আজ শনিবার, ১৫ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

জলাবদ্ধতা কমাতে নাসিকের প্রকল্প

স্টাফ রিপোর্টার :
প্রতিবছর বর্ষার মৌসুমে শহরের জলাবদ্ধতা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা নিয়ে উঠতে থাকে নানা প্রশ্ন। যেমনটা দেখা যায় গত সপ্তাহের ঘূর্ণিঝড় রিমেলের আঘাতের সময়। টানা বৃষ্টিতে শহরের বিভিন্ন এলাকায় দেখা দেয় জলাবদ্ধতার। টানা দুদিন পানির নিচে ছিল শহরের প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ বঙ্গবন্ধু সড়ক। যার ফলে নানা রকম ভোগান্তির পোহাতে হয় নগরবাসীদের। এসব ভোগান্তির জলাবদ্ধতার জন্য প্রতিবারই দুর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থাকে দায়ী করে নগরবাসী। তাই শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা পরিবর্তনের লক্ষ্যে প্রায় ৪২ কোটি টাকার দুটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক)। এ প্রকল্পের অধীনে শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে গত সোমবার দিনভর প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে নারায়ণগঞ্জ শহরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এতে তলিয়ে যায় শহর ও শহরতলির বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাটসহ ঘরবাড়ি। তবে মঙ্গলবার বৃষ্টি না হওয়া সত্ত্বেও ছিল জলাবদ্ধতা। শহরের প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ বঙ্গবন্ধু সড়কটিও ছিল হাটু সমান পানির নিচে। একইভাবে গলাচিপা, কলেজরোড, আমলাপাড়া, উকিলপাড়া, দেওভোগ, দেওভোগ আখড়া, মাসদাইর আশেপাশের এলাকাগুলোতেও জলাবদ্ধতা দেখা যায়। ফলে দিনভর নানা ভোগান্তির পোহাতে হয় নগরবাসীদের।
নাসিক ১৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর অসিত বরণ বিশ^াস বলেন, বঙ্গবন্ধু সড়কের দুই পাশের ড্রেনগুলো পুরুনো। বিভিন্ন স্থানে ড্রেনগুলোর অবস্থা খারাপ হয়ে আছে। এছাড়া বড় সমস্যা হচ্ছে অতি বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা। যার ফলে প্রেসক্লাবের সামনে, গলাচিপা মোড়, পেনোরোমা প্লাজাসহ শহরের বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা দেখা যায়। মূলত বর্তমান ড্রেনগুলোর ধারণ ক্ষমতা এবং পানি প্রবাহ পদ্ধতি সাধারণ সময়ের জন্য পর্যাপ্ত। তবে অতি বৃষ্টি অথবা দুর্যোগকালিন অবস্থা। যেমনটা ঘূর্ণিঝড় রিমেলের সময়ে হয়েছিল সেটার জন্য পর্যাপ্ত নয়। ফলে যে পানি ৩০ মিনিটে নামার কথা তা নামতে আরও বেশি সময় লেগে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এ প্রকল্প দুটি আমাদের ড্রেনেজ মাস্টার প্লানের একটি অংশ। সিটির ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য আমাদের মাস্টার প্লানে অনেককিছু রয়েছে। তবে এ পর্যায়ে জাইকার অর্থায়নে বঙ্গবন্ধু সড়ক এবং শাখা সড়কগুলোর কাজই করা হবে। তাই এ প্রকল্প দুটি অনেক পরিকল্পনার সাথে করা হচ্ছে এবং এ জন্য শহরের পুরো ড্রেনেজ ব্যবস্থা ঢেলে সাঁজানো হবে।
