রূপগঞ্জ প্রতিনিধি
রূপগঞ্জ উপজেলার তারবো পৌরসভা, ভুলতা ও গোলাকান্দাইল দিয়ে ঢাকা সিলেট মহাসড়ক ও এশিয়ান হাইওয়ে বা ঢাকা বাইপাস সড়ক চলমান। শুধু তাই নয়, কাঁচপুর ব্রিজ হয়ে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে যাত্রামুড়া হয়ে সংযোগ সড়কে তারাবো বিশ্বরোড গোলচত্তর, যাত্রাবাড়ি থেকে ডেমরা-তারাবো সুলতানা কামাল সেতু দিয়ে রূপগঞ্জের যানবাহনের চলাচলে গুরুত্বপূর্ণ হাইওয়ে সড়কের অবস্থান। ফলে এসব মহাসড়কে চলাচলরত যান নিয়ন্ত্রণে রয়েছে জেলা পুলিশের ট্রাফিক জোন । রয়েছে হাইওয়ে পুলিশের গাজীপুর জোনের নির্ধারিত কাঁচপুর হাইওয়ে থানা। আর এ দুটি বিভাগের নিয়ন্ত্রণে এ মহাসড়কের যানবাহন চলাচল। অভিযোগ রয়েছে, এ দুটি বিভাগের কতিপয় অসাদু সদস্যদের ম্যানেজ করে তাদের গোঁপন সমর্থনে সক্রিয় রয়েছে একটি স্টীকার চাঁদাবাজ চক্র। আর তাদের স্টীকার ক্রয় করলেই নিরাপদে মহাসড়কে দাবড়ে বেড়ায় সিএনজি অটোরিক্সা।
সূত্র জানায়, ট্রাফিক পুলিশের নির্দেশনায় মহাসড়কে ৩ চাকার সিএনজি,অটোরিক্সা, রিক্সা চলাচল নিষিদ্ধ থাকায় এসব বন্ধে তৎপর পুলিশ। মহাসড়কে এসব অবৈধ যান দেখলেই হাইওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা রেকার লাগিয়ে জড়িমানা আদায় কিংবা গাড়ীকে ড্যাম্পিং করে থাকেন। এতে স্থানীয় দরিদ্র সিএনজি চালকরা মহাসড়কে চলাচল করতে না পারায় তাদের জীবিকার উপর প্রভাব পড়ে। এ সুযোগে ডেমরার সারুলিয়া এলাকার সিএনজি চালক জসিমউদ্দিনসহ একটি চাঁদাবাজ চক্র কতিপয় ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশের সদস্যদের সঙ্গে যোগসাজস করে স্টীকার ব্যবস্থা চালু করে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মহাসড়কের চলাচলরত প্রতিটি সিএনজি, অটোরিক্সার সামনের গ্যাসে সাঁটানো রয়েছে স্বচ্চ কাগজে ছাঁপানো বিশেষ স্টীকার। যা দূর থেকে খুব একটা নজরে আসে না। এসব স্টীকারে শ্লোগান দেয়া রয়েছে, “ট্রাফিক আইন মেনে চলুন, কাগজপত্র সঙ্গে রাখুন” । এছাড়াও রয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলার ছবি । এর একপাশে গাড়ীর সিরিয়াল সঙ্কেত অপরপাশে মাসের সংখ্যা। এভাবে প্রতিটি সিএনজি অটোরিক্সা এমনকি রিক্সায়ও দেয়া হয়েছে এমন স্টীকার।
স্থানীয় সিএনজি ও অটো রিক্সা চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের উপ পরিদর্শক খাইরুল ও ট্রাফিক পুলিশের এটিএসআই বিজন সরকারের নাম ভাঙ্গিয়ে ডেমরা সারুলিয়ার বাসিন্দা সিএনজি চালক জসিম উদ্দিন এ মহাসড়কে চলাচলরত ৩ শতাধিক গাড়ী থেকে মাসিক চাঁদা নেয়। বিনিময়ে একটি স্টীকার লাগিয়ে দেয়। যদিও অভিযুক্ত দুই পুলিশ সদস্য বিজন সরকার ও খাইরুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা চালক জসিমের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততাকে অস্বীকার করেছেন।
