সংবাদচর্চা রিপোর্ট:
গত ২৭ সেপ্টেম্বর বৃহষ্পতিবার বিকেলে রূপগঞ্জ উপজেলার গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের কালি এলাকা থেকে সরকার বিরোধী নাশকতার পরিকল্পনা কারি ছাত্রদলের ক্যাডার হিসেবে পরিচিত জাহিদুল ইসলাম ওরফে কালা ভাগিনাকে গ্রেফতার করে ভূলতা ফাড়ির পুলিশ ।
ছাত্রদলের ক্যাডার জাহিদুল কে ছুটাতে নারায়ণগগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই তদবির করতে ভূলতা ফাঁড়িতে যায়। পুলিশ রূপগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহাজাহান ভূইয়ার এবং আব্দুল হাইয়ের জিম্বায় তাকে ছেড়ে দেয়।
বিষয়টি গত ৩০ সেপ্টেম্বর দৈনিক সংবাদচর্চায় প্রকাশিত হবার পর থেকে সবার নজরে আসে। আব্দুল হাই এর বিতর্কীত কর্মকান্ডে গোটা জেলাব্যাপী আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক নিন্দার ঝড় বইছে।
নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি জামায়াত নারায়ণগঞ্জে একের পর এক নাশকতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পুলিশ নাশকতা কারীদের বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছে। কিন্তু জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই পুলিশকে সহযোগিতা করছে না। উল্টো তিনি নাশকতাকারীদের রক্ষা করছে। থানায় এবং ফাঁড়িতে ধরনা দিচ্ছে। কোন স্বার্থে আব্দুল হাই নাশকতা কারীদের রক্ষা করছে তা অনেকেরই জানা নেই।
গণমাধ্যমকে দোষারোপ করে মিথ্যা প্রতিবাদ দিয়েছেন জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই। এখন নিজের দোষ ঢাকতে ঘটনার পুরোটাই চাপিয়ে দিয়েছেন শাহাজাহান ভূইয়ার দিকে।
অথচ এ ঘটনাটি যখন সংবাদচর্চার মাধ্যমে জানাজানি হয় তখন ভিন্নমত পোষণ করেছিলেন আব্দুল হাই। আর জাহিদুলকে পুলিশের হেফাজত থেকে ছাড়িয়ে নেয়ার সময় নিজেদের কর্মী দাবি করলেও এখন সে কোন দলের কর্মীই নয় বলে দাবি করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান শাহাজান ভূইয়া।
তবে এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান ভূইয়া বলেন, জাহিদুল ইসলাম জাহিদ একটি স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। স্কুলে ছাত্রদল বা ছাত্রলীগের সংগঠন নাই। সে কোন রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নেই। সে ছাত্রলীগ বা ছাত্রদল কোনটাই করেনা। ইন্টারমিডিয়েট পাশ ছাড়া ছাত্রলীগ বা ছাত্রদলের কর্মী হওয়া যায়না।
আমাদের একটি জনসভায় সে অংশগ্রহণ করেছিলো পুলিশ তাকে এরপর গ্রেফতার করে। তাই আমিসহ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি তাকে ছাড়িয়ে আনতে যাই। ছেলেটি নিরপরাধ ভালো। তিনি বলেন, তাঁর নামে কোন মামলা নাই বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তিনি বলেন, আমি এবং জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই জানার জন্য ফাঁড়িতে গিয়েছিলাম। তবে সুর বদলে শাজাহান ভূইয়া বলেন, সে কোন নাশকতায় কাজে জড়িত থাকার সন্দেহ করলে তাকে পুলিশ গ্রেফতার করুক, আমরা তাকে সাপোর্ট করবো না। এটি তাঁর ব্যক্তিগত।
সরেজমিনে দেখা গেছে জাহিদুল বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নারায়ণগঞ্জ ১ রূপগঞ্জ আসনের বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভূইয়ার বলয়ে রাজনীতি করে। স্থানীয়দের কাছে সে দিপুর ক্যাডার হিসেবে বেশ পরিচিত।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে জাহিদুল কোন স্কুল বা কলেজের ছাত্র নয় । সরেজমিনে দেখা গেছে সে গাউছিয়া মার্কেটে মাছের আড়ৎ দারী করে।জাহিদুল নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনে স্কুল ড্রেস পড়ে ছাত্রদের শান্তি প্রিয় আন্দোলনকে ভিন্ন খ্যাতে নেওয়ার চেষ্টা করে।
গত ৩০সেপ্টেম্বর ছাত্রদলের ব্যানারে জাহিদুল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শোডাউনের মাধ্যমে যোগদান করছে।
আব্দুল হাই প্রতিবাদ লিপিতে দাবি করেন, এখানে কে ছাত্রদল কর্মী, কে ছাত্রলীগ কর্মী সবকিছু দেখার দায়িত্ব স্থানীয় নেতৃবৃন্দের। আমার দ্বারা সম্ভব না সবাইকে চিনে রাখা।
প্রতিবাদ লিপিতে আব্দুল হাই বলেন, রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মো.শাহজাহান ভূইয়ার কথায় পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়েছি সত্য। কিন্তু আমি গ্রেফতারকৃত আসামীকে আমার জিম্মায় ছাড়বার সুপারিশ করি নাই।
কিন্তু ভূলতা পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ জসিম উদ্দিন বলেন, নাশকতার সন্দেহে জাহিদুলকে গোলাকান্দাইলের কালি এলাকা থেকে আটক করা হয়। কিন্তু পরবর্তী নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই এবং উপজেলা চেয়ারম্যান শাহাজাহান ভূইয়া ভূলতা ফাড়িতে এসে জাহিদুলকে নিজেদের কর্মী বলে দাবি করে । পরে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে তাদের জিম্বায় জাহিদুলকে ছেড়ে দেয়া হয়।
নারায়ণগঞ্জ জেলা এবং রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের অনেক ত্যাগী নেতারা বলছে, আ:হাই সাহেব থানায় গিয়ে চিহ্নিত ছাত্রদলের ক্যাডারকে ছুটিয়ে নিয়ে আসায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অমান্য করছে। বিএনপিকে সরকার বিরোধী আন্দোলন করার সুযোগ তৈরী করে দিচ্ছে। আমরা আব্দুল হাইয়ের পদত্যাগ দাবি করছি।
রূপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল শিকদার বলেন, জাহিদুল একজন চিহ্নিত ছাত্রদল ক্যাডার। সে বিভিন্ন নাশকতার পরিকল্পনাকারি।
জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি তাকে থানায় থেকে ছুটিয়ে নিয়ে আসায় আমরা রূপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে এর তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
সারা দেশের জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিভাবক হিসেবে কাজ করে। কে কোন দল করে তার খোঁজ খবর রাখে। সরকার পতনের আন্দোলনের সাথে যারা জড়িত তাদের সাথে লড়াই করে। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই এর ব্যাপারে উল্টো চিত্র। তিনি বিএনপির ক্যাডারদের সাথে আতাত করে চলছে।
ইতোমধ্যে দলীয় হাইকমান্ডের কাছে আব্দুল হাইয়ের ব্যাপারে বিচার দেওয়া হয়েছে। যে কোন সময় তার বিরুদ্ধে দলীয় সিদ্ধান্ত আসতে পারে।