আজ বুধবার, ১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কবে বসবেন, কবে নামবেন

সংবাদচর্চা রিপোর্ট:

দীর্ঘদিন নীরব থাকার পর হঠাৎ করে আবারও মাদক নিয়ে সরব হওয়ায় শহরেজুড়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। যদিও এর আগে ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে মাদক ও মাদক বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে জিহাদে নামার ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। আর সে সময় মাদক নির্মূল করতে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে বসার পাশাপাশি তাদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করার কথাও জানিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এই সাংসদ।
তবে, গত ৪ বছরেও এ ঘোষণার কোনো বাস্তবিক রূপ চোখে পড়েনি বলে দাবি রাজনৈতিক সচেতন মহলের। একই সাথে সর্বমহলেই প্রশ্ন উঠেছে এবার কী শামীম ওসমান মাঠে নামবেন নাকি এভাবে একের পর এক ঘোষণাই দিয়ে যাবেন।
জানা যায়, ২৮ সেপ্টেম্বর পবিত্র মক্কা থেকে এক ভিডিও বার্তায় শামীম ওসমান বলেন, আল্লাহর ঘরে দাঁড়িয়ে সবাইকে সালাম জানাচ্ছি। সবার জন্য মন খুলে দোয়া করছি। আপনারা দোয়া করবেন যাতে আমার হজ কবুল হয়। দেশবাসীর জন্য ও সকল মুসলিম উম্মাহর জন্য দোয়া করেছি। আপনারাও আমার জন্য দোয়া করবেন। এবার ওমরাহ থেকে ফিরে মাদক কারবার বন্ধের উদ্যোগ নেব। পুলিশের একার পক্ষে মাদক নির্মূল করা সম্ভব না। এ জন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, এই কাবা শরিফ ছুঁয়ে আমি ওয়াদা করেছিলাম নারায়ণগঞ্জ থেকে নিষিদ্ধ পল্লী উঠিয়ে দেব। আল্লাহ আমাকে কবুল করেছিলেন, শেখ হাসিনার অসিলায় আমি তা করেছি।
এর আগে ২০১৯ সালে বিশাল সমাবেশ আয়োজনের মাধ্যমে ঘটা করে মাদক বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন প্রভাবশালী এই সংসদ সদস্য। তবে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ আর মাদক মুক্ত সমাজ গড়া যে বাসনা শামীম ওসমান দেখছেন তার সাথে বাস্তব চিত্রের কোন মিল পাওয়া যাচ্ছেনা। এমনকি শহরের চাঁনমারী দিকে তাকালেও বুঝা যায় তার বক্তব্যের সাথে বর্তমান চিত্র কতটা সাংঘর্ষিক। এমকি পবিত্র ওমরাহ থেকে দেশে ফেরার বেশ কয়েকদিন অতিবাহিত হয়ে গেলেও শামীম ওসমানের তেমন তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।
রাজনৈতিক সচেতন মহলের মতে, এর আগেও শামীম ওসমান মাদক ও মাদক বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছিলেন। তখন তিনি বিভিন্ন এলাকায় সভা-সমাবেশে গিয়ে বলতেন, মাদক বিক্রেতাদের কোনো ছাড় নাই, কাউকে লাগবে না আমি শামীম ওসমান একাই যথেষ্ট। তিনি এও বলতেন মাদক বিক্রি করে ৪ তলা ভবন করেছেন, গুড়িয়ে দেবো। তবে তার এ বক্তব্যের বাস্তবিক কোনো রূপ পাওয়া যায়নি। অনেক দিন মাদক ও মাদক বিক্রেতাদের নিয়ে কোনো কথাও বলেননি। উল্টো তার বিভিন্ন সভা-সমাবেশে চিহ্নিত অনেক মাদক বিক্রেতাদের উপস্থিতি দেখা গেছে। সম্প্রতি পবিত্র ওমরাহ যাওয়ার আগে ও ওমরাহ থেকে আবারও মাদকের বিরুদ্ধে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। আর তার এ ঘোষণার পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে বলে মনে করছেন তারা। তাদের মতে, সামনে নির্বাচন আর তাই তিনি এই পুরোনো কৌশল কাজে লাগিয়ে সাধারণ মানুষের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি। একই সাথে মাদক কে ঢাল বানিয়ে বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় সভা-সমাবেশ করে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার পাশাপাশি নিজের দল ভারী করার সুযোগ খুঁজছেন।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজাম বলেন, সারা বাংলা দেশে মাদক এখন মহামারি অবস্থায় বিরাজ করছে। আর সেটা হুট করে বললেই শেষ হয়ে যায় না। তবে উনি (এমপি শামীম ওসমান) উনার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে এ বিষয়ে দিনক্ষণ বা সময় বেঁধে নামা যাবে না। কারণ, ঘোষণা দিয়ে নামলে মাদকের সাথে যারা সম্পৃক্ত ও সাহায্যকারী যারা আছে, তাদের পাওয়া যাবে না। তবে মাদকের বিরুদ্ধে মানুষকে কিভাবে সচেতন কর যায় সে লক্ষে মসজিদ কমিটি, পঞ্চায়েত কমিটি ও এলাকার মুরব্বিদের নিয়ে উনি কাজ শুরু করেছেন এবং সমাজ কে জাগ্রত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ফতুল্লা থানা যুবলীগের সভাপতি মীর সোহেল আলী বলেন, ইতিমধ্যে শামীম ভাই মাদক নির্মূলে কাজ শুরু করেছেন। কয়েকদিন আগেও এ বিষয় নিয়ে আমার সাথে কথা হয়েছে। তবে জানিয়ে বা দেখিয়ে নামলে তো মাদকের সাথে যারা জড়িত তারা সবাই সাবধান হয়ে যাবে। আর তাদেরকে ধরা কঠিন হয়ে পড়বে। আর মাদক চিরতরে নির্মূল করা উনার (এমপি শামীম ওসমান) একার পক্ষে সম্ভব না। এটা প্রশাসন থেকে শুরু করে বিভিন্ন ওয়ার্ড বা পাড়া মহল্লার নেতা কর্মী যারা আছেন সকলে মিলে উনাকে সাপোর্ট দিতে হবে। পাশাপাশি সমাজে যারা ভালো মানুষ, যারা মাদকের সাথে জড়িত না তারা সকলে মিলে যদি উনাকে সাহায্য করে তা হলে অবশ্যই মাদক নির্মূল করা সম্ভব।
এদিকে এমপি শামীম ওসমানের বিভিন্ন সভা-সমাবেশে চিহ্নিত অনেক মাদক বিক্রেতাদের উপস্থিতি দেখা যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, দেখা যেতে পারে, এমপি তো অনেক বড় ব্যাপার। এখন আমি ফতুল্লা থানা যুবলীগের সভাপতি, আমিও যদি একটা মিছিলে যাই তখন দুইটা মাদক ব্যবসায়ী আমার সাথেও এসে ছবি তুলতে পারে বা দেখা যেতে পারে কিন্তু আমরা তাদের চিনি না। তো একজন এমপি কয়জনকে চেনেন। আর এমপি যাদের চেনেন, তারা যদি মাদকের সাথে সরাসরি জড়িত থাকে ও মাদকের টাকা খায় তারা মানুষের বাচ্চা না এবং তাদের ব্যাপারেও উনি (এমপি শামীম ওসমান) শত ভাগ সচেতন হতে হবে। সে যত বড় নেতাই হোক তাকে কোনো প্রশ্যয় আশ্রয় দিবে না আর তা হলে এ সমস্যার সামাধান অনেকটাই করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

সর্বশেষ সংবাদ