সংবাদচর্চা রিপোর্ট:
অবশেষে নারায়ণগঞ্জে অভিযানে নামতে যাচ্ছে রাজউক। আগামী ১০ মার্চ থেকে শহরের ‘অবৈধ’ রেস্টুরেন্ট ও নিয়ম বহির্ভূত ভবনগুলোতে নিয়মিত অভিযান শুরু করার কথা জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির নারায়ণগঞ্জ জোনের পরিচালক। সেই লক্ষ্যে করা হয়েছে তথ্য সংগ্রহ। গতকাল এমন তথ্য জানিয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাজউক-৮ জোনের পরিচালক ইয়াহ হিয়া খান দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেছেন, নিয়ম বহির্ভূত ভবন ও রেস্টুরেন্ট সহ অবৈধ স্থাপনার বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিবেন তারা।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের আবাসিক ভবনগুলোতে অবৈধ ভাবে পরিচালিত হচ্ছে বিভিন্ন অভিজাত রেস্টুরেন্ট। ভবনগুলোতে নেই ফায়ার সেফটি ব্যবস্থাও। সিংহভাগ রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ ঝুঁকিপূর্ন ভাবে গ্যাসের সিলিন্ডার ব্যবহার ও মজুদ করে রেখেছেন রেস্টুরেন্ট ও সংশ্লিষ্ট ভবনে। এরই মাঝে ঢাকার বেইলি রোডের একটি ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রায় অর্ধশত মানুষ প্রাণ হারায়। ওই ভবনে থাকা ‘কাচ্চি ভাই’ রেস্টুরেন্ট থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত এবং রান্নার কাজে ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডারের বোতল থেকে বিস্ফোরণের কারণে তা জ¦লন্ত চিতায় পরিণত হয়। এর পরই আলোচনায় আসে নারায়ণগঞ্জের রেস্টুরেন্ট এবং সংশ্লিষ্ট ভবনগুলো।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ধনকুবদের এই জেলায় গত বেশ কয়েক বছর ধরেই রেস্টুরেন্ট ব্যবসা বেশ জমজমাট। শহরের ভাষা সৈনিক সড়ক তথা বালুর মাঠ এলাকা যেন রেস্টুরেন্ট পল্লীতে পরিণত হয়েছে। ব্যবসা সফল হওয়ায় ঢাকা থেকে একে একে কাচ্চি ভাই, সুলতান ডাইন, স্টার লাউঞ্জ, ডাইনিং লাউঞ্জ, গ্রীন ভ্যালী, ক্রুশ স্টেশন, ক্রাউন রেস্টুরেন্ট ও বাফেট, দাওয়াত ই মেজবান, সিরাজ চুইগোস্ত, কেএফসি ও ভুতের বাড়ি এবং খানাজ সহ অভিজাত নানা রেস্টুরেন্টের সমাহার ঘটেছে এখানে।
তবে এসকল রেস্টুরেন্ট ভবন আদৌ বাণিজ্যক কিনা- এর স্বপক্ষে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনকে কোনো নকশা কিংবা দালিলিক কাগজপত্র দেখাতে পারেনি ভবন মালিকরা। এছাড়াও ভবনগুলো বিল্ডিং কোড না মেনে গড়ে উঠায় সেখানে অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা একেবারেই নাজুক। বিকল্প সিঁড়ির (ফায়ার এক্সিট) ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিটি ভবনই ঝুঁকিপূর্ন।
এছাড়াও, শহরের সমবায় ব্যাংক কমার্সিয়াল ভবনের ছাদে লাভিস্তা ও পাশর্^বর্তী ভবনে ‘চাঁদের পাহাড়’ নামক রুফটপ রেস্টুরেন্টও অবৈধ ভাবে পরিচালিত হচ্ছিল বলে জানিয়েছে সিটি করপোরেশন ও ফায়ার সার্ভিসের সমন্বয়ে গঠিত যৌথ দল। তারা পরিদর্শনে গিয়ে রেস্টুরেন্ট ও সংশ্লিষ্ট ভবনগুলোতে অনিয়ম দেখতে পেয়েছেন। এমনকি রেস্টুরেন্টগুলোর রান্নার কাজে ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডারগুলো ঝুঁকিপূর্ন ভাবে ভবনের ভিতরেই মজুদ রাখা হয়েছে বেইলি রোডের ওই ভবনের মতই। গত ৩ ও ৫ মার্চ এসকল ভবন ও রেস্টুরেন্ট পরিদর্শনে গিয়ে এমন অনিয়ম ও ঝুঁকি দেখেও ব্যবস্থা না নিয়ে সতর্ক করেই দায় সেরেছেন। এতে বিস্ময় প্রকাশ করেছে সচেতন মহল।
অবশ্য সিটি করপোরেশন ও ফায়ার সার্ভিসের টিম পরিদর্শনে নামলেও এযাবৎ নারায়ণগঞ্জে সক্রিয় হতে দেখা যায়নি রাজউক কর্মকর্তাদের। ঢাকায় রাজউক কর্মকর্তারা বিভিন্ন অভিজাত রেস্টুরেন্টে অভিযানের মাধ্যমে আইন প্রয়োগ করলেও নারায়ণগঞ্জের কর্মকর্তারা ছিলেন নীরব। তা নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ সহ সচেতন মহলে ক্ষোভ সৃষ্টি হওয়ার পর এবার যেন ঘুম ভেঙেছে রাজউকের নারায়ণগঞ্জ জোনের কর্মকর্তাদের।
তাদের নীরবতার বিষয়ে জানতে গতকাল যোগাযোগ করা হলে রাজউক ৮ জোনের পরিচালক ইয়াহ হিয়া খান দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, ‘ইতিমধ্যেই আমরা নারায়ণগঞ্জের রাজউক এলাকাধীন প্রতিটি হোটেল রেস্টুরেন্টের তথ্য সংগ্রহ করছি। এটার একটা ডাটাবেজ করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ইতিমধ্যেই আমরা তালিকা ধরে সূচি নির্ধারণ করেছি। আগামী ১০ মার্চ থেকে আমাদের অভিযান শুরু হবে। যা সারা মাসই চলমান থাকবে। আমাদের হেড অফিসের কর্মকর্তারা নির্দেশনা দিয়েছেন, যে সকল ভবনে নকশার গড়মিল আছে, সেখানে অভিযান পরিচালিত হবে।