সংবাদচর্চা রিপোর্ট
দিন দিন অশান্ত শহরে রুপ নেয়া নারায়ণগঞ্জ ধীরে ধীরে শান্ত হতে চলেছে। জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদের যোগদানের পর তার নেত্বতেৃ প্রশাসনের তৎপরতায় নগরীতে মাদক, সন্ত্রাস, চাদাঁবাজী অনেকটাই কমে এসেছে। পুলিশের এসকল ভালো কাজে তাদের বাহবা, উৎসাহ না দিয়ে প্রভাবশালী ও তাদের ছত্রছায়ায় থাকা নেতাকর্মীরা প্রশাসনকে আরও উস্কে দিচ্ছে। সেই সাথে নানা উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পরছে। প্রশাসনের চাপে নগরীর সকল অবৈধ কর্মকান্ড প্রভাবশালীদের হাত থেকে ছুটে যাচ্ছে। যার ফলে উত্তর মেরুর নেতাকর্মীরা তাদের গা-বাঁচাতে মরিয়া। অন্যদিকে দক্ষিণ মেরু অর্থ্যাৎ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন মেয়র আইভী বলয়ে বইছে স্বস্তির হাওয়া। কারণ দক্ষিণ মেরু তথা আইভী বলয়ে কোন নেতাকর্মীদের নামে কোন বিতর্কিত কর্মকান্ড নেই। সেই সাথে মাদক, সন্ত্রাস ও চাদাঁবাজিতে তাদের কারও নাম নেই বললেই চলে। সেক্ষেত্রে প্রশাসনের এরকম কর্মকান্ডে তাদের চুপ থাকাটাই স্বাভাবিক।
এসপি হারুন অর রশিদের যোগদান অতঃপরঃ
নগরীতে এসপি হারুন অর রশিদ যোগদানের পর প্রভাবশালীদের দখলে থাকা নগরীর বেশকিছু অবৈধ স্ট্যান্ড উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। একই সাথে ফুটপাতে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ চুরি করে রমরমা ব্যবসাও বন্ধ করা হয়। শহরের অলি-গলিতে বিভিন্ন মাদক স্পটসহ জুয়ার আসর বন্ধ করা হয়। হারুন অর রশিদ যোগদানের পর সকলের উদ্দেশ্যে বলে দেন যে, অবৈধভাবে কাজ করলে কোন ভাইয়ের হাত মাথায় থাকলেও কাজ হবে না। অন্যায় যে করবে সে শাস্তি পাবে। আইন আইনের গতিতে চলবে কারণ আইনের উর্ধ্বে কেউ নয়। আইন সকলের জন্য সমান। আর ঠিক সেই অনুসারে একের পর এক কাজ করে নারায়ণগঞ্জবাসীর মন জয় করে নিয়েছেন তিনি। বলাচলে নগরবাসীর মাথার তাজ বনে গেছেন বর্তমান এসপি।
উত্তর মেরু গা-বাঁচাতে মরিয়াঃ
গত ২২ মার্চ ফতুল্লার রামারবাগ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কথিত আওয়ামী লীগ নেতা গিয়াস উদ্দিন ওরফে কাইল্লা গেসু ও কথিক যুবলীগ নেতা আজমত গ্রুপের সাথে একই এলাকার মোস্তফা গ্রুপের সাথে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় ফতুল্লা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। প্রশাসনের তৎপরতায় ওই এলাকাতে সন্ত্রাসীরা বর্তমানে প্রভাববিস্তার তো দূরের কথা তাদের গা-বাঁচাতে মরিয়া। এদিকে ছেলেকে ফিরে পাওয়ায় আসায় গত মাসে করা এক মানববন্ধনে অপহৃত শিশু সাদমান সাকির বাবা এপন দাবী করেন, ১৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাজমুল আলম সজলসহ ছয়জন তার ছেলেকে অপহরণ করেছে। সেই সাথে তিনি আরও বলেন, কাউন্সিলর সজল নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের লোক বলে তাকে ধরা হচ্ছেনা। একি সাথে ছেলেকে ফিরে পাওয়ার আশায় পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদের কাছে সাকিকে উদ্ধারের দাবী জানান তিনি। এর পরপরই গা-বাঁচাতে নাজমুল আলম সজল সাংবাদিকদের সাথে সংবাদ সম্মেলন করে টানা দুইদিন ওই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান। ওই ঘটনার কিছুদিন পর মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজামের এক বক্তব্যে পুরো নারায়ণগঞ্জে আলোচনার ঝড় বয়েছিলো। একটি অনলাইন