঙ্কা প্রকাশ করে ফতুল্লার সাইনবোর্ড এলাকার নিয়মিত হাট ইজারাদার কর্তৃপক্ষের একজন বলেন, ‘যেভাবে খামার বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে, তাতে এক সময় কোরবানীর পশুর জন্য হাটের এই প্রচলন আদৌ থাকবে কিনা- তা নিয়ে শঙ্কা থেকেই যায়।’
জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. দেদারুল ইসলাম দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, ‘খামারিরা সারা বছরই গবাদি পশু লালন পালন এবং বিক্রি করে থাকে। কোরবানীর ঈদকে কেন্দ্র করে তারা যেই পশু বিক্রি করে থাকে, তাতে রাজস্ব আদায়ের কোনো বিধান নেই।’