আজ থেকে আ.লীগের একাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রচারণা শুরু, সিলেটে প্রধানমন্ত্রী
সংবাদচর্চা ডেস্ক:
আওয়ামী লীগের প্রাক্-নির্বাচনী প্রচার শুরু হচ্ছে আজ মঙ্গলবার থেকে। বিকেলে সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভার মধ্য দিয়ে এই প্রচার শুরু বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমানটি সিলেটের এম এ জি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ মঙ্গলবার সিলেটে তিন বিশিষ্ট সুফি সাধকের মাজার (দরগাহ) জিয়ারত করেছেন।
শেখ হাসিনা দিনব্যাপী সফরে সকালে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে প্রথমে হযরত শাহ্ জালাল (র.)-এর দরগায় যান এবং সেখানে মাজার জিয়ারত করেন।
এরপর তিনি সিলেট নগরীতে হযরত শাহ্ পরান (র.) এবং হজরত গাজী বোরহান উদ্দিন (র.)-এর মাজার শরীফ জিয়ারত করেন।
বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠে আয়োজিত এক জনজভায় ভাষণ দেবেন
সফরে তিনি ১৪টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন এবং ২৪ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। বেলা একটা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত তিনি সিলেট সার্কিট জোহরের নামাজ ও মধ্যাহ্ন করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হিসেবে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তারা রয়েছেন। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর সফর উপলক্ষে পুরো নগরে নেওয়া হয়েছে ছয় স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা। যান চলাচলের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে সিলেট মহানগর পুলিশ।
সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২১ জানুয়ারি সিলেটে জনসভায় বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে একই বছরের ২৩ নভেম্বর তিনি সিলেটে সেনাবাহিনীর ১৭ পদাতিক ডিভিশনের পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন।
জানা গেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী বিভাগীয় শহরগুলো সফর করবেন। সিলেট দিয়ে এই সফর শুরু হচ্ছে। এরপর প্রধানমন্ত্রীর আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি বরিশাল যাওয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া এখন থেকে প্রধানমন্ত্রী ঢাকার বাইরে যেখানেই সরকারি সফর করবেন, সেখানেই দলীয় জনসভা করার সিদ্ধান্ত রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরই সিলেটে মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণার কাজ শুরু করেন, এমনটাই জানান কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহউদ্দিন সিরাজ। তিনি বলেন, সামনে সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এরপর জাতীয় নির্বাচন। জনসভা থেকে নির্বাচনী দিকনির্দেশনা আসবে। তাই নেতা-কর্মীদের আগ্রহ জনসভা ঘিরে।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, আগামী মার্চ-এপ্রিলে গাজীপুর, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হতে পারে। জাতীয় নির্বাচনও আসন্ন। এ অবস্থায় বিভিন্ন সাংগঠনিক শাখা থেকে নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর সফর ও জনসভার দাবি এসেছে। ৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সফর নিয়ে আলোচনা হয়। ওই বৈঠকে কেন্দ্রীয় নেতাদের ১৫টি দল গঠন এবং জেলায় জেলায় সফরের সিদ্ধান্ত হয়। গত শনিবার থেকে এই সফর শুরু হয়েছে এবং এর মধ্যে আটটি জেলার সফর সম্পন্ন হয়েছে।
নির্বাচনের আচরণবিধি অনুসারে, সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে পারবেন না। জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে দলীয় প্রধান হিসেবে রাজনৈতিক সফর করতে পারেন, তবে সরকারি সুবিধা ব্যবহার করা যাবে না।
প্রধানমন্ত্রীর সফর উপলক্ষে গতকাল কেন্দ্রীয় নেতাদের একটা বড় অংশ সিলেট চলে গেছে। আজ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গেছেন অনেকে। সমাবেশ সফল করতে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে গত কয়েক দিন একাধিক প্রস্তুতি সভা করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর জনসভা উপলক্ষে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে যাওয়ার সব পথ পোস্টার-ফেস্টুন-বিলবোর্ডে ভরে গেছে। মাঠের প্রবেশমুখে বসানো হয়েছে আস্ত নৌকা। মনোনয়নপ্রত্যাশী ব্যক্তিদের ব্যানার-পোস্টার দেখা গেছে সিলেট নগরজুড়ে।
সিলেট বিভাগের চার জেলায় সংসদীয় আসন রয়েছে ১৯টি। এর মধ্যে সিলেট-১ (মহানগর-সদর) আসনসহ অন্তত সাতটি আসনে আওয়ামী লীগ থেকে একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন।
গতকাল বিকেলে জনসভাস্থল পরিদর্শন করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তাঁর সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মিসবাহউদ্দিন সিরাজ প্রমুখ।
এ সময় শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, জনসভা হবে একটি নির্বাচনী জনসভা। তবে জনসভায় সিটি করপোরেশন ও সংসদ নির্বাচনে প্রার্থিতা চূড়ান্ত করার কোনো ঘোষণা আসবে কি না, এ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সফর উপলক্ষে জনসভাস্থলসহ সিলেটজুড়েই বিশেষ নিরাপত্তারব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আলিয়া মাদ্রাসা মাঠসহ আশপাশের এলাকায় শতাধিক সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। নগরের প্রবেশমুখে ১০০টি অস্থায়ী নিরাপত্তাচৌকি বসানো হয়েছে।