এস এম রিফাত:
নারায়ণগঞ্জ ছাত্রদলের চলমান কোন্দলকে ঘিরে সংগঠনটির সাংগঠনিক শক্তি ক্রমসই কমে যাচ্ছে। একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ আর অনাস্থার কারণে ছাত্রদলের ভবিষ্যত রাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক বোদ্ধামহলে। এভাবে চলতে থাকলে বিএনপির ভ্যানগার্ড এই সংগঠনটিকে ভবিষ্যতে রাজপথের মিছিল-মিটিংয়ে ঠিক মতো ব্যবহার করা যাবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে জেলার সিনিয়র নেতাকর্মীরা।
সম্প্রতি জেলা ছাত্রদল সভাপতি মশিউর রহমান রনির অব্যহতির দাবীতে কেন্দ্রে আবেদন পাঠিয়েছেন ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা। জেলা ছাত্রদলের সহ সভাপতি আরিফুর রহমান মানিক বিষয়টি দৈনিক সংবাদচর্চাকে নিশ্চিত করেছেন। একই আবেদনে স্বাক্ষর দিয়েছে মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মমিনুর রহমান বাবু, সিনিয়র সহ-সভাপতি রাফিউদ্দীন রিয়াদ, সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ মাগফুর ইসলাম পাপন এবং জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রফিক, রাকিব হাসান রাজ, নাজমুল হাসান বাবু, মেহেদী হাসান, সহ-সভাপতি আরিফুর রহমান মানিক।
সূত্রানুযায়ী, ২০১৮ সালের ৫ জুন মশিউর রহমান রনিকে সভাপতি ও খাইরুল ইসলাম সজীবকে সাধারণ সম্পাদক করে ১২ সদস্যের আংশিক কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয় নারায়ণগঞ্জে জেলা ছাত্রদলে। কমিটিতে আরও ছিলেন সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ, সহ-সভাপতি আরিফুর রহমান অনিক, যুগ্ম-সম্পাদক ইসমাঈল মামুন, মাইনুল ইসলাম রশিদ, নাজমুল হাসান বাবু, মশিউর রহমান শান্ত, রাকিব হাসান রাজ, রফিকুল ইসলাম রফিক ও সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল মিয়া। আংশিক কমিটি ঘোষনার পর থেকেই দুই ভাগে বিভক্ত হতে থাকেন নেতাকর্মীরা। আর এ জন্য সেসময় তৃণমূল দায়ী করেন জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক খায়রুল ইসলাম সজিবকে। রনির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নানা ধরনের অপপ্রচার এবং দলীয় কর্মসূচিও আলাদা পালন করছেন সজিব।
দলীয় সূত্র মতে, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি-সেক্রেটারির এই কোন্দল ছাড়া আর কোন সমস্যা বিদ্যমান ছিলো না নারায়ণগঞ্জ ছাত্রদলে। কেন্দ্র থেকে যখন যেভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে ঠিক সেভাবেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করেছেন জেলা ও মহানগরের নেতাকর্মীরা। তবে, হঠাৎ করেই মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি সাহেদ আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক মমিনুর রহমান বাবু এবং সহ সভাপতি হামিদুর রহমান সুমনের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি হয়। আর এ নিয়ে আলাদা আলাদা কর্মসূচী পালন করতে দেখা গেছে তাদের। এবার জেলা ও মহানগর ছাত্রদল বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী মিলে অভিযোগ তুলেছেন রনির বিরুদ্ধে।
যারা আজ একে অন্যের বিরুদ্ধে আঙুল তুলছেন, বছর খানেক এই নেতারাই একজন আরেকজনের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে রাজপথে মিছিল করেছেন। কেন্দ্র থেকে যখন যেভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে নারায়ণগঞ্জ ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ঠিক সেভাবেই সেই দায়িত্ব পালন করেছেন। হঠাৎ করে কি কারণে তাদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি হলো তা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে শহরজুড়ে।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রদল নেতা মাসকুল ইসলাম রাজিব সংবাদচর্চাকে বলেন, যেকোন বিষয়ের ক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধতা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সুসংগঠিত থাকলে যেকোন কাজ সহজেই করা যায়। নারায়ণগঞ্জ ছাত্রদলের মধ্যে কোন্দল, বিভাজন আমাদের কাম্য নয়। আমি চাই ঐক্যবদ্ধ থেকে তারা কেন্দ্রীয় নির্দেশনা পালন করুক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপিকে বাঁচিয়ে রেখেছে ছাত্রদল। মাঠ পর্যায়ে তাদের মতো সময় অন্য কোন সংগঠনই দেয় না। তুলনামূলক ভাবে আন্দোলন, সংগ্রাম এবং দলের প্রয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন নেতাকর্মীরা। তাই দলকে ধ্বংসের পথে টেনে না আনতে চাইলে অচীরেই তাদের ঐক্যবদ্ধতা প্রয়োজন। কারণ ছাত্রদলের ঐক্যবদ্ধতায় লুকিয়ে আছে বিএনপির পরিবর্তন।