আজ শনিবার, ২০শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৪ঠা জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

দিগু বাবুর বাজারে উল্টো করে মুরগি বিক্রি

  • উল্টো করে বিক্রি এটা অত্যন্ত অমানবিক- অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট
  • আইন যেহেতু আছে প্রয়োগও আছে-(ওসি) কামরুল ইসলাম
  • আইন তৈরী করলেই হবে না, তদারকী করতে হবে- সচেতন নাগরিক

সংবাদচর্চা রিপোর্টঃ
আইনের বিধি নিষেধ অপেক্ষা করে নারয়ণগঞ্জ দিগু বাবুর বাজারে মুরগি ব্যবসায়ীরা একাধিক মুরগি এক সাথে বেধে উল্টো করে বিক্রি করছে। যেখানে পশু পাখিকে অমানবিক উল্টো ভাবে বহণ করার বিষয়ে বিধি নিষেদ রয়েছে সেখানে দিগু বাবুর বাজার সহ নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন অলিগলিতে এক সাথে একাধিক মুরগির পায়ে বেরি বাধ দিয়ে উপর নিচ করে বিক্রি করছে।

সাধারণ বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিধি নিষেধ রয়েছে তারা এই সম্পর্কে তেমন কিছুই জানে না এবং এই আইন সম্পর্কে কেউ সতর্ক করেনি বলে মাঠ পর্যায়ের বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়।

নগরির সচেতন নাগরিকদের মতে রাষ্ট্র যখন বিভিন্ন আইন কানুন সংযোজন কিংবা বিয়োজন করছে তার কি কোন প্রচারনা আছে? আছে কি সচেতন মূলক কোনো কর্মকান্ড? আইন তৈরী করলেই হবে না, সেই আইনের বাস্তবায়ন কতখানি হচ্ছে সেই বিষয়েও তদারকী করতে হবে।

খোজ নিয়ে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার বিপরীতেই অবস্থিত দিগু বাবুর বাজার। এই দিগু বাবুর বাজার এলাকার আশপাশেই দিয়ে অবাদ চলাচল রয়েছে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ সহ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের। রাষ্ট্রের একটি আইন হওয়া সত্ত্বেও তার বাস্তবায়ন হচ্ছে না এই বিষয়টি কেন নজরদারী করা হচ্ছে না সেই প্রশ্নটি একাধিক সাধারণ নাগরিকের।

জীবজন্তুর প্রতি নিষ্ঠুরতা আইন, ১৯২০-এর ৪ (খ) ধারায় জীবজন্তুর প্রতি নিষ্ঠুরতাসহ হত্যার জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে। এখানে জীবজন্তু বলতে গৃহপালিত বা আটককৃত জন্তকে বেঝানো হয়েছে। এই আইনের বলা আছে, ‘কোনো লোক যদি কোন জন্তুকে এমনভাবে বাঁধিয়া রাখে, যাহাতে জন্তুটি কষ্ট পায় বা জন্তুটি যন্ত্রণা ভোগ করে। এই অপরাধের জন্য এক শত টাকা জরিমানা কিংবা অনূর্ধ্ব তিন মাস পর্যন্ত কারাদ- বা উভয় দ-ে দ-িত করা হইবে।’

এটা যে শধু দ-নীয় অপরাধ, তা-ই নয়। শিশুদের পাঠ্যবইয়েও এ সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের জন্য সচেতনতামূলক একটি পাঠ রয়েছে। তৃতীয় শ্রেণির ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বইয়ের ৩৫ নম্বর পৃষ্ঠায় ‘জীবে দয়া’ নামে পাঠ রয়েছে। এর শেষ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘আমরা হাটবাজার থেকে হাঁস-মুরগি কিনে এদের পা ধরে বাড়ি নিয়ে আসি। পা উপরে থাকে। মাথা নিচের দিকে থাকে। ফলে এদের কষ্ট হয়। খুব ব্যথা লাগে। যন্ত্রণায় ছটফঠ করতে থাকে। কাঁদতে থাকে। এটা খুব অন্যায় কাজ…’।

বোদ্ধামহলের মতে, ফলের ফরমালিন ধরার জন্য যেভাবে ভ্রাম্যমান আদালত করা হয়, এ ক্ষেত্রেও সে রকম করা হলে মানুষ সচেতন হতে পারে। যাঁরা জীবজন্তুর প্রতি সদয় আচরণ করতে পারেন না, তাঁরা মানুষের সঙ্গও ভালো আচরণ করতে পারেন না। এ জন্য এই আইনটিও মানা জরুরি।

এই বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট যুথিকা সরকারের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, একাধিক মুরগি এক সাথে বেধে উল্টো করে বিক্রি এটা অত্যন্ত অমানবিক। অবশ্যই তারা এই ভাবে মুরগি বিক্রি করতে পারে না। আমাদের ম্যাজিস্ট্রেটদের বিভিন্ন বাজারে যাওয়ার কথা রয়েছে আজ। ১৯২০-এর ৪ (খ) ধারার এই আইনটি কী থানা পুলিশ প্রয়োগ করতে পারবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা দেখতে হবে এটা মোবাইল কোর্টে অন্তর্ভুক্ত কিনা। এই বিষয়গুলো খুবই রেয়ার। এই আইনটি মোবাইল কোর্টে তফসিল ভুক্ত কিনা সেটা যাচাই বাছাই করা হবে বলে তিনি জানান।

আইন প্রয়োগের বিষয়ে নিয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আইন যেহেতু আছে প্রয়োগও আছে। এখন সব আইনতো প্রয়োগ করা সম্ভব হয় না। তিনি প্রতিবেদককে প্রশ্ন করে বলেন, আপনার বাসার সামনে যখন একজন মুরগী বিক্রেতা এক সাথে অনেকগুলো মুরগী বেধে উল্টো করে বিক্রি করে তখন কেনো অভিযোগ করেননা? জীবজন্তুর প্রতি নিষ্ঠুরতা আইন, ১৯২০-এর ৪ (খ) ধারায় জীবজন্তুর প্রতি নিষ্ঠুরতাসহ হত্যার জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে। এই আইনটি কি থানা পুলিশ প্রয়োগ করতে পারে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে প্রয়োগ করা সম্ভব। তবে বিস্তারিত জেনে বলতে পারবো।