নাসিক প্রকৌশল বিভাগের তথ্যমতে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) ড্রেনেজ ব্যবস্থা বিষয়ে মাস্টার প্লান রয়েছে। সে প্লানের অংশ হিসেবে শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে জাপানি উন্নয়ন সংস্থার (জাইকা) অর্থায়নে ২০২২-২৩ অর্থবছরে দুটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রকল্প দুটির অধীনে নাসিক ১৩ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের চাষাঢ়া থেকে নিতাইগঞ্জ পর্যন্ত ২ দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ড্রেন নির্মাণ করা হবে। যার বাজেট ধরা হয়েছে ৪১ কোটি ৭০ লাখ ৬১ হাজার ৫১১টাকা।
প্রকল্পটি দুটির অধীনে বঙ্গবন্ধু সড়কের পূর্ব ও পশ্চিম পাশে সেকেন্ডারি ড্রেন নির্মাণ করা হবে। ড্রেন দুটি প্রস্থে ৪ ফুট এবং গড়ে ৫ থেকে সাড়ে ৫ ফুট গভীর হবে। একই সাথে বঙ্গবন্ধু সড়কের আশেপাশের শাখা সড়কগুলোতে টার্শিয়াল ড্রেন নির্মাণ করা হবে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য শহরের প্রেসক্লাব সড়ক, গলাচিপা, উকিলপাড়া, পূর্ব পাশে প্রেসিডেন্ট রোড, আমলাপাড়া প্রমুখ।
শহরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে এ প্রকল্পের অধীনে রেল লাইনের নিচে আরেকটি একটি কালভার্ট নির্মাণ করা হবে। এছাড়া ড্রেনের উপর ফুটপাত নির্মাণ, বৃক্ষরোপর ও সুন্দর্যবর্ধন করা হবে।
প্রকল্প দুটির প্রধান প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, প্রকল্প দুটি সহজ ছিল না। এ জন্য আমাদের অনেক কাজ করতে হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে শহরের একেক এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থায় আমরা একেক রকম সমস্যা লক্ষ্য করি। কোথাও ভূমির অসমতা, কোথাও স্লবের, গভীরতার, ময়লা-আবর্জনার। কোনো কোনো ড্রেনের মুখে আমরা আস্ত কম্বল, কাঁথাও পেয়েছি। ভিন্ন ভিন্ন জটিলতাগুলো এক পন্থায় সমাধান সম্ভব নয়। তাই আমরা বিভিন্ন এলাকার সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে ভিন্ন ভিন্ন কৌশল, ডিজাইন ব্যবহার করেছি।
তিনি আরও বলেন, এ প্রকল্পে সম্পূর্ণ ড্রেনেজ ব্যবস্থা ঢেঁলে সাজানো হবে। বর্তমান ড্রেনগুলো ইট দিয়ে করা। যা সহজেই ভেঙ্গে যায়। অনেক জায়গায় ভেঙ্গেও গেছে। ফলে কিছু কিছু পয়েন্টে পানি প্রবাহের সক্ষমতা হারিয়েছে। তাই এ প্রকল্পে পুরনো কাঠামো ভেঙ্গে নতুন করে করা হবে। সে ক্ষেত্রে এবার আরসিসি ঢালাই করা হবে। এ পদ্ধতিতে করা হলে ড্রেনগুলো অনেক টেকসই হবে।
নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, রিমেলের মত দুর্যোগে শহরের জলাবদ্ধতা দেখা দিবে এটাই স্বাভাবিক। ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রামের মত সিটিতেও জলাবদ্ধতা ছিল। শহরের জলাবদ্ধতার একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে সিটির বাইরের কালিয়ানি খাল। খালটির সঙ্গে ১৩ ও ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের জলাবদ্ধতা সম্পৃক্ত। এ খালটির অবৈধ দখল ও দূষণের কারণে পানি যথাযথভাবে প্রবাহিত হতে না পারায় শহরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
তিনি আরও বলেন, শহরের ড্রেনজ ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে জাইকার অর্থায়নে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটির টেন্ডার হয়েগেছে। ওয়ার্ক অর্ডার হলেই কাজ শুরু হয়ে যাবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে শহরে জলাবদ্ধতা থাকবে না।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