আজ বুধবার, ২০শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৫ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

দুস্থরা তাকিয়ে ঘুম ভাঙেনি জনপ্রতিনিধিদের!

সংবাদচর্চা রিপোর্ট

চলছে পবিত্র মাহে রমজান, আসছে ঈদ। পবিত্র রমজান মাস মুসলমানদের জন্য আত্নশুদ্ধি ও প্রশিক্ষণের মাস হিসেবে প্রতি বছর সকলের মাঝে এসে হাজির হয়। সমাজে কেউ অতি ধনী আবার কেউ একে বারেই না খেয়ে অনাহারে, অর্ধাহারে তাদের দিন পার করে যাচ্ছে। সমাজের বিত্তবান এসব মানুষ কখনো না খেয়ে থাকা মানুষের দিকে দৃষ্টিপাত করছে না। বর্তমান সমাজে প্রচলিত পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় অর্থনৈতিক বৈষম্য চরম আকার ধারণ করেছে। যার ন্যায় গরীব ও দুস্থরা তাকিয়ে আছে ঘুম না ভাঙা জনপ্রতিনিধিদের দিকে। এমনটাই মনে করেন জেলার বিশ্লেষকগণ।

জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর (বীরপ্রতিক) নেতৃত্বে আগামী দুই একদিনের মধ্যেই গরীব ও দুস্থদের মাঝে ঈদ সামগ্রী বিতরণ করা হবে। এছাড়াও তিনি প্রায় সময়ই গরীব ও সুবিধা বঞ্চিতদের বিভিন্ন সাহায্য সহযোগীতা করে থাকেন। তবে, নারায়ণগঞ্জ- ৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান ছাড়া নারায়ণগঞ্জে আর কোন জনপ্রতিনিধিদের এ বিষয়ে এখানো মুখ খুলতে দেখা যায়নি।

প্রতিবছর নারায়ণগঞ্জ- ৪ ও ৫ আসনের অধিকাংশ জনপ্রতিনিধিরা সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে বিভিন্ন এলাকায় ঈদ সামগ্রী বিতরণ করে থাকেন। সেই সুবাধে সাধারণ মানুষগুলো নিজের অজান্তেই বিশ্বাস করে থাকেন, এসকল ঈদ সামগ্রীগুলো সেলিম ওসমান নয় অন্যান্য জনপ্রতিনিধিরাই বিতরণ করছেন।

জানা যায়, জনপ্রতিনিধিরা তাদের নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় নূন্যতম ঈদ সামগ্রী বিতরণ করে থাকেন। তবে সেই প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হতে থাকে ঠিক তখন থেকেই যখন সাংসদ সেলিম ওসমান ঈদ উপলক্ষে গরীব ও দুস্থদের মাঝে ঈদ সামগ্রী বিতরণ করেন। তবে এই নিয়ে জনমনে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অনেকেই সাংসদ সেলিম ওসমানের এই মহতি উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও কেউ কেউ বলছেন ভিন্ন কথা।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে বিভিন্ন এলাকার মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, সেলিম ওসমান যে ঈদ সামগ্রী বিতরণ করেন তা অত্যন্ত মূল্যবান হলেও সংখ্যায় কম। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও বলেন, সেলিম ওসমান জনপ্রতিনিধি যারা বিতরণ করেন তারাও জনপ্রতিনিধি। সেলিম ওসমান তার দায়িত্ব পালন করছেন কিন্তু তারা কেনো করছেন না?

এদিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী, নারায়ণগঞ্জ- ২ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু, নারায়ণগঞ্জ- ৩ আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা, নারায়ণগঞ্জ- ৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই, সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহিদ মো. বাদল, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের বিত্তবান নেতাদের কাউকেই ঈদ উপলক্ষে গরীব ও দুস্থদের সাহায্যে-সহযোগীতার বিষয়ে কিছু বলতে দেখা যায়নি।

সচেতন মহলের মতে, একমাত্র ইসলামী অর্থব্যবস্থায় মানুষকে এ ধরনের চরম বৈষম্য থেকে মুক্তি দিতে পারে। কেননা ইসলামী বিধান অনুযায়ী সুবিধা-বঞ্চিত মানুষকে সাহায্য-সহযোগীতা করার মাধ্যমে গরীব-দুঃখীর কষ্ট অনুধাবনের শিক্ষা লাভে সহায়তা করা যায়। অনুদানের মাধ্যমে সহমর্মিতা ও সহনশীলতার শিক্ষা অর্জিত হয়। মানব জাতির হেদায়েতের জন্য কুরআন নাযিলের মাস রমযান মানুষকে ধৈর্য ধারণের শিক্ষা দেয়। ধৈর্য্যর প্রতিফলন হিসেবে আল্লাহ নিকট থেকে জান্নাত লাভ করা সম্ভব হবে। মুসলমানরা ১ মাস সিয়াম পালনের পর পবিত্র ঈদুল ফিতরের আনন্দ উদযাপন করে। কিন্তু সমাজের অসহায় দুঃখী মানুষ ধনী শ্রেণীর আনন্দ দেখে তাদের দিন ঈদ পার করে। আর্থিক দৈন্যতার কারণে তাদের ঈদের পরম আনন্দ উপভোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে গরীব মানুষ। সমাজের এসব অসহায় মানুষের ঈদের পূর্ণতা দান করতে বিত্তবানদের গরীব-দুঃখীর পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে জেলার সচেতন মহলের লোকজন।