সংবাদচর্চা রিপোর্ট
দীর্ঘ এক যুগেরও বেশী ক্ষমতার বাইরে থাকা বাংলাদেশের অলিখিত প্রধান বিরোধীদল বিএনপি ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে চলে যাচ্ছিল। তবে বিলুপ্তির পথে থাকা সত্ত্বেও বিগত সময়গুলোতে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি জেলা থেকে বিভিন্নভাবে তারা দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছে।
অন্যান্য কিছু জেলাতে বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ করে আসলেও রাজপথে মামলা-হামলার ভয়ে আন্দোলন থেকে অনেকটা দূরে সরে ছিলেন নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা। তবে হঠাৎ করেই যেন উদয় হলো নারয়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের। কেন্দ্র থেকে যুবদলের কমিটি গঠন করার পরপরই হাজারো নেতাকর্মী নিয়ে রাজপথ কাপিয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদল।
এদিকে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তথা নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ নেতারা বিএনপিকে নিয়ে কোন চিন্তাভাবনাই করছেন না। নেত্রীর মুক্তির দাবীতে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো রাজপথ কাপানো জেলা যুবদলের বিষয় নিয়ে তারা এখনো পর্যন্ত কেউ মুখ খোলেননি। নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ থেকে কোন প্রেস বিফ্রিং তো দূরের কথা যুবদলের হুঙ্কারের বিষয়ে কেউ কোন বক্তব্যও প্রদান করেননি। নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ নেতারা নিজ নিজ কাজেই সবচেয়ে বেশী ব্যস্ত থাকে। তাদের মতে, বিএনপি আন্দোলন করছে করুক, নেত্রীর মুক্তি দাবী করছে করুক এতে পাল্টা বক্তব্যের কিছু নেই!
শুধুমাত্র নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান জনসভা কিংবা কোন মিটিং ডাকলেই উদয় হয় জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ অন্যান্য অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের। শামীম ওসমানের সভাসমাবেশ ছাড়া ব্যাক্তিগত কিংবা দলীয়ভাবে তাদের কোন আয়োজন লক্ষ্য করা যায় না। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় সমস্যা ঘরোয়া কোন্দল। তারা নিজেরা নিজেদের মধ্য কোন্দল সৃষ্টি করে এবং তা বর্তমানেও চলমান। আর সেই সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে রাজপথ দখলে ইতিমধ্যেই নেমে পরেছে জেলা যুবদল। নারায়ণগঞ্জ মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ব্যাক্তিস্বার্থের রাজনীতি কিংবা ঘরোয়া কোন্দলকে কাজে লাগিয়ে জেলা যুবদলের হাত ধরে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে বিএনপির দাপট লক্ষ্য করা যেতে পারে। জেলার সমসাময়িক রাজনীতি বিশ্লেষন করে এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তাদের মতে, কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবীতে জেগে উঠেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর যুবদল। দীর্ঘদিন হামলা মামলার কারণে রাজপথ থেকে অনেকটা দূরে সরে গিয়েছিলেন তারা। দীর্ঘদিন পর জেলা যুবদলের কমিটি ঘোষণার মধ্যে দিয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছে তারা। টানা দুইদিন তারা পুলিশ প্রশাসনের কথা চিন্তা না করে মামলা-হামলার কথা না ভেবে রাজপথ দখলে নেয়ার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে। সেই সাথে বিপুল পরিমাণ নেতাকর্মীর উপস্থিতিই জানান দেয় কোন্দল ও ব্যাক্তিস্বার্থের রাজনীতিতে থাকা নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের জন্য একটি বড় ধাক্কা আসতে চলেছে। কারণ জেগে ওঠা