আজ বৃহস্পতিবার, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ডুবে আছে ডিএনডি

সংবাদচর্চা অনলাইনঃ

টানা কিছুক্ষণ বৃষ্টি হলেই ডুবে যায় ডিএনডির বড় অংশ। সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন পক্ষ থেকে হাঁকডাক শুনা গেলেও একমাত্র ভরসা বয়সের ভারে ভারাক্রান্ত ৫৮ বছরের পুরন পাম্প হাউজ।

গত সোমবার ও মঙ্গলবারের বৃষ্টিতেও পুরোনো এই সমস্যা আবার সামনে এসেছে। তবে, এবার জলাবদ্ধতায় সমস্যা হয়েছে প্রকট। গাড়ি চলাচলের রাস্তায় এখন নৌকা চলাচল করছে। এতে গত দু’দিনে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে ডিএনডিবাসী।

সকালে জালকুড়ির যুব উন্নয়ন এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় ঘরে ঘরে পানি উঠেছে। এক ইটের উপর অন্য ইট রেখে তার উপর রাখা হয়েছে আসবাবপত্র ও খাট। সেই খাটের এক কোনে আবার এলপি গ্যাসের চুলো রেখে করা হচ্ছে রান্না। রাস্তায় হাটু থেকে কোমর পানি। এ অবস্থাতেই অনেকে কাজে বের হয়েছে। তবে, জুতো আর পেন্ট হাতে নিয়ে।

দুপুরে ফতুল্লার লালপুর এলাকায় দেখা গেছে, গাড়ি চলাচলের রাস্তায় এখন নৌকা চলাচল করছে। বৃষ্টির পানিতে মূল সড়কসহ অলিগলির রাস্তা তলিয়ে গেছে। রাস্তায় হাঁটু থেকে কোমর পানি। ফলে নৌকায় চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে মানুষ। একই অবস্থা ফতুল্লার সস্তাপুর, রামারবাগ, তক্কারমাঠ, দেলপাড়া, নন্দলালপুর, সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজ, জালকুড়িসহ বিভিন্ন স্থানে।

যে কারণে জলাবদ্ধতা:
ঢাকার ডেমরা, যাত্রাবাড়ি, কদমতলী, শ্যামপুর, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লা থানা এলাকায় ১৯৬২-৬৮ সালে ৮ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমি নিয়ে তৈরি করা হয় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) বাঁধ। সেই সময় এই অঞ্চিলের পানি নিষ্কাশনে সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলে তৈরি করা হয়েছিল পাম্প হাউজ। ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালে সাড়াদেশে যখন বৃষ্টি হয়েছিল। তখন ডিএনডি বাঁধের কারণে বন্যার পানি প্রবেশ করেত পারেনি। এরপর মানুষ ডিএনডিতে বাড়ি-ঘর, স্কুল-কলেজ, শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করতে থাকে। দখল করা হয় খাল বিলও।

অন্যদিকে, মানুষের ব্যবহৃত পানি বেড়েছে। একই সাথে বিকল হচ্ছে পাম্প হাউজের যন্ত্রপাতি। এতে করে গত ২ দশকের বেশি সময় ধরে অল্প বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে ডিএনডিতে।

পাম্প হাউজের বর্তমান অবস্থা:
শিমরাইল পাম্প হাউজে ১২৮ কিউসেক ক্ষমতা সম্পন্ন বড় ৪ টি পাম্প রয়েছে। এছাড়াও ৫ কিউসেকের রয়েছে আরও ১০টি ছোট পাম্প। কিন্তু বর্তমানে ৫ কিউসেক ক্ষমতাসম্পন্ন মোট ৭টি ও ১২৮ কিউসেক ক্ষমতা সম্পন্ন বড় ৩ টি পাম্প দ্বারা পানি নিষ্কাশন করছে ডিএনডি পাম্প হাউজ। ৪০ কিউসেকের বেসরকারি দু’টি পাম্প দ্বারাও নিষ্কাশন করা হচ্ছে। এছাড়া ১২৮ কিউসেক পানি নিষ্কাশন করার ক্ষমতা সম্পন্ন একটি পাম্প নষ্ট রয়েছে। এদিকে, ১৯৫ কিউসেক ক্ষশতাসম্পন্ন দুইটি পাম্পদ্বারা পানি নিষ্কাশন করছে সেনাবাহিনী।

শিমরাইল পাম্প হাউজের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাম প্রাসাদ বাছার জানান, ডিএনডির স্বাভাবিক রাখতে প্রতি সেকেন্টে ৩০০ কিউসেক সেচতে হবে। অথচ, এখন মাত্র ৮৮৯ কিউসেক পানি সেচা সম্ভব হচ্ছে। এ অবস্থায় একদিন মুসুল ধারে বৃষ্টি হলে আমাদের সেচ দিতে সময় লাগে ৭ দিন। তারপরেও আমরা ২৪ ঘন্টা পানি স্বেচ দিয়ে নিষ্কাশনের চেষ্টা করে যাচ্ছি।

ডিএনডির আশার কথা:
২০১৭ সালের ৯ ডিসেম্বর ডিএনডি এলাকার উন্নয়নে কাজ হাতে নেয় সরকার। ৫৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটির বাস্তবায়নে দায়িত্ব দেওয়া হয় সেনাবাহিনীকে। কিন্তু পরবর্তীতে এ প্রকল্পের ভেতরে অবৈধ স্থাপনা, স্কুল, কলেজ, মসজিদ, বিদ্যুত ও পানির লাইন সরাতে গিয়ে ব্যয় বেড়ে গেছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ১৩’শ কোটি লাগবে বলে সংশ্লিষ্টরা ধরণা করছেন। তবে বর্তমানে অন্তত আরো ৫০০ কোটি টাকা হলে প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ অনেক কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।
এ ব্যাপারে বরাবরই স্থানীয় সদস সদস্য শামীম ওসামন বলেছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে শুধু জলাবদ্ধতার সমাধানই হবে না। একই সাথে ডিএনডি বাঁধের ভিতরের এলাকা গুলো হাতিরঝিল চেয়েও দৃষ্টি নন্দন হবে।