আজ শনিবার, ২৭শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ওসমানদের প্রেসক্রিপশনে বিএনপিতে পদ!

বিশেষ প্রতিনিধি

তারা রাজনীতি করেন বিএনপির ছায়াতলে। দল ক্ষমতায় থাকলে সুযোগ সুবিধাও পান। আবার বিরোধী দলে গেলেও সুবিধাহীন থাকতে চান না। এ কারনেই ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী মহলের সাথে উঠবস করেন। তারাই ভাগ্য নির্ধারণ করে দেন নারায়ণগঞ্জের বিএনপি নেতাদের। গুঞ্জন উঠেছে, এবার জেলা বিএনপির সভাপতি হবে ওসমানদের প্রেসিক্রিপশনে!
১১ বছর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার চেয়ারম্যান হন বিএনপির জেলা সভাপতি ও ফতুল্লার আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস। তবে নামের মতো দলের সাথে কোন ধরনের বিশ্বাসী কর্ম নেই তার, এমন অভিযোগ খোদ দলীয় নেতাকর্মীদের। ২০১৪ সালে আরেকটি উপজেলা নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও মামলার কারনে তা হয়নি। যে রিটের জন্য উপজেলা নির্বাচন বন্ধ রয়েছে তার আবেদনকারী তিনজনই চেয়ারম্যান বিশ্বাসের লোক বলে জানা গেছে। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝেও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের এমপি শামীম ওসমানের ছায়ায় চেয়ারম্যান পদে আছেন বিএনপির আজাদ বিশ্বাস। কৃতজ্ঞতা স্বরুপ আজাদ বিশ্বাস শামীম ওসমানের মঞ্চে উঠে সরকারের গুণগান গেয়ে ভাষণ দেন। ওই মঞ্চে আওয়ামী লীগের নেতারা বিএনপি চেয়ারপার্সনকে নিয়ে বিব্রতকর কথাবার্তা বললেও তিনি তার কোন প্রতিবাদই করেননি।
                        আইভীকে ইঙ্গিত দিয়ে যা বললেন শামীম ওসমান

মহানগর বিএনপির সহ সভাপতি আতাউর রহমান মুকুলের ব্যক্তি জনপ্রিয়তা রয়েছে তবে ২য় বারের মতো বন্দর উপজেলা চেয়ারম্যান হতে তিনি সেলিম ওসমানের আশীর্বাদ নিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী জাতীয় পার্টির এ এমপির সাথে তার দহরম মহরম একেবারেই ওপেন সিক্রেট। ক্ষমতাসীন দলের মঞ্চে তাকেও দেখা গেছে। এমনকি আওয়ামী লীগের এক নেতা এ বিএনপির নেতার সামনে তার দলের প্রতিষ্ঠাতাকে কুকুর বলে গালি দিলেও তিনি তা ঢোক গিলে হজম করেছেন।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর শওকত হাসেম শকুর প্রতি সেলিম ওসমানের একটু ভিন্ন রকম টান আছে। ‘৭৫ এর নির্মম হত্যাকান্ডের ঘটনায় শকুর সেনা কর্মকর্তা ভাইয়ের নাম জড়িয়ে থাকলেও তার প্রতি ¯েœহের কোন কমতি নেই মাঝে মধ্যে নৌকার স্লোগান দেয়া জাতীয় পার্টির এ এমপির। দলীয় সূত্র জানায়, শকুর ওয়ার্ডে মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন ভূঁইয়া সাজনু কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করেছিলেন, ফের করতেও চেয়েছিলেন। তবে তাকে নিষেধ করেছেন সেলিম ওসমান। তিনি সাফ বলেছেন, এখানে শকুই প্রার্থী হবে।
ফতুল্লার কুতুবপুর ইউনিয়নের একাধিকবারের চেয়ারম্যান মনিরুল আলম সেন্টুর উপরও ওসমান পরিবারের ছায়া আছে। তাকেও শামীম ওসমানের মঞ্চে উঠে ক্ষমতাসীন দল ও এমপির প্রশংসা করতে দেখা গেছে। ফতুল্লা থানা বিএনপির এ নেতা গতবার ওসমান পরিবারের আশীর্বাদ পেয়েই চেয়ারম্যান হয়েছেন বলে জানা গেছে।
প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের সাথে এ নেতাদের সম্পর্কের কথা জানাজানি হলেও বিএনপির আরও অনেক নেতা তাদের সাথে যোগাযোগ রাখেন বলে শোনা যায়। ২০১৬ সালের নাসিক নির্বাচনের পর বিএনপি নেতা আবু আল ইউসুফ খান টিপু আরেক বিএনপি নেতা ও সিটির প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান সম্পর্কে গুরুতর অভিযোগ তুলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, সাখাওয়াত নির্বাচনের জন্য ওসমান পরিবারের কাছ থেকে ২ কোটি টাকা নিয়েছেন। যদিও এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আলোচিত সাত খুন মামলার সাহসী আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন খান।
সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের উপ নির্বাচনে বিএনপির কতিপয় নেতা সেলিম ওসমানের পক্ষে কাজ করেছেন। দলীয়ভাবে তারা ওই নির্বাচন বয়কট করলেও গোপনে সেলিম ওসমানের কাছ থেকে ‘সুবিধা’ নিয়েছেন। উভয় পক্ষের এ দেয়া-নেয়ার মাঝে ছিলেন ফতুল্লার আলোচিত শিল্পপতি মোহাম্মদ আলী।
দলীয় সূত্র জানায়, সদ্য বিলুপ্ত জেলা বিএনপির নতুন কমিটি গঠনে ওসমান বলয়ের বিএনপি নেতারা মাঠে নেমেছেন। তারা ওসমানদের টাকায় শীর্ষ পদ কিনতে দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন। সূত্রটি আরও জানায়, ইতিমধ্যে এ নিয়ে ভাইদের সাথে কথাবার্তাও পাকা। টাকা ছড়িয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হওয়ার আশায় ইতিমধ্যে অনেকেই ওসমান পরিবারে লাইন দিয়েছেন।