আজ বুধবার, ২৪শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

দক্ষিণের শক্তি আরও বেড়েছে

সংবাদচর্চা রিপোর্ট
তিনবার জনরায়ে সেলিনা হায়াৎ আইভী আগেই প্রমান করেছেন, তিনি কতটা জনপ্রিয়। অশুভ’র বিরুদ্ধে সুশীল নেতৃত্ব দিয়ে দলের কেন্দ্রে ও স্থানীয়ভাবে তার গ্রহনযোগ্যতা এখন দারুণ। এরপরও উত্তর পক্ষের নানা জ্বালাতন সহ্য করতে হচ্ছে তাকে। তবে সময় এখন বদলে গেছে। আগের চেয়ে দক্ষিণের শক্তি এখন অনেক বেড়েছে। এখন বর্তমান সরকারের একজন মন্ত্রী ও জেলার আরও একজন এমপি মেয়রের শুভ ধারার সাথে যোগ দিয়েছেন।
২০০৩ সালে সেলিনা হায়াৎ আইভী যখন নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তখন তার পরিচয়ে বেশী গুরুত্ব পেতো তিনি পৌর পিতা খ্যাত আলী আহাম্মদ চুনকা’র মেয়ে। বিশ্লেষকদের মতে, প্রথম নির্বাচনে ওই পরিচয় তাকে এগিয়ে দেয়। তবে ২০১১তে অনুষ্ঠিত নারায়ণণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে (নাসিক) নির্বাচনের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এবার বাবার পরিচয়ের চেয়ে উন্নয়ন কাজ ও সাহসী প্রতিবাদ মেয়র পদে আইভীকে জয়ী করে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, এ নির্বাচন থেকে উত্তরের প্রভাবশালী নেতা শামীম ওসমান তাঁর পেছনে লাগেন। আইভীকে হেয় করতে বিদেশেী দাতা সংস্থার মিটিং চলাকালে নগর ভবনের সামনে মানববন্ধন, বিভিন্ন জায়গায় মেয়রের ছবি বিকৃতিসহ নানা কিছু করতে দেখা যায় শামীম অনুগতদের। তবে এতেও বিচলিত হননি আইভী। নিজ দলের ওই নেতার চরম বিরোধিতার মুখেও তিনি আরও সাহসী হয়ে উঠেন। তিনি তার স্বভাবজাত ভঙ্গিমায় সংস্কৃতিকর্মী চঞ্চল হত্যা, মেধাবী শিক্ষার্থী তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী খুনের ঘটনার প্রতিবাদ করেছেন, এখনও করেন। ২০১৬ সালের নাসিক নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়েন আইভী। বিএনপির প্রার্থীকে বিপুল ভোটে হারিয়ে জয়ী হন তিনি। একবারের পৌর চেয়ারম্যান, দুইবারের জনপ্রিয় সিটি মেয়র হওয়ার পরও গত বছর শহরের ফুটপাত দখলের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ায় তাকে হেনস্থা করা হয়। তবে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি আইভীকে মূল্যায়ন করেছে যথাযথ ভাবে। ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর জেলা আওয়ামীলীগের ৩ সদস্যের কমিটি ঘোষণা দেয় কেন্দ্র। এতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নামের পাশাপাশি সিনিয়র সহ সভাপতি হিসেবে সেলিনা হায়াৎ আইভীর নাম ঘোষণা করা হয়। রাজনীতি বোদ্ধা মহলের মতে, অতীতে সাধারণত সভাপতি, সেক্রেটারীর নামই ঘোষণা করা হতো। আইভীর বেলায়ই ব্যতিক্রম হয়েছে। যা দলের কাছে তার গ্রহযোগ্যতা সম্পর্কে পরিস্কার করেছে বলে মনে করেন তারা। ২০১৭ সালের ২৬ নভেম্বর পূর্নাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর আরেকবার কেন্দ্রে আইভীকে মূল্যায়নের বিষয়টি নজরে পড়ে সবার। এ কমিটিতে যারা সুযোগ পেয়েছেন তাদের অধিকাংশই আইভী বলয়ের নেতা হিসেবে পরিচিত।
স্থানীয় জনপ্রিয়তা, কেন্দ্রে গ্রহনযোগ্যতা, পদের দিকে এগিয়ে থাকলেও উত্তর অংশ তার পিছু লেগেই রয়েছে। তবে এবার দক্ষিন অংশ আরও শক্তিশালী হয়েছে বলে মনে করেন, রাজনীতি বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, আওয়ামীলীগ দেশে অনেকবার সরকার গঠন করলেও এবারই প্রথম এ জেলায় মন্ত্রী দিয়েছে। নারায়ণগঞ্জ ১ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী ( বীর প্রতীক) কে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রাণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রী করা হয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, মৃদুভাষী এই শিল্পপতি ও মুক্তিযোদ্ধাকে মন্ত্রী দেয়ার পেছনে দলের কাছে তার গ্রহনযোগ্যতার বিষয়টি ভেসে উঠেছে। সূত্র মতে, মন্ত্রী গাজীর সাথে আগে থেকেই সু-সম্পর্ক রয়েছে মেয়র আইভীর। ১৪ জুলাই নাসিকের বাজেট অনুষ্ঠানে তাকে প্রধান অতিথি করায় এ বিষয়টি আরও পরিস্কার হয়েছে। এয়াড়া নারায়ণগঞ্জ ১ আসনে সংসদ সদস্য ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবুর সাথে মেয়র আইভীর সম্পর্ক ভালো। এসব বিষয়ে চিন্তা করে বিশ্লেষকরা বলছেন, দিনে দিনে শহরের দক্ষিনপন্থিরা সব দিক থেকে শক্তিশালী হয়ে উঠছেন। তাদের কাছে কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন এক সময়ের দন্ডমুন্ডের কর্তারা।

সর্বশেষ সংবাদ