পোর্টালের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে নিজাম বলেছিলেন, শামীম ওসমান থাকলে প্রশাসনের প্রয়োজন হয় না। তার এই বক্তব্যের পর তীব্র সমালোচনা চলতে থাকে পুরো নারায়ণগঞ্জ জুড়ে। এর পরপরই শাহ নিজামের বিরুদ্ধে থানার সদ্য সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঞ্জুর কাদের একটি জিডি করেন। শহরজুড়ে আলোচনা চলতে থাকে যে, কমিউনিটি পুলিশের সাধারণ সম্পাদক হয়ে তিনি কীভাবে এমন বিরুপ মন্তব্য করতে পারেন। এরপর গা-বাঁচাতে ভারত চলে যাওয়ার কথা চিন্তা করে নিজের একাউন্টে একটি স্ট্যাটাস দেন শাহ নিজাম। পরবর্তীতে অবশ্য সে স্ট্যাটাস তুলে নেন তিনি। সবশেষ পাগলার মেরিএন্ডারসনে পুলিশ সুপার হারুন রশিদের নির্দেশে মাদক বিরোধী অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ মাদক এবং অসংখ্যা মাদকসেবী গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে শামীম ওসমানের শ্যালক তানভীর আহমেদ টিটুর নামও চলে আসে। এরপর আবার স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারের সন্তান নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল ব্যবসায়ীদের নিয়ে কাউন্সিলর সজল ও শামীম ওসমানের শ্যালক টিটুকে সৎ ব্যাক্তি হিসেবে প্রকাশ করে প্রশাসনকে আল্টিমেটাম প্রদান করে। পরে অবশ্য তার আল্টিমেটাম থেকে তিনি সরে আসেন। কিন্তু আগামী ৭ এপ্রিল জেলা প্রাশাসক বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হবে বলে তিনি জানান। সবমিলিয়ে পুলিশ সুপারের তৎপরতায় ওসমান বলয়ের নেতাকর্মীদের ঘুম হারাম হয়ে যাচ্ছে সেই সাথে গা-বাচাঁতে তারা উঠে পরে লেগেছে। এমনটাই মনে করছেন জেলার সচেতন মহলের লোকজন।
দক্ষিণে স্বস্তির হাওয়াঃ
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত দুই মেরুর অন্যতম দক্ষিণ মেরুর নেতাকর্মীদের মধ্যে বইছে স্বস্তির হাওয়া। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন মেয়র আইভী ও তার বলয়ের নেতাকর্মীরা অনেকটাই চুপচাপ। কারণ তাদের বিরোধী অর্থ্যাৎ উত্তর মেরুর নেতাকর্মীরা এমনিতেই নানান চাপের মধ্যে রয়েছে। প্রশাসনিক তৎপরতায় তাদের ইতিমধ্যেই দৌড়ঝাপ শুরু হয়ে গেছে। এছাড়া শহরের অবৈধ কোন কার্যকলাপে আইভী বলয়ের নেতাকর্মীদের নাম নেই বললেই চলে। সে হিসেবে প্রশাসনের চাপে তাদের চুপ থাকাটাই স্বাভাবিক। আর ঠিক সেটাই করে যাচ্ছেন তারা। সেই সাথে প্রশাসনের কাজের সাথে তালমিলিয়ে তাদের উৎসাহ প্রদানও করছেন তারা। সবমিলিয়ে প্রশাসনের অভিযান ও তৎপরতায় দক্ষিণ মেরু অর্থ্যাৎ আইভী বলয়ে স্বস্তির হাওয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
রাজনৈতিক বোদ্ধাদের মতে, যে যেমন করবে সে তেমনই ফলভোগ করবে, এটা স্বাভাবিক। আর সে বিষয়টা ভালো হোক আর খারাপ। ভালো কাজ করলে সকলের কাজ থেকে বাহবা পাওয়া যায় আর রাষ্ট্রবিরোধী তথা খারাপ কাজের সাথে যুক্ত থাকলে সবসময় দৌড়ঝাপের উপরই থাকতে হয়। সেই হিসেবে উত্তর মেরুর সকল কর্মকান্ডতেই বিতর্ক রয়েছে আর যার কারণে প্রশাসনের ভালো কাজের পক্ষে না থেকে তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন উস্কানি মূলক বক্তব্য প্রদান করে যাচ্ছেন তারা। যেভাবে দক্ষিণ মেরুর লোকজন প্রশাসনের পাশে রয়েছে সেভাবে যদি উত্তর মেরু লোকজন প্রশাসনের সাথে থেকে তাদের বাহবা দিতো তাহলে অচিরেই নারায়ণগঞ্জ থেকে মাদক, সন্ত্রাস, চাদাঁবাজীসহ যেসকল অসামাজিক কর্মকান্ড হয় তা বন্ধ হয়ে যেতো।