স্টাফ রিপোর্টার :
যেকোনো সময়ে বিলুপ্ত হবে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি; এমন গুঞ্জন ছিলো আগে থেকেই। গতকাল সেই গুঞ্জনই সত্যি হয়েছে। সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন ও গোলাম ফারুক খোকনের নেতৃত্বাধীন জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে গতকাল। এবার নারায়ণগঞ্জের বিএনপি অঙ্গণে নতুন কমিটি নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে উঠেছে। কোন দুজনার কাঁধে তুলে দেয়া হবে নতুন কমিটির গুরুভার দায়িত্ব; তা নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে তৃণমূল কর্মীদের মাঝে।
যদিও জেলা বিএনপির নতুন নেতৃত্ব নিয়ে এরই মাঝে বেশ কয়েকজন পরিচ্ছন্ন ও অবস্থান সম্পন্ন সক্রিয় নেতাদের নাম চাউর হচ্ছে বিএনপি অঙ্গণে। যারা বেশ কিছুদিন আগে থেকেই নেতৃত্বের আলোচনায় ছিলেন।
এদিকে, নতুন নেতৃত্ব নিয়ে এরই মধ্যে যারা আলোচনায় এসেছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হলো জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান, সাবেক সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন, সাবেক আহবায়ক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক মাশুকুল ইসলাম রাজীব। এছাড়াও জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক এবং ফতুল্লা থানা বিএনপির বর্তমান সভাপতি শহিদুল ইসলাম টিটুকে নিয়েও চলছে আলোচনা। এর মধ্যে জেলা বিএনপির নেতৃত্বের জন্য ঠিক কাকে বেছে নিবে বিএনপির হাইকমান্ড, তা নিয়ে কৌতুহলের শেষ নেই তৃণমূলে।
বিশেষ একটি সূত্রের দেয়া তথ্য মতে, জেলা বিএনপির আহবায়ক বা সভাপতি পদ নিয়ে কিছুটা ধোয়াশা থাকলেও সাধারণ সম্পাদক বা সদস্য সচিব পদটি প্রাথমিক ভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে এই পদে দেখা যেতে পারে জেলা সাবেক আহবায়ক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক ও এক সময়ের তুখোর ছাত্রনেতা মাশুকুল ইসলাম রাজীবকে।
সূত্রটি বলছে, বিএনপির নীতিনির্ধারকদের ‘গুডবুকে’ রয়েছে রাজীবের নাম। বিশেষ করে, জেলা বিএনপির বিগত সম্মেলনে মাশুকুল ইসলাম রাজীব সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েও দলের ঐক্যের প্রশ্নে প্রার্থীতা থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। জায়গা করে দিয়েছিলেন সম্মেলনে তার এক মাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী গোলাম ফারুক খোকনকে। অথচ, সেক্রেটারি পদে নির্বাচিত হওয়ার দৌড়ে রাজীবের সমর্থকরা ছিলেন আশাবাদি।
তবে দলের ঐক্যবদ্ধতার প্রশ্নে সেদিন রাজীবের সেই ত্যাগ বা ‘স্বার্থবলি’ দেয়ার বিষয়টি নিজ চোখেই অবলোকন করেছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সম্মেলনে যুক্ত থেকে তারেক রহমান রাজীবের ওই ত্যাগকে বিরল দৃষ্টান্ত হিসেবে আখ্যায়িত করে তাকে প্রশংসায় ভাসিয়েছিলেন।
সূত্রটি বলছে, রাজীবের সেই ত্যাগের পুরস্কার স্বরুপ তাকে নতুন কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক বা সদস্য সচিব করা হবে বলে নীতিনির্ধারনি পর্যায়েও আলোচনা হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে রাজীবের কাঁধে উঠতে নেতৃত্ব যাচ্ছে।
যদিও নেতৃত্বের প্রশ্নে রাজীব দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেছেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের যেকোনো সিদ্ধান্তের প্রতি অনুগত তিনি।
এদিকে, রাজীবকে সাধারণ সম্পাদক করা হলে সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক পদে কাকে বেছে নিবে হাইকমান্ড, সেই আলোচনা এখন তুঙ্গে।
কারও মতে, আহবায়ক বা সভাপতি পদে ঘোষণা হতে পারে জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদের নাম। পরিচ্ছন্ন এবং সাংগঠনিক দক্ষতার বিচারে এই পদে তাকে এগিয়ে রাখছেন অনেকে।
তবে রাজনৈতিক বোদ্ধা মহল বলছেন, রাজীবকে সাধারণ সম্পাদক করা হলে নিকটতম এলাকা থেকে সভাপতি পদের জন্য কাউকে বেছে নেয়া না-ও হতে পারে।
এক্ষেত্রে সভাপতি বা আহবায়ক পদে দেখা যেতে পারে সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকনকে। জেলা বিএনপির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ন পদে নেতৃত্ব দেয়ার অভিজ্ঞতা থেকে নতুন কমিটির নেতৃত্ব উঠতে পারে তার কাঁধেও।
তবে, বিলুপ্ত হওয়া কমিটির সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় খোকনকে নতুন কমিটির নেতৃত্বে আনবে কিনা নীতি-নির্ধারকরা; তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে যাচ্ছেন অনেকে। এক্ষেত্রে সভাপতি বা আহবায়ক পদে জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহিদুল ইসলাম টিটুর নামও ঘোষণা হতে পারে বলে গুঞ্জন চলছে। মাঠের আন্দোলনে ছররা গুলিতে নিজের চোখ হারাতে বসা টিটুকে পুরস্কার স্বরুপ জেলা বিএনপির দায়িত্ব তুলে দেয়া হতে পারে বলে আলোচনা চলছে তার কর্মী সমর্থকদের মাঝে।
শেষ পর্যন্ত কোন দুজনার কাধে উঠতে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আগামীর নেতৃত্ব কিংবা তাদের বাহিরে অন্যকোনো চমক থাকছে কিনা, অথবা ঠিক কবে নাগাদ ঘোষিত হবে নতুন কমিটি; এমন নানা জল্পনা-কল্পনায় বিভোর তৃণমূর কর্মী এবং দলটির সমর্থকরা।