যুবদলের প্রেক্ষিতে তারা এখনো পর্যন্ত কোন প্রেস বিফ্রিং কিংবা মন্তব্য প্রদান করেনি। এটা ঠিক যে তারা তাদের নেত্রীর মুক্তি চাইতেই পারে কিন্তু তার পাশাপাশি সরকার বিরোধী বিভিন্ন বক্তব্য প্রদান করার পরেও নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মুখ থেকে এখনো পর্যন্ত কোন কথা বের হয়নি। এতে প্রমাণ হয় যে, নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দলীয় নয় নিজস্বার্থে রাজনীতি করে। আর বিলুপ্তির পথ থেকে আবারো মাথা চাড়া দিয়ে ওঠা বিএনপি নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের জন্য কাল হয়ে দাড়াতে পারে।
রাজনৈতিক বোদ্ধাদের মতে, নারায়ণগঞ্জ বিএনপি দূর্বল নয়। কিন্তু রাজপথে নামলেই মামলা-হামলার শিকার হতে হয় তাদের। নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে একাধিক মামলা রয়েছে। আর ঠিক সেকারনেই তারা রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করতে পারে না। কিন্তু কেন্দ্র থেকে জেলা যুবদলের কমিটি ঘোষণা করার পরপরই তারা একটি চমক দেখিয়েছে। টানা দ্বিতীয় দিনের মত তারা রাজপথে নেত্রীর মুক্তির দাবীতে আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন। এতে করে তাদের সাংগঠনিক শক্তি ও দলের প্রতি টান লক্ষ্য করা যায়। অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ব্যাক্তিস্বার্থ ও কোন্দল জনিত রাজনীতির প্রকাশ পায়।
বিলুপ্তির পথে থাকা বিএনপি হঠাৎ রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে সরকার বিরোধী কথা বলছে। আপনারা কেন এখনো পর্যন্ত কোন প্রেস ব্রিফ কিংবা পাল্টা জবাব দিলেন না কেনো? এমন প্রশ্ন জানতে চেয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাইকে মুঠোফোন করা হলে তিনি দৈনিক সংবাদচর্চার নিজস্ব প্রতিবেদককে বলেন, এখানে প্রেস ব্রিফ বা পাল্টা বক্তব্য দেয়ার কী আছে? ওনারা ওনাদের নেত্রীকে মুক্ত করে আনবে আনুক। এছাড়া যুবদল সরকার বিরোধী কথা বলবে এটা স্বাভাবিক। আমরা ওদের বিরুদ্ধে কথা বলবো এটাও স্বাভাবিক।
উপরোক্ত বিষয়ে একি প্রশ্ন করা হলে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, কীসের পাল্টা বক্তব্য? প্রেস বিফ্রিং কিংবা কোন মন্তব্যের কি আছে! তারা বিরোধী দল মাঠে নামতেই পারে তাদের নেত্রীর মুক্তির দাবী করতেই পারে। এখানে পাল্টা বক্তব্যের কী আছে, আমিতো বুঝলাম না। সরকার বিরোধী কথাবার্তা বলতাছে, তারা বিরোধী দল সরকার বিরোধী কথা বলতেই পারে। আমরাতো এইটা তাদের সাথে ঝগড়া করমু না মারামারি করমু না। আমাদের নেত্রীতো এই শিক্ষা আমাদের দেয় নাই। তাদের কথা তারা বলবো আমাদের রাজনীতি আমরা করতেছি। এটা পাল্টা বিবৃতি দেয়ার কী আছে। একটি রাজনৈতিক দল তার নেত্রীর মুক্তি চাইতেই পারে, মুক্তি চাইলেই তো আর মুক্তি হতে পারে না। এখানে তো ব্যাপার সেপার আছে। সরকার দেখবে, আইন দেখবে, কোর্ট দেখবে তার মুক্তির বিষয়ে।
সমসাময়িক রাজনীতি প্রেক্ষাপট বিশ্লেষনে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সাংগঠনিক শক্তির কমতি প্রকাশ পায়। তারা শুধু প্রয়োজনের সময় সভা সমাবেশে যুক্ত হয়। সেই সাথে দলীয় লোকদের বিতর্কিত সকল কর্মকান্ডগুলো জনসাধারণের সামনে উপস্থাপন করাই বর্তমান জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতি। বিরোধী দল কী করলো কী চাইলো এটা তাদের দেখার বিষয় না।
এভাবে চলতে থাকলে বিএনপির নেতাকর্মীরা ক্রমসই তাদের সাংগঠনিক শক্তি প্রদর্শন করবে। একসময় আন্দোলন করতে করতে তারা রাজপথ দখলে নিয়ে নিতে পারে। জেলা যুবদলের বিষয়ে খুব শীঘ্রই নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের মুখ খোলা প্রয়োজন।