রাজনৈতিক প্রতিবেদক
দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকার পরেও দলের গুরুত্বপূর্ণ পদবী পেতে মরিয়া নেতাকর্মীরা। তবে অনেকে কোন অবদান কিংবা পরিশ্রম ছাড়াই নেতা হতে চাইছেন। যে যত টাকা দিবে সে তত বড় নেতা হবেন এমন ধারণাও রয়েছে কারও কারও মনে। কমিটির নেতা নির্ধারণের ক্ষেত্রে শুধু প্রয়োজন নামকরা ব্যবসায়ী কিংবা শিল্পপতির ছাঁয়া। নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার পর নতুন কমিটি নিয়ে দলের নেতাকর্মীরা এমনটা আলোচনা করছেন।
সূত্রমতে, ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারিতে জেলায় দুই বছর মেয়াদী ২৬ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তখন থেকেই এই কমিটি নিয়ে বিতর্ক চলছিলো। বিশেষ করে কমিটিতে থাকা নেতাদের নেতৃত্ব নিয়ে উঠেছিলো প্রশ্ন। খোদ নিজ দলীয় নেতাকর্মীরাই বলেছিলেন, অর্থের বিনিময়ে এই কমিটি কিনে আনা হয়েছে। যার নেপথ্যে কাজ করেছেন কাজী মনিরুজ্জামান, শাহ আলম, নজরুল ইসলাম আজাদ ও আজহারুল ইসলাম মান্নান। আর তাদের চূড়ান্তভাবে সহযোগিতা করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির কতিপয় কিছু নেতা।
অভিযোগ ছিলো, ব্যাপক অর্থের বিনিময়ে কমিটির অনুমোদন করা হয়েছে। এমনকি কঠোর গোপনীয়তার মধ্য দিয়েই কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। ফলে কিছুই জানতে পারেননি আগের কমিটির সভাপতি অ্যাড. তৈমূর আলম খন্দকার। যার কারণে এসব কমিটিতে এমন ব্যক্তিরা স্থান পেয়েছেন যারা ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটিতে স্থান পাওয়ারও যোগ্যতা রাখেননি। তৈমূরপন্থীদের অভিযোগ, কতিপয় কেন্দ্রীয় নেতাদের হাত করে বিপুল টাকার বিনিময়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির ওই কমিটি করা হয়েছিলো।
২০১৭ সালে কমিটি গঠনের পর নিজেদের মধ্যে সভা করতেও ব্যর্থ হয়েছে জেলা বিএনপির বেশিরভাগ নেতাকর্মী। শুধু তাই নয়, নিজেদের অন্তর্ভূক্ত বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড কমিটি নিয়েও তারা কাজ করতে পারেনি। পাশাপাশি দলীয় কোনো কর্মসূচিও এই কমিটি সফল করতে এবং তৃণমূলকে সংগঠিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। সভাপতি হয়ে দলের প্রয়োজনে রাজপথে কাজী মনিরুজ্জামানকে দেখা গেলেও সক্রিয় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক মামুন মাহমুদ। তার নেতৃত্বে দলীয় কর্মসূচী পালন করেছে জেলা বিএনপি। যার ফলে অধ্যাপক হওয়া সত্বেও প্রশাসনের কাছে তাকে অপমান অপদস্ত এমনকি মানুষের সামনেই তাকে শার্টের কলার ধরে নিয়ে যাওয়া হয়।
সদ্য বিলুপ্ত জেলা বিএনপির ওই কমিটি থেকে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা সব কমিটিতেই টাকার খেলা চলছে। টাকা দিয়ে যে কেউ বিএনপি নেতা হয়েছেন। এটাই ছিলো দলটির সিনিয়র নেতাদের কৌশল। আর এ কারণে দলটির নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীরা হতাশ। রাজনীতি বাদ দিয়ে তারা এখন হাত গুটিয়ে নিশ্চুপ আছেন। এ সুযোগে অযোগ্য আর অর্থবররা টাকার বিনিময়ে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের বড় নেতা হয়েছেন।
আসন্ন জেলা বিএনপির কমিটি নিয়েও চলছে নানা গুঞ্জন। কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক সহ গুরুত্বপূর্ণ পদবী পেতে কেউ কেউ দৌড়ঝাপ করছেন কেন্দ্রে। অভিযোগ আছে, পূর্বের কমিটির ন্যায় এবারও বড় ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের কাছে হেরে যাবে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী জানান, পূর্বের ন্যায় এবারও অর্থের বিনিময়ে কিনে আনা হবে কমিটি। যার নেপথ্যে থাকবেন কাজী মনিরুজ্জামান, শাহ আলম ও আজহারুল ইসলাম মান্নান। কেন্দ্রীয় কতিপয় অসাধু নেতার মাধ্যমে তারা তাদের মতো করিয়ে আনবেন জেলা বিএনপির কমিটি।