আজ শনিবার, ১২ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

জটিল মেরুকরণে আওয়ামী লীগ

সংবাদচর্চা রিপোর্ট :
অতীত থেকেই নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিতে দ্বন্দ্ব চলছে। তবে ২০১১ সালে নারায়নগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন নিয়ে শামীম-আইভীর মধ্যে নতুন মেরু করন সৃষ্টি হয়েছে। পরবর্তিতে ত্বকী হত্যাকান্ডকে কেন্দ্র করে শামীম-আইভীর দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রূপ নেয়। তবে এ দ্বন্দ্ব এড়াতে প্রধানমন্ত্রী গণভবনে ডেকে সমঝোতার পথ অবলম্বন করলেও এক পক্ষ অপর পক্ষকে আক্রমণাত্বক ভাবে ঘায়েল করতে চায়।

অপরদিকে এ দ্বন্দ্ব সমঝোতার জন্য সেলিম ওসমান একাধিক বার এক টেবিলে বসার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। এমনকি গত নাসিকের বাজেট অধিবেশনে সেলিম ওসমান উপস্থিত হয়ে মেয়র আইভীকে সহায়তা করার প্রস্তাব দেন। কিন্তু কোন সমঝতা হয়নি বরং হকার ইস্যু নিয়ে আইভীর সমর্থকদের সাথে শামীম সমর্থকদের সংঘর্ষ অন্য দিকে মোড় নেয়। এছাড়াও গত ২ মার্চ শামীম ওসমানের জনসভায় মেয়র আইভীর বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখার পর মেয়র আইভী ত্বকি মঞ্চের সমাবেশে প্রকাশ্যে ওসমান পরিবারকে খুনি পরিবার হিসাবে আখ্যায়িত করলে অবস্থার আরো অবনতি ঘটে।

এদিকে জামাত-বিএনপির সাথে সখ্যতা ও সরকারের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখার অভিযোগ এনে আইভীর বিরুদ্ধে নাগরিক সমাজের ব্যানারে প্রধানমন্ত্রীর বরাবর জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করেন। এই ঘটনার পর অনেকটা প্রকাশ্য বিভক্ত হয়ে পড়ে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ। বর্তমান নারায়ণগঞ্জে আওয়ামীলীগের শত্রু আওয়ামীলীগ।

তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন নারায়ণগঞ্জের ক্ষমতাসীনদের রাজনীতি ঘায়েল করতে বিরোধী দলের দরকার নেই। নির্বাচনের পর থেকে নারায়ণগঞ্জের রাজপথ এখন ক্ষমতাসীনদের হাতে। আওয়ামীলীগ নেতাদের দাপটে ও পুলিশের হয়রানি মূলক মিথ্যা মামলায় বিএনপির অনেক নেতা কর্মীরা রাজনীতি থেকে ইউটার্ন নিয়েছে। তবে নারায়ণগঞ্জে বিএনপির নেতারা রাজপথে না থাকলেও বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী গের প্রতিপক্ষ এখন আওয়ামীলীগই। উপজেলা নির্বাচন, বিভিন্ন সেক্টর নিয়ন্ত্রণ, ক্ষমতার লড়াইসহ নানা করণে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে গ্রুপিং তুঙ্গে। আওয়ামীলীগের নেতারাই এখন আওয়ামীলীগ নেতাদের ঘায়েল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এতে করে দলের মধ্যে বিভাজন যেমন বাড়ছে তেমনই ক্ষমতাসীন দলের বিবধমান নেতাদের মধ্যে দুরত্ব দিন দিন বেড়েই চলেছে।

জানাগেছে, উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীক ইস্যুতেও দ্বন্দ্ব আরো প্রকট হওয়ায় নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষেও আশংকা দেখা দিয়েছে। এমনকি আইভী সমর্থকে বয়কট করে ওসমান সমর্থকদের প্রধান্য দেওয়া হয়েছে। এমনকি নির্বাচনে ওসমান সমর্থনকারীরা জয়ী হয়েছেন। একাধিক নেতা-কর্মী অভিযোগ করেছেন, নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগে যে অপরাজনীতি শুরু হয়েছে তার শেষ হবে হয়তো বিয়োগান্তক কোন ঘটনার মধ্যদিয়ে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আওয়ামীলীগের সাংসদ শামীম ওসমান ও তার পরিবারকে নিয়ে বিষোদগার করে চলেছেন জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পেরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী। এছাড়াও আলীগঞ্জের মাঠ নিয়ে শামীম ওসমানকে ইঙ্গিত করেন আইভী। তবে আওয়ামীলীগ বিরোধীদের সাথে নিয়ে মেয়র আইভী আওয়ামীলীগের একজন সাংসদের বিরুদ্ধে করা এমন মন্তব্য ভাল চোখে দেখছেন না মাঠ পর্যায়ের আওয়ামীলীগের সাধারণ নেতা-কর্মীরা।

এছাড়াও প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সেক্টর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আওয়ামীলীগ নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাড়ছে। যে কারণে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে পড়েছে। রাজনৈতিক বিশে¬ষকরা বলছেন, বর্তমানে আওয়ামীলীগের সুসময় চলছে। আর এই সুসময়ে অতিথি পাখিদের আনাগোনা বেড়েছে। এসকল অতিথি পাখিরা বিভিন্ন সেক্টর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করছে। এতে করে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামীলীগ সাংগঠনিক ভাবে দূর্বল হয়ে পড়তে পারে। আর এমন অবস্থা চলতে থাকলে নারায়ণগঞ্জে ত্যাগী নেতারা আওয়ামীলীগের রাজনীতি থেকে নিস্ক্রীয় হয়ে পড়তে পারে বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন। আর নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগকে দুর্বল করতে যারা পিছন থেকে ইন্ধন যোগাচ্ছে তারা এখন ক্ষমতাসীন দলের সবচেয়ে ক্ষমতাবান বলে মাঠ পর্যায়ের আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা মনে করেন।
তবে আজ আওয়ামী লীগের ৭০ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর পর মন্ত্রী গাজী ও আইভী সমর্থকরা শামীম বলয়ের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হবেন কি না সেটাই এখন দেখার বিষয়।
এছাড়া নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ দুই জন ত্যাগী নেতা বাছাই করতে ব্যর্থ হয়েছে। তার জন্যেও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ। এনিয়ে জটিল মেরুকরণ তৈরী হয়েছে।