আজ বুধবার, ২০শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৫ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

জেলা পুলিশের আমন্ত্রণে আসেন নি আইভী

সংবাদচর্চা রিপোর্ট

ইফতার মাহফিলে বরাবরের মতো সরকারি সব দপ্তর থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী। বেশ কয়েকবছর যাবৎ সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠানে দেখা মেলেনি তার! অথচ সরকারি দপ্তরগুলো থেকে জেলার মেয়র, সাংসদ, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে দাওয়াত করা হয়। ওই সকল দাওয়াতে সবাই আসলেও বরাবরের মতো আসেন না মেয়র আইভী। যার ন্যায় গত ২৩ মে জেলা পুলিশের আয়োজনে জেলা পুলিশ লাইন মাঠে ইফতার ও দোয়া মাহফিলে মেয়রকে দাওয়াত করা হলেও তাকে দেখা যায়নি। এ বিষয়টিকে নারায়ণগঞ্জবাসীর ভালোভাবে মেনে নেয় নি।

তাদের মতে, দেশের ইতিহাসে একমাত্র নারায়ণগঞ্জেই চলে মেরু কেন্দ্রীক রাজনীতি। একদিকে উত্তর মেরু অন্যদিকে দক্ষিণ। এই দুই মেরুর দুই প্রভাবশালী পরিবারের সন্তানদের মধ্যে দীর্ঘদিন যাবৎ কোন্দল লেগেই আছে। উত্তর মেরুতে নারায়ণগঞ্জ- ৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান, দক্ষিণে মেয়র আইভী। নারায়ণগঞ্জে সবচেয়ে আলোচিত এই দুই জনপ্রতিনিধিকে শেষ কবে একত্রে দেখা গেছে তা হয়তো কারোরই জানা নেই। দিনের পর দিন তাদের মধ্যে কোন্দল বেড়েই চলছে। তাদের এক টেবিলে না দেখা গেলে নারায়ণগঞ্জবাসী তাদের কাঙ্খিত উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হবে।

নারায়ণগঞ্জ জেলার অন্যতম প্রভাবশালী একজন নেত্রী মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ পৌরসভায় মেয়র হিসেবে নগরীর উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি সহ একজন নিষ্ঠাবান নেত্রী হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। ২০১১ সালে তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জ ও কদমরুসুল পৌরসভাকে একত্রে করে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠা করা হয়।
দেশের ইতিহাসে প্রথম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন আলী আহম্মদ চুনকা কন্যা আইভী।

সেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রভাবশালী নেতা বর্তমান সংসদ সদস্য শামীম ওসমানকে বিশাল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে জয় ছিনিয়ে আনেন আইভী। সেই থেকে আইভীকে সমগ্র বাংলাদেশ চিনে এবং তার সম্পকে জানতে শুরু করে। আইভী তার সততা ও নিষ্ঠার মাধ্যমে নগরবাসীর পাশপাশি নারায়ণগঞ্জের গন্ডি পেরিয়ে অন্যান্য জেলায় বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে। নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের সাথে আলী আহম্মদ চুনকা পরিবারের যে একটি দ্বন্দ্ব রয়েছে সেটা সর্বমহল জানেন। তবে সেই দ্বন্দ্ব এখনো রয়েছে আইভী শামীমের মধ্যে।

আসন্ন বন্দর উপজেলা নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ থেকে কেন্দ্রে যে তিনজনের নাম পাঠানো হয়েছিলো এর একজন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ান। তিনি আইভীর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। তবে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনিত করা হয়েছে শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ বন্দর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ রশিদকে। তিনি আগে থেকেই জানতেন যে, জেলা পুলিশের অনুষ্ঠানে শামীম ওসমান উপস্থিতি থাকবে। আর তাই তিনি ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন নি।
অথচ জেলা পুলিশের আমন্ত্রণে ওই ইফতার ও দোয়া মাহফিলে পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদের সভাপত্বিতে উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ- ১ আসনের সংসদ সদস্য, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীরপ্রতিক), নারায়ণগঞ্জ- ২ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু, নারায়ণগঞ্জ- ৩ আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা, নারায়ণগঞ্জ- ৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, জেলা প্রশাসক রাব্বী মিয়া, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সাবেক সংসদ সদস্য হোসনে আরা বাবলি, জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক মামুন মাহমুদ, মহানগর বিএনপির সহ সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান। শুধু উপস্থিত ছিলেন না মেয়র আইভী!