আজ বৃহস্পতিবার, ১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৮শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

খালেদার মুক্তির দাবিতে প্রকম্পিত ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশ

তাওসিফ মাইমুন: সরকারকে দেয়া সাত দফাই আদায় করতে চায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। তবে এর মধ্য থেকে কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এবার বেশি জোড় দিয়েছেন ড. কামালের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা।

মঙ্গলবার রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে আসা নেতাকর্মীরা জোড়ালোভাবে কারাবন্দি খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছেন। সমাবেশে ফ্রন্টের প্রায় সব নেতাই বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি তুলেছেন। সেই সাথে ৭ দফা দাবি না মেনে নিলে জোড়ালো আন্দোলন হবে বলেও সরকারকে হুশিয়ার করেছেন।
সমাবেশে ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা ড. কামাল হোসেন তার বক্তব্যে শুরুতে খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে বলেন, আমি খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই। তিন বারের প্রধানমন্ত্রীকে বন্দি করে রাখলে, বিরোধী দলের নেত্রীকে শ্রদ্ধা না জানালে গণতন্ত্র চলতে পারে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আগে খালেদা জিয়ার মুক্তি তারপর সবকিছু। সারা দেশে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৩শ ৭১টি মামলা হয়েছে। এসব চলতে পারে না।

তিনি বলেন, আগামীকাল(আজ বুধবার) ছোট একটা সংলাপের ডাক দেওয়া হয়েছে। এটা নিয়ে কোনো নাটক করা চলবে না। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকারের পদত্যাগ চাই। ৭ দফা আদায় করতে চাই।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, জোর করে কোনো নির্বাচন করা যাবে না। তারা যদি মনে করে, ডিসি এসপি দিয়ে আবার ১৪ সাল মার্কা নির্বাচন করবেন, এটা আর বাংলার মাটিতে হবে না। সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে।

সমাবেশে নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সরকার খালেদা জিয়াকে জেলে মেরে ফেলতে চায়। কিন্তু আমরা উনাকে জেলে পঁচতে দেবো না। জীবন বাজি রেখে হলেও খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব। ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবি আদায় না হলে রাজপথ প্রকম্পিত করে দাবি আদায় করা হবে।

সমাবেশে ড. কামাল সরকারের উদ্দেশ্যে বলেছেন, সকল দলের সঙ্গে আলোচনা করে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিতে হবে। সংবিধানের ১৬ আনা উপেক্ষা করে ক্ষমতার অপব্যবহার করা হচ্ছে। রাস্তা, বাস বন্ধ করে, জনগণকে উপেক্ষা করে নির্বাচন করা যাবে না।
তিনি বলেন, দেশে আইনের শাসন অনুপস্থিত। যাকে তাকে ধরে নেওয়া হচ্ছে। এ দেশের মালিক দেশের জনগণ। সকলের জন্য সমান আইন হতে হবে। সরকার ও বিরোধী দলের সমান সুযোগ থাকতে হবে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা যাবে না। এসব বন্ধ করতে হবে। স্বাধীন দেশে এসব চলতে পারে না। একদিন এর জবাব দিতে হবে।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ড.কামাল বলেন, দেশে গনতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হলে আপনাদেরকে আপোষহীনভাবে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।

সমাবেশে মির্জা ফখরুল আগাম কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে বলেন, সরকার আমাদের দাবি না মেনে নিলে ৮ তারিখে রাজশাহীর উদ্দেশ্য রোডমার্চ। ৯ তারিখে রাজশাহীতে জনসভা হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে খুলনা, বরিশাল, ময়মনসিংহ সারাদেশে জনসভায় করবো। এছাড়া নির্বাচন কমিশন যদি তফসিল ঘোষণা করে তাহলে আমদের নির্বাচন কমিশন অভিমুখে পদযাত্রা হবে।

কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রাজিব আহসান বলেন, বর্তমানে দেশে একটি অনির্বাচিত সরকার জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে এবং দেশনেত্রীর নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। বেগম জিয়ার মুক্তি ছাড়া এদেশে কোন নির্বাচন হবে না বলে হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন তিনি।

সমাবেশে কেন্দ্রীয় যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নীরব বলেন, সারা দেশের মানুষ এই ফ্যাসিবাদ সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। আমাদের আজকের সমাবেশ নেত্রীকে মুক্ত করার জন্য। তিনি সমাবেশে আগত সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একসাথে আন্দোলন করার আহবান জানান।

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন- বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, আসম আবদুর রব, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, মির্জা আব্বাস, শামসুজ্জামান দুদু, জয়নাল আবেদীন ফারুক, বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আহমেদ আযম খান, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আমান উল্যাহ আমান, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মাদ ইব্রাহিম প্রমুখ।