আজ রবিবার, ১৪ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা ৮ নভেম্বর

জাতীয় নির্বাচনের তফসিল

জাতীয় নির্বাচনের তফসিলনিজস্ব প্রতিবেদক:

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিভিন্ন জোট ও দলের সংলাপের কারণে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণায় কিছুটা সময় নিতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সেক্ষেত্রে ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ হতে পারে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে ২৪ থেকে ২৬ ডিসেম্বর বাদ রেখে পরবর্তী যে কোন দিন। আগামী ৮ নভেম্বরের মধ্যে তফসিল ঘোষণার পরিকল্পনা আছে কমিশনের। এ বিষয়ে  আজ রবিবার বিকালে কমিশনের মুলতবি সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।
এর আগে গত বৃহষ্পতিবার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাত শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘সংলাপের বিষয়টি আমাদের পর্যালোচনায় রয়েছে। আমরা এখনও তফসিলের ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নিইনি। ৪ নভেম্বর তফসিল নির্ধারণ নিয়ে কমিশনের সভা হবে।’
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ৪ নভেম্বর তফসিল নির্ধারণ নিয়ে সভা করার পর ওই দিনই সিইসির ভাষণ রেকর্ডিং প্রায় অসম্ভব। সেক্ষেত্রে তফসিল ঘোষণা হতে পারে  ৭ অথবা ৮ ডিসেম্বর। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রের ভাষ্যমতে, একজন নির্বাচন কমিশনার চাইছেন সংলাপের পরই তফসিল ঘোষণা করতে।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রাজনৈতিক দল বা জোটের সংলাপ চলবে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত। গতকাল শনিবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আমরা আট তারিখ পর্যন্ত যেতে পারছি না। সব মিলিয়ে প্রায় ৮৫টি দল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপে বসতে চায়। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে সংলাপ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব না। কারণ নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করবে।’ এছাড়া নির্বাচনের সময়সূচি বা তফসিল নির্ধারণের আগে সম্পাদনযোগ্য যে সব কাজের পরিকল্পনা নির্বাচন কমিশনের রয়েছে তাতেও ৪ নভেম্বর তফসিল ঘোষণা না হওয়ারই ইঙ্গিত মিলছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছে, ডিসেম্বরের শেষে প্রচণ্ড শীত থাকবে। আর জানুয়ারির প্রথম ১০ দিন প্রচণ্ড শীতের সঙ্গে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে। সেক্ষেত্রে ্কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তারা মনে করছেন, ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহের পরিকল্পনা বাদ দিয়ে শেষ সপ্তাহেই ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ হতে পারে। এক্ষেত্রে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বড়দিনের জন্য ২৪ থেকে ২৬ ডিসেম্বর এই তিন দিন বাদ রেখে ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হতে পারে।
নিরাপত্তা নিয়ে সিইসির বৈঠক : নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনায় ঢাকা মেট্রোপলিটন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। গতকাল শনিবার সকাল ১১ টার পরে ঘণ্টা খানেক এ বৈঠক চলে আগারগাওস্থ নির্বাচন ভবনে। বৈঠকে চার নির্বাচন কমিশনার ছিলেন না। সিইসি কে এম নূরুল হুদা, ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের সঙ্গে এ বৈঠকে ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়াসহ ৭ সদস্যের পুলিশ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে ডিএমপি কমিশনার কথা বলতে চাননি। তিনি জানান, এ বিষয়ে ইসি সচিব কথা বলবেন।
পরে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, ?একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন ভবন, সিইসি,  নির্বাচন কমিশনারদের নিরাপত্তা ও তফসিল পরবর্তী পেট্রোপলিটন এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে এসেছিলেন ডিএমপি প্রতিনিধি দল। প্রতিবার তফসিলের আগে ইসির নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে ডিএমপির সঙ্গে বৈঠকের রেওয়াজ রয়েছে। সর্বশেষ দশম সংসদ নির্বাচনের আগে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।
বিধিমালা চূড়ান্ত করতে দীর্ঘ বৈঠকে ইসি : নির্বাচন সংক্রান্ত কিছু বিধিমালা চূড়ান্ত করতে গতকাল বিকাল থেকে দীর্ঘ বৈঠকে বসে ইসি। বৈঠক শেষে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, দ্রুতই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল হবে। এর আগে ইসি নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক বিষয়গুলো পর্যালোচনা করছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করে অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত বিধিমালা বৈঠকে অনুমোদন করা হয়েছে। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের বিধিমালা নিয়ে আলোচনা হলেও চূড়ান্ত হয়নি। আজ রবিবার ইসি মূলতবি বৈঠকে বসবে। সেখানে এই বিধিমালা অনুমোদন করা হবে।
বিএনপির গঠনতন্ত্রের সংশোধন নিয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি সচিব বলেন, তারা আদালতের নির্দেশনা হাতে পেয়েছেন। ইসিকে একমাসের সময় দেওয়া হয়েছে। এখনো সময় আছে। এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বিষয়টি কমিশনের সভায় তোলা হবে।
সিইসি কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে বৈঠকে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী এবং কমিশনের ঊর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।