আজ মঙ্গলবার, ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

জেলাজুড়ে পুষ্টি সচেতনতা বৃদ্ধি

মো: মুন্না খান (প্রকাশক ও সম্পাদক) দৈনিক সংবাদচর্চা:
”খাদ্যের কথা ভাবলে পুষ্টির কথাও ভাবুন” এই শ্লোগান নিয়ে সারা বাংলাদেশের ন্যায় ধনী জেলা নারায়ণগঞ্জেও শুরু হয়েছে পুষ্টি সপ্তাহ ২০১৯। পুষ্টি বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি ও পুষ্টি উন্নয়নের গতিকে ত্বরান্বিত করার মাধ্যমে জনগণের খাদ্যাভাস ও খাদ্য পরিকল্পনায় পুষ্টির বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়ার লক্ষ্যেই পুষ্টি সপ্তাহ শুরু হয়েছে। নানাবিধ কর্মসূচীর মাধ্যমে জেলা জুড়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করছে জেলা সিভিল সার্জন।

মূলত দেশের সবচেয়ে দুস্থ ও ঝুঁকিপূর্ণ মানুষ যাদের দারিদ্র ও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে এবং যারা প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার যারা অতি প্রান্তিক এলাকায় বসবাস করে বিশেষ করে শিশু, কিশোরী, গর্ভবতী, দুগ্ধদানকারী মা, বয়স্ক জনগোষ্ঠী, বিদ্যালয়ের শিশুদের শারীরিক মানসিক ও বুদ্ধি বৃদ্ধির লক্ষ্যে খাবারের সচেতনতা, গুনাগুন ওপুষ্টির বিষয়টি নিশ্চিত করাই পুষ্টি সপ্তাহের মূল লক্ষ্য।

মূলত পুষ্টি এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে গ্রহণ করা খাদ্য পরিপাক ও শোষিত হয়ে তাপ ও শক্তি জোগায়, শরীরের বৃদ্ধি সাধন করে রোগ থেকে মুক্ত রাখে, ক্ষয় পূরণ করে এবং সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করে তাকে পুষ্টি বলে। শরীর গঠন, বুদ্ধিমত্তা, শরীর বৃদ্ধি ও রোগ প্রতিরোধের জন্য পুষ্টিকর খাদ্যের প্রয়োজন। বিশেষ করে শিশুকাল, শৈশবকাল, কৈশোর, গর্ভাবস্থা, স্তন্যদান কালে প্রয়োজনীয় পরিমিত নিরাপদ খাদ্য গ্রহণ করা প্রয়োজন।

নারায়ণগঞ্জ জেলা বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম একটি ধনী জেলা। শিল্প কারখানা ব্যবসা বাণিজ্য ক্রমবর্ধমান উন্নয়নের ফলে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন এসে এখন নারায়ণগঞ্জে বসবাস করছে।বিপুল পরিমাণ জনগণের জন্য নারায়ণগঞ্জের স্বাস্থ্য বিভাগ সিভিল সার্জন এর নেতৃত্বে খাদ্যের সচেতনতা বৃদ্ধি, শিশু পুষ্টি, খাবারের গুনাগত মান বৃদ্ধি জন্য কাজ করে যাচ্ছে। নারায়ণগঞ্জের অধিকাংশ জনগণই পুষ্টি সম্পর্কে অসচেতন ছিল। কিন্তু বর্তমান সরকার নারায়ণগঞ্জ জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ পুষ্টি সপ্তাহ উপলক্ষে যে কর্মসূচি হাতে নিয়েছে তার মাধ্যমে বৃহত্তর জনগোষ্ঠী এখন খাদ্যের গুনাগুন সচেতনতা বৃদ্ধি, শিশু পুষ্টি ও গর্ভবতী মায়েদের পুষ্টি নিয়ে ভাবছেন। ইতিমধ্যে নারায়ণগঞ্জে শিশুর পুষ্টির ক্ষেত্রে প্রায় সব শ্রেণী পেশার মানুষদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ছয় মাস বয়স অবধি শিশু শুধুমাত্র মায়ের দুধ খাবে আর কিছু নয়, সাত মাস বয়স থেকে শক্ত খাবার খাওয়াতে হবে। ভিটামিন এ খাবার যেমন সবুজ পাতা ওয়ালা শাকসবজি পালং শাক, মেথি শাক, মুলার শাক, হলুদ রঙের সবজি কুমড়া, গাজর, পাকা আম ইত্যাদি বিষয়ে ।

