দেশের ‘দ্বিতীয় পার্লামেন্ট’ হিসেবে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি আবাসিক হল সংসদের নির্বাচন। সকাল আটটায় ভোট শুরু হয়। একটানা বেলা দুইটা পর্যন্ত চলবে ভোট গ্রহণ। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ২৮ বছর পর হচ্ছে বহু প্রতীক্ষার এ নির্বাচন। ইতিহাসের সাক্ষী প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৩ হাজার ১৭৩ জন ভোটার শিক্ষার্থী।
উৎসবমুখর নির্বাচনী প্রচার শেষে মোট ৭৩৮ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছেন ডাকসুর ২২৯ প্রার্থী। আর ১৮টি হল সংসদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৫০৯ জন। ১২টি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হয়েছে। আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও। ভোট গ্রহণ ও নির্বাচন পরিচালনা করছেন একজন প্রধান রিটার্নিং অফিসার ও পাঁচজন রিটার্নিং অফিসার। সব মিলিয়ে এ এক নির্বাচনী মহাযজ্ঞ। শিক্ষার্থীদের ভোটে নির্বাচিত হবেন ডাকসু ও হল সংসদগুলোর নতুন সারথি। তাদের সাদরে বরণ করে নিতে প্রতীক্ষায় ছাত্র-শিক্ষকসহ পুরো বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার। নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আড়াই দশকের বেশি সময় পর আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় শিক্ষার্থীদের অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা পেতে যাচ্ছে। প্রত্যাশা করা হচ্ছে, এ নির্বাচনে কেটে যাবে ডাকসুর বন্ধ্যত্ব, ঘুচবে ছাত্ররাজনীতির অমানিশা।
এই নির্বাচনে মূল লড়াই হচ্ছে চারটি প্যানেলের মধ্যে। সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংসদের ব্যানারে ছাত্রলীগের প্যানেলে ভিপি প্রার্থী রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, জিএস গোলাম রাব্বানী, এজিএস সাদ্দাম হোসাইন, ছাত্রদলের প্যানেলে ভিপি প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান, জিএস খন্দকার আনিসুর রহমান অনিক, এজিএস খোরশেদ আলম সোহেল, প্রগতিশীল ছাত্র ঐক্যের ভিপি প্রার্থী লিটন নন্দী, জিএস ফয়সাল মাহমুদ, এজিএস সাদেকুল ইসলাম সাদেক, সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ভিপি প্রার্থী নুরুল হক নুর, জিএস রাশেদ খান, এজিএস ফারুক হাসান এবং ছাত্র ফেডারেশন থেকে জিএস পদে উম্মে হাবিবা বেনজির ও স্বতন্ত্র জিএস প্রার্থী হয়েছেন এ আর এম আসিফুর রহমান।
ভবিষ্যতের জাতীয় নেতৃত্ব তৈরির ‘সূতিকাগার’ হিসেবে একসময় ভাবা হতো ডাকসুকে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে পরবর্তীকালে ‘৬২-র শিক্ষা আন্দোলন, ‘৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ‘৭১-এর স্বাধীন বাংলাদেশ নির্মাণের লক্ষ্যে রক্তক্ষয়ী জাতীয় মুক্তিসংগ্রাম এবং স্বাধীন বাংলাদেশে স্বৈরাচার ও সামরিকতন্ত্রের বিপরীতে দাঁড়িয়ে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে এ ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছে ডাকসু।