তারাবো পৌরসভার টাটকী এলাকার বাসিন্দা সিএনজি চালক হেলাল জানান, আমরা জসিমের মাধ্যমে স্টীকার ক্রয় করেছি। কাঁচপুর থেকে তারাবোর বিশ্বরোড হয়ে ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার, সিমরাইল মোড়, আমুলিয়া, রূপসী বরপা, গাউছিয়াসহ সবস্থানে নিরাপদ চলাচলের জন্য মাসে ১২শত টাকায় দুটি স্টীকার ক্রয় করি। একটি ৫শত টাকার। যা দিয়ে শুধুমাত্র তারাবো বিশ্বরোড অতিক্রম করা যায়। অপরটি কাঁচপুরসহ পুরো রূপগঞ্জ অঞ্চলের মহাসড়কের জন্য ৭ শত টাকায় ক্রয় করি। আবার গাউছিয়া অতিক্রম করলে গাউছিয়ায় ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশকেও তাদের মনোনীত নির্ধারিত লোককে দিতে হয় মাসিক চাঁদা।
স্থানীয় সিএনজি চালকরা আরো জানায়, প্রতি মাসের ২৫ তারিখের মধ্যেই পরবর্তি মাসের স্টীকার ক্রয় করতে হয়। ফলে মহাসড়কে পুলিশ তাদের দেখলেও কিছু বলে না। তবে মাস শেষ হলেই শুরু হয় রেকার কিংবা জড়িমানার অভিযান। ৫ থেকে ১০ হাজার জড়িমানা করে থাকেন তারা। তাছাড়া চালকদের মারধরও করেন তারা। অভিযোগ রয়েছে রেকার বিলের নামে যে পরিমাণ টাকার রিসিট দেয়া হয় চালকদের কাছ থেকে আদায় করা হয় ৩ গুন। চালকরাও তাদের গাড়ী রক্ষা করতে এসব দিতে বাধ্য হন।
দিঘী বরাবো এলাকার বাসিন্দা রিক্সা চালক আক্কাস আলী জানান, আমরা গ্রামের ভেতরে রিক্সা চালাই। মাঝে মধ্যে হাইওয়ে অতিক্রম করতে হয়। যাত্রীদের মালামাল বহনের সুবিধা দিতে। এর জন্য মাসিক চাঁদা বা স্টীকার ক্রয় না করলে রিক্সার চাকা ভেঙ্গে দেয়।
এসব বিষয়ে অভিযুক্ত সিএনজি চালক জসিম উদ্দিনের সঙ্গে প্রথমে মুঠোফোনে সিএনজি চালক সেজে স্টীকার করে দেয়ার প্রস্তাব দিলে সংশ্লিষ্ট পুলিশের জন্য মাসিক ফি ১২ শত টাকা ও তাকে খুশি করতে বকশিস দেয়ার শর্তে রাজি হয়। পরে সংবাদকর্মী হিসেবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৩ শতাধিক সিএনজি চালক আছেন ডেমরা, তারাবো, রূপসী, বরপা , কাঁচপুর, মদনপুরসহ বিভিন্ন এলাকায়।তারা যেন নিরাপদে মহাসড়কে গাড়ী চালাতে পারে সেজন্য বাধ্য হয়েই পুলিশ স্যারদের স্টীকার ক্রয় করে দেই। আমাকেও পুলিশরা মাসিক একটি সম্মানি দেয়। গরীব মানুষ পেটের দায়ে তাদের হয়ে কাজ করি।
এদিকে জসিমউদ্দিন নামের কোন সিএনজি চালকের সঙ্গে কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের কোন সদস্য জড়িত নয় দাবী করে হাইওয়ে থানার ওসি মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, একটি চাঁদাবাজ চক্র আমাদের নাম ব্যবহার করে মহাসড়কে চলাচলরত সিএনজি থেকে টাকা নিচ্ছে বলে জেনেছি। মুলত আমরা মহাসড়কে সিএনজি বা অনুমোদন নাই এমন কোন যানবাহন চলাচল করতে দেই না। আমাদের কোন স্টীকারও নেই। তবে এমন কাজে কোন সদস্যের সম্পৃক্ততা থাকলে অবশ্যই আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ সময় সিএনজি চালক জসিমের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলা রেকর্ড শুনার পর তাকে গ্রেফতার করে আইনের আঁওতায় নেয়ায় কথাও জানান তিনি।