সংবাদচর্চা রিপোর্ট
বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোটের আমলে যে ক’জন সক্রিয়ভাবে আওয়ামীলীগের রাজনীতি করেছেন তাদের মধ্যে আব্দুল কাদির অন্যতম। জেলা আওয়ামীলীগের এই সহ সভাপতি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান হতে গিয়ে দলের ভেতরই ধাক্কা খেয়েছেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন তবে পাননি। তাই বলে মনোবল হারাননি এই মুক্তিযোদ্ধা। তার অনুগত ও রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, দল নারায়ণগঞ্জে প্রবীণদের মূল্যায়ণ করছেন। যা দেখে মনে হয় এবার ‘কাদির ভাইয়ের পালা’।
সূত্র মতে, এক সময়ে ছাত্র-যুব রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও ‘৭৫ এর পর আবদুল হাই আওয়ামীলীগে তেমন সক্রিয় ছিলেননা। পত্রিকা এজেন্ট ব্যবসার পাশাপাশি দলের কার্যালয়ে মাঝে মধ্যে তাকে দেখা যেতো। তবে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন প্রভাবশালী নেতার সাথে তার হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক ছিলো। আর এই সুবাদেই নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রশাসক হন তিনি। এই পদ পাওয়ার পর অনেকেই তাকে চিনতে পারেননি।
২০১৬ সালের নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে মহানগর আওয়ামীলীগ থেকে তিনজনের নাম কেন্দ্রে প্রস্তাব করা হয়। তাদের মধ্যে মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন অন্যতম। তবে দলীয় সভানেত্রি শেখ হাসিনা মেয়র পদে সেলিনা হায়াৎ আইভীকে বেছে নেন। দলীয় মনোনয়ন আইভীর হাতে তুলে দেয়ার আগে গণভবনে ডেকে নেয়া হয় নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন নেতাকে। এরমধ্যে শামীম ওসমানও ছিলেন। দলীয় সভানেত্রি তাদের নৌকা’র পক্ষে কাজ করতে নির্দেশ দেন। সূত্র মতে, ওইদিন গণভবনে উপস্থিত আনোয়ার হোসেন কিছুটা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, এতদিন দল করে কি পেলাম। তিনি কিছুটা আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। পরে অসুস্থ হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আর হাসপাতালের বেডে বসেই খবর পান তিনি পরবর্তী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হচ্ছেন। ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আনোয়ার হোসেন চেয়ারম্যান হন।
গত ১৮ জুন অনুষ্ঠিত হলো বন্দর উপজেলা নির্বাচন। স্থানীয় আওয়ামীলীগের দায়িত্বপ্রাপ্তরা চেয়ারম্যান পদে তিনজনের নাম কেন্দ্রে পাঠান। তারা হলেন, জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ান, বন্দর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি এমএ রশীদ ও মদনপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান এমএ সালাম। নানা ঘটনার পর শেষতক আওয়ামীলীগ তরুণ সুফিয়ান ও সালামকে বাদ দিয়ে প্রবীণ এমএ রশীদকেই বেছে নেন। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর অন্য কেউ যাতে নির্বাচন না করে সেদিকেও খেয়াল রাখেন স্থানীয় আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী মহল। যার কারনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবার বন্দর উপজেলার চেয়ারম্যান হয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা এমএ রশীদ।
ওয়ান ইলেভেনের পর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেতে ক্ষমতায় আসে আওয়ামীলীগ। এর মাসখানেকের মধ্যেই নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তখন স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের বিষয় ছিলোনা। তাই আওয়ামীলীগ থেকে চেয়ারম্যান পদে আব্দুল কাদির ছাড়াও, আনোয়ার হোসেন ও আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল (ভিপি বাদল) প্রার্থী হন। সূত্র মতে, কাদির ও আনোয়ার প্রার্থী হওয়ার পর ভিপি বাদলকে নির্বাচন করতে বলেন ওসমান পরিবার। এক দলের তিনজন প্রার্থী হওয়ায় অপেক্ষাকৃত দুর্বল হয়েও বিএনপির প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস খুব অল্প ভোটে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান হন।
ওই নির্বাচনে আওয়ামীলীগের তিন প্রার্থীর মধ্যে আব্দুল কাদির বেশী ভোট পেয়েছিলেন। দলীয় সূত্র জানায়, আব্দুল কাদির খুব অল্পবয়সে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। ইউনিয়ন ছাত্রলীগ থেকে রাজনীতি শুরু করে জেলা যুবলীগের সভাপতি হয়েছেন। বর্তমানে তিনি জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি। একজন ক্লিনমেন রাজনীতিক হিসেবেও তার সুনাম রয়েছে। কাদির অনুগতদের মতে, ‘কাদির ভাই একজন সরল মানুষ।
তিনি দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ। দল যেভাবে প্রবীণদের মূল্যায়ন করছেন সে হিসেবে এবার কাদির ভাইকেও মূল্যায়ন করা হবে’। রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলেন, আব্দুল কাদিরের রাজনীতিময় জীবন স্বচ্ছ। তার মতো ক্লিন ইমেজের নেতাদের দল ইদানিং বেছে বেছে বিভিন্ন পদে আসীন করছেন।