আজ বৃহস্পতিবার, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

চনপাড়ার লেডি ডন স্বপ্না

সংবাদচর্চা রিপোর্ট: এলাকায় ত্রাস এক নারী। তার সাঙ্গপাঙ্গদের কাছে জিম্মি এলাকার মানুষ। ভয়ে কেউ মুখ খুলছেন না। এমন ঘটনা সাধারণত সিনেমার পর্দায় দেখা যায়। কিন্তু এবার বাস্তবেও দেখা গেল সেরকম এক নারীকে! সে ডিগবাজি দিয়ে খালি স্বামী বদলায়। তিনি হলেন স্বপ্না। স্বপ্না রূপগঞ্জ উপজেলার চনপাড়ার ৯ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা। সে মৃত সাত্তার পাগলের মেয়ে। তার বাবা ছিলেন চনপাড়ার শীর্ষ গাঁজা ব্যবসায়ী। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত স্বপ্না ৫ খান বিয়ে করেছেন! তার স্বামীরা ছিলো প্রকৃত মাদক ব্যবসায়ী। বাবা এবং স্বামীর কাছ থেকে স্বপ্না মাদক ব্যবসা শিখেছেন। স্বপ্নার প্রথম বিয়ে হয় চনপাড়া ৯ নং ওয়ার্ডের মাদক ব্যবসায়ী ভুট্টুর সাথে। ২য় বিয়ে হয় ডেমরা এলাকার মাদক ব্যবসায়ী সাব্বিরের সাথে। মাদক মামলায় সাবিবরের সাজা হলে তাকে তালাক দিয়ে চনপাড়ার মাদক ব্যবসায়ী মিন্টুর সাথে চলে যায়। পরে ৩য় বারের মতো বিয়ের পিড়িতে বসে সে। তার চতুর্থ বিয়ে হয় নারায়ণগঞ্জের ভূইগড় এলাকার আবুলের সাথে। একটি প্রভাবশালীর ইন্ধনে আবুলকে তালাক দিয়ে প্রভাবশালীর পছন্দের মানুষ তাঁত জাহাঙ্গীরকে বিয়ে করে স্বপ্না।
চনপাড়ার অলি-গলিতে তাকে এখন ‘লেডি ডন’ স্বপ্না নামে ডাকেন সবাই। তার সেকেন্ড ইন কমান্ড মাদক সম্রাজ্ঞী ইয়াসমিন। সে মলম পার্টি ,জুয়ার আসর দেখাশোনা করে।
স্বপ্নার এক সময়ের কাছের লোক জানান, স্বপ্নার রয়েছে একটি তরুণী টিম। ঐ টিম বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে চুরি করে। প্রেম বা বিয়ের নামে নাটক সাজিয়ে প্রহসনের বিচার বসিয়ে স্বপ্না ছেলেদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে থাকে।
স্বপ্নার মাদক এবং গাঁজা ব্যবসা এখন পরিচালনা করেন স্বপ্নার বড় বোন সুরমা ভাই মাইনউদ্দিন। তাদের বিরুদ্ধে মাদকসহ থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
স্বপ্নার বোনের ছেলে পিয়াস সে মাদকের বড় ডিলার। সে মাদক আনা নেওয়ার কাজ করে। মাদক আনা নেওয়ার সুবিধার জন্য তাকে একটা ৯৯ এর দোকান দেওয়া হয়। দোকানের মালামালের সাথে সে মাদকের চালান নিয়ে এলাকায় প্রবেশ করে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে , চনপাড়ায় রমরমা মাদক এবং দেহ ব্যবসা করছে স্বপ্না।তার নেতৃত্বেই চনপাড়ায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে। তিনি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে সুন্দরী তরুণীদের নিয়ে এসে রূপগঞ্জে প্রভাবশালীদের কাছে সরবরাহ করে থাকেন। বিশেষ কোনো অনুষ্ঠান বা কনসার্টে তিনি তরুণীদের সরবরাহ করে থাকেন। চাঁদাবাজি,মাদক ব্যবসাসহ সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে প্রচুর টাকার মালিক হয়েছে সে। তার নেই কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা। স্বপ্নার অপর সহযোগী পিংকী, ঝরণা, সাদিয়া। তাদের দিয়ে ডেমরা হাজিনগর,কোনাপাড়া ,যাত্রাবাড়ি বাসা ভাড়া করে পতিতা ব্যবসা করান স্বপ্না। স্বপ্নার ভাই মইনুদ্দিন রূপগঞ্জসহ ঢাকার আশপাশে মাদক সরবরাহ করে। স্বপ্নার আরেক ভাই হত্যা মামলার আসামি কালু। স্বপ্নার সাথে চনপাড়ার ফারুক নামে এক লোকের অবৈধ সম্পর্ক ছিলো। স্বপ্না তার সাথে বেইমানী করে অন্য ছেলেকে বিয়ে করে। স্বপ্নার ভাই কালু ফারুককে ডেকে নিয়ে চনপাড়া বেগুন চড়ে হত্যা করে। সেই হত্যা মামলায় কালু এখন জেলে রয়েছে। জানা গেছে প্রতি মাসে তাকে পালার বিল দিতে হয় লাখ টাকার উপরে। এখন সে নিজেও মোঙ্খী রানী ! স্বপ্নার নতুন পোশাক এবং গহনার অভাব নেই। জানা গেছে একটি প্রভাবশালী মহল তাকে বিভিন্ন কিছু দিয়ে থাকে। ঐ প্রভাবশালীর সহযোগিতায় স্বপ্না এখন অপরাধ জগতের রানী হয়ে আছে। তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কেউ গেলে তাকে নির্যাতন করেন তিনি। এমনকি হত্যাও করা হয়। স্বপ্না বাহিনীর অত্যাচারে চনপাড়ায় নতুন কেউ ব্যবসা করতে পারে না। কেউ ব্যবসা করতে গেলে তার বাহিনী চেয়ে বসে চাঁদা। চাঁদা আদায় করে পিস্তল শরীফ। তাদের চাঁদা না দিলে ব্যবসা টিকে না। পিস্তল শরীফ প্লটের চাঁদাও উঠায়। বর্তমানে স্বপ্নার ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে শমসের , শাওন। ফেনসিডিল ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে ফেকান, শরীফ।
এদিকে লেডি স্বপ্নার পাপাচার থেকে মুক্তি চায় চনপাড়ার শিক্ষিত সমাজ। তারা এ ব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তারা লেডি ডন স্বপ্নাকে দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।