সংবাদচর্চা রিপোর্ট:
নেতায় নেতায় কোন্দল এটা বাংলাদেশের রাজনীতির নতুন কিছু নয়। নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য এক নেতা অন্য নেতায় লেগে থাকে দ্বন্দ্ব, তৈরি হয় বিভাজন। আর নেতা, জনপ্রতিনিধিদের কোন্দলের কারনেই বিভিন্ন সময় দুর্ভোগ পোহাতে হয় সাধারণ মানুষকে। নারায়ণগঞ্জে দিন দিন জনদুর্ভোগ বাড়ছে, আর এই জনদুর্ভোগের মূল কারণ জনপ্রতিনিধিদের কোন্দলই বলে অভিযোগ করেছেন সাধারণ মানুষ।
সাধারণ মানুষ বলছে, অপরিকল্পিত নগরায়ন বাস্তবায়নে প্রাচ্যেরডান্ডি খ্যাত নারায়ণগঞ্জ দিন দিন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত হয়ে নারায়ণগঞ্জ এখন জনভোগান্তির নগরীতে পরিনত হয়েছে। তাই নারায়ণগঞ্জর সমস্যা নিরসনে রাজনীতিক, জনপ্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আন্তরিক হলে যে কোন ধরনের জটিল সমস্যা নিরসন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের ১ জন মন্ত্রী, সহ ৫জন এমপি রয়েছে, সিটি কর্পোরেশনের মেয়র উপমন্ত্রী পদ মর্যাদা প্রাপ্ত। কিন্তু বিভাজনের কারনে দৃশ্যমান উন্নয়ন হচ্ছে না। গত কয়দিন ধরে নগরীকে যানজট মুক্ত করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ। তবে যানজটের প্রধান কারণ শহরের অবৈধ পরিবহন স্ট্যান্ড উচ্ছেদে এখনো কোন দৃশ্যমান উদ্যোগ দেখা যায়নি। তবে শহরকে যানজন মুক্ত করার লক্ষ্যে তার চেষ্টা অনেকটা সফলতার মুখ দেখেছে। আর এ থেকে পরিস্কার হয়ে গেছে প্রশাসন, রাজনীতিক ও জনপ্রতিনিধিরা ইচ্ছে করলেই যে কোন সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে পারে।
জানা যায়, নারায়ণঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতিক) যিনি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী হিসাবে রয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু (যিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক)। নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য (জাতীয় পার্টির) লিয়াকত হোসেন খোকা। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের আলোচিত সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান। নারায়ণঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। যিনি বিকেএমইএ’র সভাপতি সহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী যিনি নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী চুনকা পরিবারের মেয়ে এবং উপমন্ত্রী । দেখা যায় নারায়ণগঞ্জের প্রত্যেক জনপ্রতিনিধিই প্রভাবশালী। যাদের সমন্বয় থাকলে নারায়ণঞ্জ প্রাচ্যেরডান্ডি হিসাবে পুনরায় গঠিত করা সম্ভব। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের মেরুকরনের রাজনীতির কারনে দল যেমন হচ্ছে বিভাজিত তেমনি উন্নয়নও হচ্ছে ধীর গতিতে।
যানজট নিয়ে যখন সাধারন মানুষ চরম বিরক্ত তখন এ নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। যানজট নিরসে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনকে দোষারোপ করা এবং যানজট নিরসনের দায়িত্ব নাসিকের নয় দাবি করে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া নিয়ে শুরু হয় বাক যুুদ্ধ। যা বিগত কয়েক বছর ধরেই চলে আসছে। বিগত সময়ে মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী যানজট নিরসনে কোন প্রকার উদ্যোগ না নিলে সাংসদ শামীম ওসমান ও সাংসদ সেলিম ওসমান বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নিলেও স্থায়ী ভাবে কোন সমাধান হয়নি।
জানাগেছে, যানজট, নদী দূষণ, পরিবেশ দূষণ, গ্যাসের সংকট, অপরাধ প্রবণতা ও সন্ত্রাসীদের দাপট বৃদ্ধি, রাজনীতির নামে সুবিধাবাদি নেতাদের ব্যবসা, বেহাল সড়ক, উন্নয়ণ কাজে ধীরগতি ও অনিয়ম, সরকারি দপ্তরগুলোতে সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষের ভোগান্তি, অপরিকল্পিত ভাবে যেখানে সেখানে বহুতল ভবন নিমার্ণ, গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা ছাড়া ভবন নিমার্ণ, শিশু শ্রমসহ নানা সমস্যার কারণে নারায়ণগঞ্জ বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে ।
নগরবাসীর মতে, নগরীর সমস্যা নিরসনে এগিয়ে এসে আন্তরিক ভাবে কাজ করলে নারায়ণগঞ্জ বসবাসের যোগ্য হবে বলে মনে করেন তারা।