নিজস্ব প্রতিবেদক:
কখন কোন সাংসদ কোন কার্যালয়ে বা কার দপ্তরে যান তার হিসেব খুব বেশি হয়ত কেউ রাখেন না। তবে, নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জন কার্যালয় ও আদালত পাড়া একই এলাকায় বা কম্পাউন্ডের ভিতরে ভিন্ন ভিন্ন নিজস্ব ভবনে।
এখানে সকাল থেকেই গণমাধ্যমের কর্মীদের আনাগোনা থাকে। তাই কার কোথায় কখন কোন অফিসে আসা-যাওয়া সহজেরই নজর এড়ায় না। তাই বৃহস্পতিবার (১৯ এপ্রিল) বিকালে প্রভাবশালী সাংসদ শামীম ওসমানের গাড়ি যখন এসপি অফিসে প্রবেশ করে, সাথে সাথে তা চাউর হয়ে যায়।
একজন সংসদ সদস্য নানা প্রয়োজনেই জেলা পুলিশ প্রশাসনের কার্যালয়ে যেতে পারেন। অতি সম্প্রতি জেলা পুলিশ সুপার ও সাংসদের সাথে দূরত্ব সর্বত্রই আলোচনার খোরাক ছিল। দুজনের ইঙ্গিতময় পাল্টাপাল্টি বক্তব্য প্রায়দিনই গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।
বাংলা বছরের প্রথম দিন (১৪ এপ্রিল)। ওই দিন বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে পুলিশ সুপার ও সাংসদ দুপুরে একসাথে খাবার খান। সব সংশয় দ্বন্দ্ব দূরে ঠেলে নারায়ণগঞ্জবাসী আশার আলো দেখতে পায়। ওই দিনের পর ৪চার দিন আলোচনা স্বাভাবিকে আসে। কিন্তু বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে শহরময় আবার নুতন করে আলোচনা শুরু হয়। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে অফিস-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কিংবা বাসা।
কেননা, বৃহস্পতিবার (১৮এপ্রিল) দুপুরের দিকে আলোচিত কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবু ওরফে ডিসবাবুকে চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার করে ডিবি অফিসে নেয়া হয়। তিনি শামীম ওসমানের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত। আর তার গ্রেপ্তারের ৩/৪ ঘন্টার মধ্যে সাংসদ শামীম ওসমান পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে যাওয়াতে আলোচনাটা বাড়তে থাকে।
তবে, সাংসদ এসপি অফিসে কেন গিয়েছিলেন সে বিষয়ে কেউ কোন মুখ না খুললেও, সন্ধ্যার পর আলোচনা সমালোচনার প্যারমিটারটি কয়েক গুন বৃদ্ধি পায়। কেননা, কাউন্সিলর বাবুকে দুপুরে গ্রেপ্তার করে বিকালে আদালতে পাঠায় পুলিশ। আদালত বাবুকে কারাগারে পাঠিয়ে ৪দিন পর জামিন শুনানীর তারিখ নির্ধারণ করে দেয়।
প্রথমে যখন চাউর হতে থাকে, ‘সাংসদ শামীম ওসমান বাবুকে ছাড়াতে এসপি অফিসে। তখন সবাই একটা দ্বন্দ্বে ছিলেন। কি হয়, কী হয়!’ কিন্তু ডিবি অফিস থেকে বাবুর ছাড়া না পাওয়া এবং কারাগারে পাঠানোর খবরের পর আলোচনা সমালোচনায় ভিন্নতা আসে।
নগরবাসীর অনেকের প্রশ্ন কেন গিয়েছিলেন শামীম ওসমান? কেউবা বিশ্বাস করতে চাননি। আবার অনেকের মতে এসপির কাছে যাওয়া ঠিক হয়নি এই প্রভাবশালী এমপির।
আসলেই কেন গিয়েছিলেন সাংসদ শামীম ওসমান। এর সঠিক কোন জবাব পাওয়া যায়নি। কেননা কোন পক্ষই এ বিষয়ে মুখ খোলেননি।
তবে, এসপি অফিসের অনেকের সাথে আলাপচারিতায় জানা যায়, সাংসদ শামীম ওসমান আসলেও বেশি সময় ছিলেন না। দায়িত্বশীল কোন কর্মকর্তা এ বিষয়ে কিছু জানাতে রাজী হননি।
অসর্মথীত সূত্রে জানা যায়, প্রভাবশালী সংসদ সদস্য শামীম ওসমান।সরাসরি পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদের সাথে দেখা করেন।এসময় তিনি ডিসবাবুকে কেন গ্রেপ্তার করা হয়েছে তার কারণ জানতে চান।
জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, ডিসবাবুকে চাঁদাবাজির সুনির্দিষ্ট অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিভিন্ন সময় ডিসবাবুর বিরুদ্ধে নানা অপকর্মের অভিযোগ ভুক্তভোগীরা পুলিশকে জানিয়েছে।
শামীম ওসমান ওইসময় ডিসবাবুকে ছেড়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন। জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ছেড়ে দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। আপনারা আদালতে গিয়ে তাঁর জামিনের ব্যবস্থা করুন।
এর পর শামীম ওসমান আর দেরি করেন নি। অনেকটাই নীরবে পুলিশ সুপারের কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান।
অন্যদিকে শামীমপন্থী অনেক নেতার দাবী, একজন সাংসদ এর নানা কাজ। বাবুকে ছাড়াতে নয়, তিনি হয়ত ভিন্ন কোন কাজে গিয়েছেন।