সংবাদচর্চা রিপোর্ট:
দিনক্ষন এখনও অনেক দূর, তবুও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে আগাম কথাবার্তা চলছে নানা মহলে। এর মধ্যে মেয়র প্রার্থী নিয়ে আলোচনা হয় বেশী। কে মেয়র হবেন কিংবা কোন দল কাকে প্রার্থী করবেন এমন প্রশ্ন প্রতিদিনই কম বেশী উঠে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সিটি মেয়র নিয়ে বিরোধী দলকে যতটা না প্রতিদ্বন্দ্বি ভাবা হচ্ছে তার চেয়ে বেশী চিন্তা দলের ভেতরকার প্রার্থীকে নিয়ে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন কিছু হবে যা দেখে চমকে উঠবে নগরবাসী।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দুইবার মেয়র হয়েছেন সেলিনা হায়াৎ আইভী। প্রথমবার নাগরিক সমাজের ব্যাণারে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম ওসমানকে হারিয়ে, ২য় বার আওয়ামী লীগের মনোনয়নে বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানকে পরাজিত করে মেয়র হন তিনি। এর আগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০৩ সালে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী আমলাপাড়ার নূরুল ইসলাম সরদারকে হারিয়ে চেয়ারম্যান হন।
প্রথম নির্বাচনে শামীম ওসমান প্রতিদ্বন্দ্বি থাকলেও পরের নির্বাচনে তিনি আইভীকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে গণমাধ্যমকে দেখিয়েছিলেন। তার অনুগতদের মধ্যে অনেকেই আইভীর পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন। তবে নির্বাচনের আগে আইভীর দলীয় মনোনয়ন ঠেকাতে তৎপর ছিলেন শামীম ওসমান। দলীয় সূত্র জানায়, প্রথমে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ তৃণমূলের মতামত চেয়েছিলেন। যেহুতু সিটি নির্বাচন তাই মহানগর আওয়ামী লীগ সভা করে তিনজনের নাম কেন্দ্রে পাঠায়। সে তালিকায় আইভীর নাম ছিলো না। সে সময়ে এ প্রসঙ্গে শামীম ওসমান বলেছিলেন, সভায় উপস্থিত একজন যদি আইভীর নাম বলতো তো আমি তাকেই সমর্থন দিতাম। এমন বক্তব্যে তিনি বুঝাতে চেয়েছেন, মহানগর আওয়ামী লীগে আইভীর কোন অবস্থান নেই। এমন অবস্থায় কে পাবেন নৌকার মনোনয়ন তা নিয়ে আলোচনা যখন তুঙ্গে
তখন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী আইভী,শামীম ওসমানসহ নারায়ণগঞ্জের নেতৃবৃন্দকে ঢাকায় ডাকেন। সেখানে আইভীর হাতে নৌকার মনোনয়ন তুলে দিয়ে সবাইকে তার পক্ষে কাজ করার নির্দেশ দেন।
এদিকে এবার নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই আইভী ঠেকানোর কাজ শুরু হয়েছে বলে সূত্র জানায়।
সূত্র মতে, প্রথমে আইভীর মনোনয়ন ঠেকানোর চেষ্টা করা হবে। যদি তা সম্ভব না হয় তবে আইভীর প্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে কোন শক্তিশালী প্রার্থীকে সমর্থন দিবে প্রতিপক্ষ। এ ক্ষেত্রে সে দলের হবে না-কি অন্য দলের হবে তা ঠিক করা হবে পরিস্থিতির উপর। সূত্র আরও জানায়, ১৯৮৪ সালে নাজিম উদ্দিন মাহমুদকে প্রার্থী করে যেভাবে আলী আহাম্মদ চুনকাকে ঠেকানো গিয়েছিলো সেই পন্থার আপডেট ভার্সন সাজানোর চেষ্টা চলছে। এজন্য শহরের একাধিক সাংবাদিক, রাজনীতিক, ব্যবসায়ী নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।
জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, সে সময়ে মনোনয়ন ফরম কিনে নাজিম উদ্দিন মাহমুদকে চাষাঢ়ায় একটি বাড়িতে আটকে রাখা হয়েছিলো। মনোয়ন ফরম প্রত্যাহারের দিন পর্যন্ত তাকে সেই বাড়ি থেকে বের হতে দেয়া হয়নি। এ কাজে যারা জড়িত ছিলেন তাদের মধ্যে কেউ কেউ এখনও বেঁচে আছেন এবং তাদেরকে আইভীর পাশেও দেখা যায়। তবে নতুন খেলায় এ পুরনো খেলোয়ারদের কোন রকম সুযোগ থাকবে না বলে সূত্রটি জানায়।
আইভীর প্রতিপক্ষের সাথে যোগাযোগ রয়েছে এমন একজন রাজনীতিক জানান, খেলা অনেক আগেই শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে ঢাকায় মিডিয়া পাড়ায় আইভীর নামে নানা কথা ছড়ানো হয়েছে। তিনি মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেন না। সুফিয়ানকে এক লাফে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক করেছেন। সুফিয়ানের সর্বোচ্চ কর দেয়া ও অনেক সম্পদের বিষয়টিও প্রচার করা হয়েছে। শুধু প্রচার করেই ক্ষান্ত হননি তার পক্ষে নানা প্রমান যোগানোর কথাও বলেছেন ওই নেতা।
এ প্রসঙ্গে মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, আইভীর প্রথম নির্বাচনে দলের বিরুদ্ধে গিয়ে তার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন অধিকাংশ নেতা। ২য় নির্বাচনে দল মনোনয়ন দিলেও সেই নেতাদের মনোভাব খুব একটা পজেটিভ ছিলো না। দলের নির্দেশের কারনে তারা আইভীর পক্ষে কাজ করেছেন মাত্র। সে হিসেবে বলা যায়, এবার আরও কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে তাকে।
একজন সাংবাদিক নেতা জানান, ২০১১’র সিটি নির্বাচনে আইভীর পক্ষে মিডিয়া জোরালো ভূমিকা রেখেছিলো। নির্বাচনের পরও অনেক মিডিয়া তাকে হাইলাইটস করেছে। তবে পরবর্তীতে তিনি মিডিয়াকে দূরে ঠেলে দিয়েছেন। এবার তার প্রতিপক্ষ মিডিয়ার সহযোগীতা নিবেন বলে জানান তিনি। যদি তার এ মত মানতে নারাজ আইভী অনুসারীরা। তাদের মতে, মেয়র আইভী কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। মিডিয়ার অনেকে প্রতিপক্ষের পরামর্শে তাকে বিব্রত করতে চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে আইভী ঠেকাতে যে খেলা শুরু হয়েছে তার পক্ষে একমত পোষণ করেছেন তার অনুসারীরা।
বিশ্লেষকদের মতে, মেয়র পদে প্রার্থী নিয়ে অনেকের নাম উঠছে। তবে আইভীর প্রতিপক্ষ এবার অংকটা খুব ভালো করে কষবে বলে মনে হচ্ছে। যদিও অনেক কঠিন অংকের রেজাল্ট নিমিষেই সহজ করে দিতে পারে দলের হাই কমান্ড। বিশ্লেষকরা মনে করেন, প্রতিপক্ষ দলের কতিপয় নেতা দিয়ে তাদের উদ্দেশ্য সফল করার চেষ্টায় থাকবে। তবে দলের উচ্চ পর্যায়ে দলীয় রিপোর্ট, গোয়েন্দা রিপোর্ট যাচাই করেই সিদ্ধান্ত নিবেন। তবে চমকে যাওয়ার মতো সিদ্ধান্তও আসা অমূলক নয়।