আজ শুক্রবার, ২৪শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো শামীম ওসমানের দাদার বাড়ি

সংবাদচর্চা রিপোর্ট:

আওয়ামী লীগের স্মৃতিবিজড়িত নারায়ণগঞ্জ শহরের ‘বায়তুল আমান’ ভবনটি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের দাদা খান সাহেব ওসমান আলীর মালিকানাধীন এ ভবনটিতে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন একাধিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে শহরের মিশনপাড়া এলাকা থেকে মহানগর বিএনপির একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটিতে নেতৃত্ব দেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্যসচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু।
মিছিলটি শহরের চাষাঢ়ায় বায়তুল আমানের সামনে এসে পৌঁছালে শুরুতে বড় আকারের হাতুড়ি দিয়ে ভবনটির দেয়াল ভাঙতে শুরু করেন লোকজন। পরে একটি বুলডোজার দিয়ে ভবনটি ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয়। ভবনটির ভেতরের একটি অংশে আগুনও দেওয়া হয়।
রাত সাড়ে আটটায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ভবনটি ভাঙার কার্যক্রম অব্যাহত ছিল। বাইরে বিএনপি নেতা-কর্মী ও উৎসুক জনতার উল্লাসও দেখা যায়। ঘটনাস্থলে থাকা বিএনপি নেতা আবু আল ইউসুফ খান টিপু সাংবাদিকদের বলেন, “খুনি হাসিনা ও তার ফ্যাসিস্ট দল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বছরের পর বছর মানুষের উপর জুলুম-নির্যাতন চালিয়েছে। শামীম ওসমান ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী অসংখ্য গুম, খুন করেছে। ওসমান বাহিনীর প্রতি মানুষের যে ক্ষোভ তা এই ভবনটি ভাঙার মধ্য দিয়ে সেই ক্ষোভের বহিপ্রকাশ ঘটেছে।” এর আগে দুপুর বারোটার দিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা আদালত, জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের বেশ কয়েকটি ম্যুরাল ও ভাস্কর্য ভাঙচুর করেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। এ সময়ও নেতৃত্বে ছিলেন বিএনপির ওই দুই নেতা। দুপুরেই ঘোষণা দেওয়া হয় সন্ধ্যার পর বায়তুল আমান ভবনটিও ভেঙে ফেলার। উল্লেখ্য, এই বাড়িতে বসে নারায়ণগঞ্জে ভাষা আন্দোলনের ছক আঁকতেন নারায়ণগঞ্জের ভাষা সংগ্রামীরা। ৫২ সালে এই বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও আন্দোলনে অংশ নেয়া একেএম সামসুজ্জোহা তার ভাই মোস্তফা সারোয়ারকে গ্রেফতার করে তৎকালীন পুলিশ ও ইপিআর বাহিনীর সদস্যরা। এছাড়াও আওয়ামীলীগ প্রতিষ্ঠা এবং স্বাধীনতার সংগ্রামে এই বাড়িটির অবদান রয়েছে। এই বাড়িতে বসেই আওয়ামীলীগ গঠণসহ বিভিন্ন আন্দোলনের রূপরেখা করেন শেখ মুজিবুর রহমান। শামীম ওসমানের দাদা খান সাহেব ওসমান আলী বাইতুল আমান নির্মাণ করেন। খান সাহেব ওসমান আলী ১৯৪০ সালের লাহোর রেজোলিউশনের ভিত্তিতে পাকিস্তান আন্দোলনের সূচনার সঙ্গে নারায়ণগঞ্জে এই আন্দোলনের আয়োজন করেছিলেন। ১৯৪৬ সালে তিনি বঙ্গীয় আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ঢাকার পঞ্চম ও শেষ নবাব খাজা হাবিবুল্লাহকে পরাজিত করেছিলেন। তিনি ব্রিটিশ সরকারের দ্বারা খান সাহেব উপাধিতে ভূষিত হন, যা তিনি ১৯৪৪ সালে ব্রিটিশ রাজ নীতিমালার জন্য বাতিল করেছিলেন। তিনি পূর্ব পাকিস্তানের অধিকাংশ বড় আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালের পূর্ব পাকিস্তানের অভ্যুত্থানে জড়িত ছিলেন।