নিজস্ব প্রতিবেদক
দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নির্বাচনে দাঁড়ানোয় বিএনপি থেকে বহিস্কার হয় তৈমূর আলম খন্দকার। তার নির্বাচনী কাজে অংশ নেয়ায় বহিস্কার হয়েছেন মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামালও। তবে, তৈমূরের নির্বাচনে অংশ নেয়া স্থানীয় বিএনপির অন্যান্য দায়িত্বশীল নেতাদের বিরুদ্ধে এখনো কোন ব্যবস্থা নেয়নি দলটির নীতিনির্ধারকরা। তাই দলের এমন দ্বৈত নীতি নিয়ে তুমুল আলাচনা-সমালোচনা চলছে বিএনপি অঙ্গণে।
জানা গেছে, এটিএম কামালসহ জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক মনিরুল ইসলাম রবি, মহানগর বিএনপির সভাপতি আব্দুস সবুর খান সেন্টু, সহ-সভাপতি আতাউর রহমান মুকুল, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আল ইউসুফ খান টিপু, জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস, রুহুল আমিন শিকদারসহ তৈমূরপন্থি বেশ কয়েকজন নেতা প্রকাশ্যে তৈমূর আলম খন্দকারের নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন।
তথ্য বলছে, তৈমূরকে প্রথমে জেলা বিএনপির আহবায়ক পদ থেকে সরিয়ে মনিরুল ইসলাম রবিকে ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক করা হলেও যেই অভিযোগে তৈমূরকে দায়িত্ব থেকে সরানো হয়, ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক হয়ে সেই কাজই করে যাচ্ছিলেন রবি। তিনি তৈমূরের নির্বাচনি সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এরই মধ্যে নির্বাচনের আগমুহুর্তে তাকে ওয়ারেন্ট ইস্যুতে গ্রেফতার করে পুলিশ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কেবল রবিই নয় ; আব্দুস সবুর খান সেন্টু, আতাউর রহমান মুকুল, টিপু, আজাদ বিশ্বাস, রুহুল আমিন শিকদারসহ তৈমূর অনুসারীরা তৈমূরের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ থেকে শুরু করে ফরম জমা দেয়া এবং প্রচার-প্রচারণায় জোড়ালো ভাবে অংশ নিয়ে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত মাঠে থেকেছেন। এর মধ্যে আজাদ বিশ্বাস প্রকাশ্যে নির্বাচনি মাঠে না থাকলেও প্রতিরাতে তাকে দেখা গেছে তৈমূরের বাড়িতে। জনশ্রুতি রয়েছে, আজাদ বিশ্বাস আওয়ামী লীগের একটি প্রভাবশালী পরিবারের পক্ষ হয়ে তৈমূরের বিশেষ কাজে ব্যস্ত ছিলেন। অন্যদিকে, আতাউর রহমান মুকুল তৈমূরের পাশে না দাঁড়ানো বিএনপি নেতাদের হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, ‘যেসকল বিএনপি নেতারা তৈমূরের পাশে দাঁড়াবে না, তাদেরকে নারায়ণগঞ্জ শহর থেকে বের করে দেবে!’ এরপরও মুকুলসহ অন্যান্যরা বিএনপিতে বহাল থাকলেও বহিষ্কার হলেন কেবল তৈমূর ও এটিএম কামালই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপি এবং সহযোগি সংগঠনের বিভিন্ন পদে থাকা বেশ কয়েক জন নেতা কাউন্সিলর পদেও নির্বাচন করছেন। এক্ষেত্রে কেবল মেয়র পদে নির্বাচনে অংশ নেয়া তৈমুর আলম খন্দকার দলীয় শাস্তির আওতায় আসলেও কাউন্সিলর পদে যারা বিএনপি বা সহযোগি সংগঠনের নেতা রয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়নি বিএনপি? সেই প্রশ্নও তুলছেন তৃণমূল কর্মীরা।
নেতা কর্মীরা এ-ও বলছেন, তৈমূর দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নিলেও তিনি লড়াই করেছেন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। তবে, নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে এমন নেতাও রয়েছেন, যারা বিএনপির গুরুত্বপূর্ন পদে থেকে আঁতাত করে চলেছেন ক্ষমতাসীনদের সাথে। তাদের আঁতাতের বিষয়টি এতটাই পরিস্কার যে, দলের ত্যাগী নেতারা ওই আঁতাতকারীদের দিয়েছেন ‘দালাল’ উপাধী। তাদের মধ্যে আতাউর রহমান মুকুল ও আজাদ বিশ্বাস অন্যতম। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে যখন নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতারা কুকুর বলে গালি দিয়েছিলো, তখন একই সভামঞ্চে বসে মুচকি হেসেছিলেন এই আজাদ বিশ্বাস। অভিযোগ রয়েছে, আজাদ বিশ্বাস সদর উপজেলার চেয়ারম্যানীর চেয়ার টিকিয়ে রাখতে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের ওই পরিবারের পোষ্যতা শিকার করেছেন।
তৃণমূল কর্মীরা বলছেন, নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে দায়িত্বশীল পদে থাকা এমন দালালদের সংখ্যা নেহাত কম নয়। তাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে একাধিক অভিযোগ গেলেও সেদিকে নজর নেই নীতিনির্ধারকদের। তাই বিএনপির এমন ‘লোক দেখানো’ শাস্তির সিদ্ধান্তকে হঠকারিতা বলেও মন্তব্য করছেন কেউ কেউ।