তাছাড়া শিশু পুষ্টির পাশাপাশি গর্ভবতী মায়েদের পুষ্টির ব্যাপারেও সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি।কেননা স্বাভাবিক অবস্থায় শিশু ২৮০ দিন বা নয় মাস দশ দিন মাতৃগর্ভে বেড়ে উঠার পর পৃথিবীর আলো দেখতে পায়। এই সময়ে তার বেড়ে ওঠা ও সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ নির্ভর করে মায়ের কাছ থেকে খাওয়া পুষ্টির উপর। সর্বাবস্থায় অপর্যাপ্ত খাদ্য গ্রহণ এবং অপুষ্টির কারণে একদিকে যেমন কম ওজনের ও অপুষ্ট শিশু জন্মগ্রহণ করে তেমনি মায়েরও রক্তশূন্যতা, আমিষের অভাব, দুর্বলতা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। তাই গর্ভবতী মায়ের খাদ্যাভাসের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া জরুরি ।এ সময় স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি আমিষ দরকার হয় দৈনিক ৯০ থেকে ১০০ গ্রাম আমিষ দরকার। আর এই আমিষের মূল উৎস মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, বাদাম ও ডাল। তাছাড়া আয়রন জাতীয় খাবার কলিজা, শুকনো ফল, সবুজ শাকসবজি, কালো কচু শাক, পালং শাক, লাল শাক, টেংরা মাছ, গুড়, খেজুর, টক ফলমূল ইত্যাদি। তাই উপরোক্ত পুষ্টিকর খাবার গর্ভবতী মায়েদের সরবরাহ করার জন্য ব্যাপক সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজন। যা শতভাগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন অফিস।

পাশাপাশি জেলার দরিদ্র জনগোষ্ঠী ও সাধারণ জনগণ সহ সকল পেশাজীবী, শ্রমিক, ব্যবসায়ী, ছাত্র সবাইকে পুষ্টি বিষয়ে সচেতন করে তুলতে হবে এবং খাবারের গুণাগুণ সম্পর্কে জানাতে হবে। কারণ কোন খাবারটি খেলে কি ধরনের সুবিধা পাওয়া যাবে, কি খেলে কি কিসের রোগ দূর হবে কোন খাবারের কি গুনাগুন রয়েছে কোন খাবারটি এখন শরীরের জন্য বেশি প্রয়োজন তা প্রত্যেকটি মানুষের জানা প্রয়োজন। কারণ মানুষের শরীরের শক্তির জন্য পুষ্টিকর খাবারের বিকল্প নেই। তাই বেশি করে শাকসবজি, ফলমূল, আমিষ ও শর্করা জাতীয় খাবার খেতে হবে। যাতে দেহ মন উভয় সুস্থ থাকে। আর এ সকল গুরুত্বপূর্ণ সচেতনতামূলক কাজ করতে নারায়ণগঞ্জে স্বাস্থ্য অফিস বা সিভিল সার্জনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। ইতিমধ্যে নারায়ণগঞ্জ স্বাস্থ্য অফিস সিভিল সার্জন নারায়ণগঞ্জ জেলা ব্যাপী পুষ্টি সপ্তাহ উপলক্ষে মানুষের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পেরেছেন ।

জানা গেছে, বর্তমান সরকারের আমলে বিভিন্ন হাসপাতাল, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কমিউনিটি ক্লিনিকে শূণ্য থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের ওজন পরিবীবক্ষন ও কাউন্সেলিং-এর জন্য ‘গ্রোথ মনিটরিং এ্যান্ড প্রোমোশন কার্ড’ (জিএমপি) কার্ড সরবরাহ করা হয়েছে। মারাত্মক অপুষ্ট শিশুদের জন্য ২০২টি জেলা সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ‘স্যাম’ কর্নার স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি, শিশুদের পুষ্টি সেবার জন্য ৪২৪ টি জেলা সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ‘আইএমসিআই ও পুষ্টি কর্নার’ স্থাপন করা হয়েছে।

একই সময়ে মহিলাদের রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধের লক্ষ্যে ৪৮ কোটি আয়রন ট্যাবলেট বিতরন করা হয়েছে। পুষ্টি ও অন্যান্য অনুপুষ্টি বিষয়ে ৩৮ হাজার ৫৪১জন চিকিৎসক ও নার্সকে প্রশিক্ষন দেয়া হয়েছে। শাকসবজি, মাছ, মাংস, দুধ, ডিম,তেল,বীজের উৎপাদন ও সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়েছে।

তাই জেলাবাসী দাবি করছেন তাদের এই কার্যক্রম শুধুমাত্র পুষ্টি সপ্তাহ মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সব সময় এ ধরনের সচেতনতা মূলক প্রোগ্রাম চলমান থাকে।

সর্বশেষ সংবাদ