আজ শনিবার, ১৮ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১লা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

দ্রুত নগরায়নে সমস্যার মোকাবেলা কঠিন : আইভী

নিজস্ব প্রতিবেদক: জার্মান ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন (জি আই জেড) এর আওতাধীন ইপোস হেলথ ম্যানেজমেন্টের আয়োজনে ঢাকায় সোমবার ৩০অক্টোবর ‘আরবান হেলথ চ্যালেঞ্জেন্স: লার্নিংস্ অ্যান্ড ওয়ে ফরওয়ার্ড’ শীর্ষক একটি সাফল্য প্রচারমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়।

জি আই জেড বাংলাদেশ এর ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডাইরেক্টর ভেরনার ল্যাংগের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ। অন্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ এ অবস্থিত জার্মান দূতাবাসের হেড অফ ডেভেলপমেন্ট (কো-অপারেশন) আন্দ্রিয়াস হার্টম্যান।

এবিডিসি প্রকল্পের ভূয়সী প্রশংসা করে আয়োজনকারীদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে মেয়র ডা. আইভি বলেন, “যদিও এই প্রকল্প শেষ হয়ে আসছে, কিন্তু এই প্রকল্প আমাদেরকে অনেক কিছু শিখিয়েছে এবং সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা দিয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি আমাদের নগর স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় কি কি সমস্যা আছে, বিশেষত বস্তিগুলোতে, হাসপাতালের ভিতরে এবং সার্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায়। বর্তমানে বাংলাদেশে নগরায়ন অনেক দ্রুত হচ্ছে, এবং কিছু কিছু সময় এই দ্রুত নগরায়নের সমস্যার সাথে মোকাবেলা করা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে যায়। এরকম পরিস্থিতিতে দাতা সংস্থাদের সহায়তা আমাদের অনেক সাহায্য এবং অনুপ্রেরণা দেয়।”

অতিথিদের বক্তব্য শেষে একটি তথ্য-ভিত্তিক আলোকচিত্র বইয়ের মোড়ক উম্মোচন করা হয়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিগত পাঁচ বছরে যেভাবে মানুষের জীবনে পরিবর্তন এসেছে, তা এই বইয়ে তুলে ধরা হয়েছে।

এখানে উল্লেখ্য, জি আই জেড এর কারিগরী সহায়তায় অ্যাড্রেসিং বাংলাদেশেজ ডেমোগ্রাফিক চ্যালেঞ্জেন্স (এ বি ডি সি) প্রকল্পটির মাঠ-পর্যায়ে বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে ইপোস হেলথ ম্যানেজমেন্ট। বাংলাদেশে নগর স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য এ প্রকল্পের অর্থায়ন করেছে জার্মান ফেডারেল মিনিস্ট্রি ফর ইকোনমিক কোঅপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বি এম জেড)। বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বিভাগীয় কার্জক্রম এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকারের সহযোগিতায় ২০১২ সাল থেকে সিলেট, রাজশাহী ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে এ বি ডি সি প্রকল্পটি চলমান রয়েছে যা এ বছরের ডিসেম্বরে শেষ হবে।

দুই পর্বের এই অনুষ্ঠানটিতে পরে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে কর্মরত অন্যান্য সংস্থার সাথে গত পাঁচ বছরের প্রকল্প অভিজ্ঞতা ও অর্জিত জ্ঞান বিনিময় করে ইপোস। ইপোস জানায়, প্রকল্প বাস্তবায়নকালে সিলেট, রাজশাহী ও নারায়াণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে বসবাসকারী নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্বাস্থ্যবিষয়ক চাহিদা এবং প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে সচেতনতা ও এর চর্চা বৃদ্ধি করাই ছিল এবিডিসি প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। এই উদ্দেশ্য অর্জন করার জন্য এবিডিসি সরকারী স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান এবং স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলিতে প্রসূতি যত্ম প্রদানের জন্য, ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের জ্ঞান ও দক্ষতা উন্নয়ন করার লক্ষ্যে ব্যবহারিক এবং হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে; পাশাপাশি প্রসূতি ওয়ার্ডগুলোতে ৫ঝ কাইজেন এবং সেবার গুণগত মান ব্যবস্থাপনা বাস্থবায়ন করেছে যার ফলে প্রসূতি ওয়ার্ডে সেবার মান উন্নত হয়েছে।

এ প্রকল্পের অধীনে প্রতিটি সিটি কর্পোরেশনের বস্তিবাসীদের মধ্যে, বিশেষত কিশোর-কিশোরী এবং নারীদের মধ্যে, স্বাস্থ্যবিষয়ক চাহিদা এবং যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার বিষয়ক সচেতনতা এবং চর্চা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা করেছে। উপরন্ত এই সব উদ্যোগকে একীভূত করে পরিপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য প্রকল্পটি স্থানীয় সংস্থা ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর দক্ষতা উন্নয়নের জন্য কাজ করেছে এবং সিটি কর্পোরেশনের সাথে সরাসরি কাজে করে একটি তথ্য ব্যবস্থা তৈরি করেছে; এর মাধ্যমে স্থানীয় সংস্থাগুলো নিয়মিত তথ্য প্রদান করে যার ফলে সিটি কর্পোরেশন তথ্য-ভিত্তিক সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্যায়ে ‘নগর স্বাস্থ্যসেবার সমস্যাসমূহ: বর্তমান এবং আগামী বিষয়ে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এই সভায় স্বাস্থ্যবিষয়ক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা অংশগ্রহণ করেন। ডাঃ ধীরাজ কুমার নাথ, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, এই আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন এবং ডাঃ শামীম জাহান, পরিচালক হেলথ, নিউট্রিশন অ্যান্ড এইচ আই ভি/এইডস, সেভ দ্যা চিল্ড্রেন; অ্যাঞ্জেলা বোমার, হেলথ ডেলিগেট, সুইস রেড ক্রস, ডাঃ নীতিশ কান্তি দেবনাথ, স্বাস্থ্য বিভাগীয় পরিচালক, ঢাকা; এবং ডাঃ এফ এ এম আঞ্জুমান আরা বেগম, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন, এই সভায় অংশগ্রহণ করেন।