নিজস্ব প্রতিবেদক: একাদশ সংসদ নির্বাচনে রেকর্ড সংখ্যক প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন। এরমধ্যে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীই রয়েছেন অন্তত ১৬৩ জন। নির্বাচনী আইন অনুযায়ী প্রদত্ত ভোটের আট ভাগের এক ভাগ না পেলে ওই প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। ইসি সংশ্নিষ্টরা বলছেন, দেশের নির্বাচনের ইতিহাসে এটা বিরল দৃষ্টান্ত।
এর আগে এত বেশি সংখ্যক প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্তের নজির নেই। এর আগে নবম সংসদে বিএনপির ১৪ জন প্রার্থী জামানত হারিয়েছিলেন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকেরও চার প্রার্থী জামানত হারান।
ইসি সূত্র জানিয়েছে, এবারের নির্বাচনে বরিশাল বিভাগের ২১টি আসনের মধ্যে একটিতেও বিএনপি প্রার্থীরা জামানত রক্ষা করতে পারেননি। তবে সিলেট বিভাগের ১৯ আসনের একটিতেও তাদের প্রার্থীরা জামানত হারাননি। অনেক আসনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট পেলেও জামানত রক্ষা হয়নি বিএনপি প্রার্থীদের।
ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপ-সচিব ফরহাদ হোসেন জানিয়েছেন, আইন অনুযায়ী একজন প্রার্থীকে যত ভোট কাস্ট হবে তার নূ্যনতম আট ভাগের এক ভাগ ভোট পেতে হবে। অন্যথায় তার জামানত বাজেয়াপ্ত হবে। এই বিধানটি রাখা হয়েছে প্রার্থীকে লজ্জা দেওয়ার জন্য। এটাকে জরিমানাও বলা যেতে পারে। এর অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য হচ্ছে জিততে না পারার কোনো সম্ভাবনা না থাকলে যাতে কেউ নির্বাচনে অংশ না নেন।
ইসি সূত্র জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন থেকে চূড়ান্ত ফল একত্রকরণ সম্ভব হয়নি। এবারের নির্বাচনে ৩৯টি রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ছিল এক হাজার ৮৬১ জন। তাদের মধ্যে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষিত ২৯৮ জনের বাইরে ১০ ভাগ প্রার্থীও জামানত রক্ষা করতে পারবেন না। বিশেষ করে বরিশাল ও খুলনা বিভাগের পরাজিত প্রার্থীদের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকজনের জামানত রক্ষা পাবে।
রোববারের ভোট শেষে গতকাল প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, এবারের নির্বাচনে গড়ে ৮০ ভাগ ভোট পড়েছে। এর আগে দেশের দশটি সংসদ নির্বাচনে ভোটের হার বিবেচনায় এটি সর্বোচ্চ দ্বিতীয়। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৮৭ দশমিক ১৩ শতাংশ। সর্বনিম্ন ২৬ দশমিক ৫ ভাগ ভোট পড়েছিল ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে। ওই নির্বাচন বর্জন করেছিল তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগসহ জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামী।
ইসি সূত্র জানায়, নবম সংসদের ভোটে ৩৮টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। ওই ভোটে এক হাজার ৫৬৭ প্রার্থীর মধ্যে ৯৪১ জন জামানত হারান। ওই নির্বাচনে ‘না’ ভোটের বিধান ছিল। সেবার ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ১৬৭ প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। এছাড়া আওয়ামী লীগের ৪ ও বিএনপির ১৪ প্রার্থী জামানত হারিয়েছিলেন। বিএনপি ও তাদের শরিকদের বর্জনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচনে ১৬৩ প্রার্থী জামানত হারান। যদিও ওই নির্বাচনে কেবল ১৪৭টি আসনে ভোট হয়, যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ৩৯০ জন।
এবার ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া জামানত হারানোদের মধ্যে রয়েছেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী নোয়াখালী-৫ আসনে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, কুমিল্লা-২ আসনে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নরসিংদী-৩ আসনে সাবেক মন্ত্রী ড. আবদুল মঈন খান, ফরিদপুর-৩ আসনে সাবেক মন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, ঢাকা-৩ আসনে সাবেক প্রতিমন্ত্রী গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চট্টগ্রাম-১০ আসনে সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান, রাজশাহী-৪ আসনে সাবেক এমপি আবু হেনা, সিরাজগঞ্জ-২ আসনে সাবেক এমপি রুমানা মাহমুদ, কুষ্টিয়া-৪ আসনে সাবেক এমপি সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী, যশোর-৫ আসনে সাবেক এমপি মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, পটুয়াখালী-১ আসনে সাবেক মন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী, ভোলা-৩ আসনে সাবেক মন্ত্রী মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম, ভোলা-৪ আসনে সাবেক এমপি নাজিম উদ্দিন আলম, বরিশাল-১ আসনে জহির উদ্দিন স্বপন, বরিশাল-৫ আসনে মজিবর রহমান সরোয়ার, ঝালকাঠি-১ আসনে সাবেক প্রতিমন্ত্রী ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, টাঙ্গাইল-৩ আসনে সাবেক প্রতিমন্ত্রী লুৎফর রহমান খান আজাদ, মুন্সীগঞ্জ-২ আসনে সাবেক প্রতিমন্ত্রী মিজানুর রহমান সিনহা, নরসিংদী-৪ আসনে সাবেক এমপি সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল, কুমিল্লা-৭ আসনে সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেদোয়ান আহমদ, কুমিল্লা-১০ আসনে সাবেক এমপি মনিরুল হক চৌধুরী, নোয়াখালী-১ আসনের সাবেক এমপি এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, ফেনী-২ আসনের সাবেক এমপি জয়নাল আবেদিন, নোয়াখালী-২ আসনে সাবেক এমপি ও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক, লক্ষ্মীপুর-২ আসনে সাবেক এমপি আবুল খায়ের ভূঁইয়া, লক্ষ্মীপুর-৩ আসনে সাবেক এমপি শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, চট্টগ্রাম-১৬ আসনে সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, দিনাজপুর-৩ সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, লালমনিরহাট-১ হাসান রাজীব প্রধান, রংপুর-১ মো. রহমতউল্লাহ, রংপুর-৬ সাইফুল ইসলাম, গাইবান্ধা-৪ ফারুক কবির আহমেদ, গাইবান্ধা-৫ ফারুক আলম সরকার, জয়পুরহাট-২ এ ই এম খলিলুর রহমান।