সংবাদচর্চা রিপোর্ট:
বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া গত ১৪ মাস যাবৎ জেলহাজতে। দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে তিনি এখন জেল খাটছেন। তবে দেশের সকল স্তরের বিএনপি নেতাকর্মীদের দাবী, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার স্বীকার হয়ে তাদের নেত্রীকে বিনা কারণে সরকার জেল খাটাচ্ছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি দেশের অলিখিত প্রধান বিরোধী দল হিসেবে তাদের অসংখ্যা নেতাকর্মী থাকা সত্ত্বেও কাউকে মুখ খুলতে দেখা যায়না। আর মুখ খুললেও তা হয়তো মিডিয়ার সামনে নয়তো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে।
দেশের অন্যান্য জেলার চেয়ে জাতীয়তাবাদী দলের ভ্যানগার্ড খ্যাত একটা অংশ বলা হয় নারায়ণগঞ্জ বিএনপিকে। অথচ তারাই এখন ঝিমিয়ে পরেছেন। নেত্রীর মুক্তির দাবীতে তাদের খুজে পাওয়া মুশকিল অর্থ্যাৎ রাজপথ থেকে হারিয়ে গেছে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি। তবে তাদের মধ্যে থেকে যাকে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির অবিভাবক বলা হয়ে থাকে তিনি বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এড. তৈমূর আলম খন্দকারকে। নারায়ণগঞ্জ থেকে একাই নেত্রীর মুক্তির দাবীতে লড়ছেন তৈমূর। পাশে নেই বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দরা। এভাবে নেত্রীর মুক্তি কখনোই সম্ভব নয়; এমনটাই মনে করেন জেলার রাজনৈতিক বোদ্ধামহল।
কয়েকদিন পূর্বে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও চাহিদামত সুচিকিৎসার দাবীতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের কেন্দ্রীয় কর্মসূচী হিসেবে “গণতন্ত্র ও বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি আইনজীবি আন্দোলনের” উদ্যোগে সুপ্রীম কোর্ট প্রাঙ্গনে গত ৭ এপ্রিল প্রতিকী অনশন করেন তৈমূর আলম খন্দকার। কয়েকদিন পূর্বে আবার নারায়ণগঞ্জ কোর্ট প্রাঙ্গনে একি বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের আইনজীবিদের নিয়ে প্রতীকি অনশন করেন তারা। তৈমূরের নেতৃত্বে রাজধানীতেও প্রতীকি অনশন করেন বিএনপি সমর্থিত আইনজীবিরা। গতকাল বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ওই অনশন পালিত হয়।
সর্বোপরি কোর্টে আইজীবিদের নিয়ে অনশন, জেলার বিভিন্ন জায়গায় নেতাকর্মীদের নিয়ে সভা ও বৈঠক করে যাচ্ছেন তিনি। তার পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী পহেলা মে’র দিন ১০ হাজার লোক নিয়ে দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবী জানাবেন তিনি। নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র নেতাকর্মীরা সহ সর্ব স্তরের জণসাধারনকে নেত্রীর মুক্তির দাবীতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়েছেন তৈমূর। শুধু নারায়ণগঞ্জ নয় পুরো বাংলাদেশকে জাগাতে উঠে পরে লেগেছেন তিনি। দৈনিক সংবাদচর্চাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছিলেন তৈমূর আলম খন্দকার।
জানা যায়, খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবীতে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি’র একাধিক সিনিয়র নেতাকর্মী থাকা সত্ত্বেও তৈমূর আলম খন্দকার একাই লড়ছেন। তার সাথে এখানো নারায়নগঞ্জ বিএনপির কোন নেতাকর্মীকে দেখা যায়নি।
তবে তৈমূরের ভাষ্যমতে, অনেকেই যোগাযোগ করছে আবার অনেকেই করছে না। তিনি বলেছিলেন, আগামী পহেলা মে’র দিন আমি আশা করছি যে, ১০ হাজার লোক সমাবেত করবো। আমি তো চেষ্টার কোন ত্রুটি রাখছি না সব জায়গাতেই কথা বলছি। এখন খালেদা জিয়া জেলে, এখানে গোসা কিংবা গাল ফুলানোর কিছু নেই। রাগ করে বসে থাকার কিছু নেই। যেখানে কর্মসূচি দেয়া হবে খালেদা জিয়াকে ভালোবাসলে সবাইকে সেখানে উপস্থিত থাকতে হবে। দাওয়াতের কিছুই নেই। ওয়ান ইলেভেনের সময় খালেদা জিয়াকে জেলে নেওয়ার পরে তো আমরা বসে থাকি নাই। ইচ্ছাকৃতভাবে আমরা আটক হয়েছি।
তৈমূর আলম খন্দকার নেত্রীর মুক্তির দাবীতে আইনজীবিদের নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় অনশন করছেন। আগামীতে ১০ হাজার লোক নিয়ে সমাবেত হয়ে নেত্রীর মুক্তির দাবী জানানোর কথা জানিয়ছেন। আপনারা কী সেখানে যাবেন অথবা নেত্রীর মুক্তির দাবীতে আপনারা কী একত্রিত হবেন?
এমন প্রশ্ন জানতে চেয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামনকে মুঠোফোন করা হলে তার নাম্বার বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে ফোন ধরেননি বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির কেন্দ্রীয় সহ আন্তজার্তিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম ফোন ধরেননি। নাম্বার বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম, সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল, মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের সাথে।
প্রতিবেদকের উপরোক্ত প্রশ্নের প্রেক্ষিতে মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, আমরা বিএনপির রাজনীতি করি। কেন্দ্র থেকে আমাদের যে কর্মসূচী দেওয়া হবে আমরা সেই মোতাবেক কাজ করবো। কোন ব্যক্তির কর্মসূচী পালন করতে আমরা রাজি নাহ্!
সোনারগাঁ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম ভূইয়া মান্নান বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই।
চাইলেই তারা ঐক্যবদ্ধ হতে পারে এবং তাদের নেত্রীর মুক্তির দাবী জানাতে পারে। তাদের নেত্রী খালেদা জিয়া জেলে এটা তাদের ব্যর্থতা। আর তাদের ব্যর্থতার ফল পাচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া। তবে তৈমূর আলম খন্দকারের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তারা যদি ঐক্যবদ্ধ হতে পারে তাহলে তাদের নেত্রীর মুক্তির দাবী সেই সাথে পরিবর্তন আনাও সম্ভব হবে বলে মনে করেন জেলার সাধারণ মানুষ।