সংবাদচর্চা রিপোর্ট:
অর্ধ যুগেও নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠনে ব্যর্থ হয়েছেন আহ্বায়ক কমিটির নেতারা। এ জেলায় বর্তমানে এ পার্টির দুইজন এমপি থাকলেও দলীয় কর্মকান্ডে ভাটা পড়েছে। বিষয়টি নজরে এসেছে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতাদের। তারা শীঘ্রই জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির কমিটি গঠনে পদক্ষেপ নিচ্ছেন। দলীয় সূত্র মতে, স্থানীয় জাপার নেতৃত্ব যাচ্ছে পারভীন ওসমানের হাতে।
২০১৪ সালের ৩০ এপ্রিল জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য নাসিম ওসমান এর মৃত্যুত বেশ শোকাতর হয়েছিলেন তার স্ত্রী পারভীন ওসমান। ১৬ জুন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে উপ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন দেয়া হয় ব্যবসায়ী নেতা সেলিম ওসমানকে। এ নিয়ে প্রয়াত নাসিম ওসমানের পরিবারের কেউ তেমন আপত্তি করেনি। তবে সেলিম ওসমান এমপি হওয়ার পর নাসিম ওসমানের পরিবারের সাথে দূরত্ব তৈরী হয়। যার প্রকাশ্য রূপ দেখা যায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে। এ নির্বাচনে পারভীন ওসমান জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ (সদ্য প্রয়াত) তাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন মাঠে কাজ করতে।
২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি আয়োজিত ২ দিন ব্যাপী জাতীয় কর্মশালায় পারভীন ওসমান আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। সেখানে উপস্থিত জাতীয় পার্টির এক নেতা জানান, পারভীন ওসমানকে দেখে এরশাদ নিজে তাকে মঞ্চে নেন। এরপর মাসদাইর কবরস্থানে স্বামীর কবর জিয়ারত করে প্রচারণায় নামেন পারভীন ওসমান। এ সময়ে তার পাশে জাতীয় পার্টির অসংখ্য নেতাকর্মীকে দেখা গিয়েছিলো। মহানগর জাতীয় পার্টির একাধিক শীর্ষ নেতা জানান, পারভীন ওসমানকে নেতাকর্মীরা নাসিম ওসমানের মতোই ভালোবাসে। সেই আন্তরিক ভালোবাসা থেকেই তার পক্ষে ছিলেন অনেকে। ওই সময়ে বড় ভাবী পারভীন ওসমানের সমালোচনায় মেতে উঠে সেলিম ওসমান। তিনি মায়ের মতো ভাবীর সাজসজ্জ্বা নিয়েও প্রকাশ্যে কথা বলে সমালোচিত হন।
তার নেতিবাচক বক্তব্যের জবাবে পারভীন ওসমান ভদ্রোচিত জবাব দিয়ে প্রশংসিত হন। ধারণা করা হয়েছিলো নাসিম ওসমান পতিœকেই বেছে নেবে দল। তবে শেষ পর্যন্ত আলাদীনের যাদুর চেরাগের মতো মনোনয়ন পান সেলিম ওসমান।
এদিকে গত ১৪ জুলাই এরশাদ মারা যাওয়ায় জাতীয় পার্টিতে নতুন সমীকরণ ঘটছে বলে জানা গেছে। দলটির কেন্দ্রীয় একটি সূত্র জানায়, জাতীয় পার্টির বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে শেষ পর্যন্ত মেনে নিয়েছেন এরশাদ পতœী ও জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রি রওশন এরশাদ। এরশাদের অছিয়ত মতে, পার্টির নেতৃত্বে কাদের আর সংসদে থাকবেন রওশন। রওশন তা মানলেও এক শ্রেনীর নেতা দেবর-ভাবীর মধ্যে কোন্দল সৃষ্টি করতে চাইছে। সূত্র মতে, পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরর সাথে সেলিম ওসমানের সম্পর্ক তেমন ভালো না। নারায়ণগঞ্জ ৫ আসনের ৪ বারের সাংসদ নাসিম ওসমান মারা যাওয়ার পর নারায়ণগঞ্জে জাতীয় পার্টির কর্মকান্ড ঢিলেঢালে ভাবে চলছে সে খবর আছে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে। সেলিম ওসমান এমপি হওয়ার পর শহরে পার্টি অফিস বন্ধ হয়ে গেছে, তিনি নেতাকর্মীদের কোন খোঁজ রাখেন না, এসব বিষয়ও আলোচনা হয়েছে কেন্দ্রে। গুটি কয়েক জাপা নেতা, বিএনপি-আওয়ামীলীগের কিছু নেতা ছাড়া তাকে অন্য কেউ পায় না বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া দীর্ঘ দিন ধরে জাতীয় পার্টির জেলা ও মহানগর কমিটি গঠন না হওয়ায়ও ক্ষুব্দ তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
সদর উপজেলা জাতীয় পার্টির এক নেতা জানান, সেলিম ওসমান ব্যবসায়ী। তিনি সারাক্ষন ব্যবসা নিয়ে আর পরিবারের আধিপত্য বজায় রাখার চিন্তায় মশগুল থাকেন। রাজনীতি না করায় তিনি দলের নেতাকর্মীদের কাছে টানতে পারেন না। তার জন্য এখানে পার্টি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। একই রকম মন্তব্য করেন মহানগর জাতীয় পার্টির একজন নেতাও। ওই নেতা জানান, নাসিম ভাইয়ের কাছে সুখ-দুঃখের কথা বলতে পারতাম। তার কাছে ( সেলিম ওসমান) আমরা ভিড়তেই পারি না। একজন নেতা জানান, এসব বিষয়ে কেন্দ্রও অবহিত আছেন।
জাতীয় পার্টির একজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, নারায়ণগঞ্জের বিষয়ে সব কিছু অবগত আছেন পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা। তারা খুব শীঘ্রই নতুন কমিটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন। ওই নেতা আরও জানান, হাই কমান্ডের কাছে পারভীন ওসমানের সুনাম রয়েছে। কি কারনে সুনাম এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, পারভীন ওসমান বিনয়ী। নেতাকর্মীদের কাছে তার গ্রহনযোগ্যতা রয়েছে। এছাড়া তিনি নাসিম ওসমানের স্ত্রী। পার্টিতে নাসিম ওসমানের বেশ অবদান আছে বলে জানান ওই নেতা।

