সংবাদচর্চা রিপোর্ট
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, বাধা তো থাকবেই। বাধা এখনো আছে। প্রতিমুহূর্তে লড়াই করে টিকে আছি। একেক সময় বাধাটা একেক রকম। কখনো একটু সহজ হয় পথ, আবার কঠিন হয়ে ওঠে। তবে এখনো বাধার মুখেই আছি। এমন পরিস্থিতি কখনো হয়নি যে খুব সহজে আমি কিছু করে ফেলতে পেরেছি। সম্প্রতি একটি জাতীয় পত্রিকায় দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
কাজে এত বাধার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে শক্ত প্রতিপক্ষ যেহেতু আছে, তাই বাধা থাকবে। সে প্রতিপক্ষ নিজ দল বা ভিন্ন দল, যা–ই হোক। আমাদের এখানে রাজনীতির প্রকৃতি এমন হয়ে গেছে যে ভালো কাজকেও অনেক সময় উৎসাহিত করতে পারি না। বরং দলের ভেতরের নেতৃত্বের প্রতিযোগিতার চেয়ে বাধা দেওয়াটাকেই প্রাধান্য দিই। এটা আমাদের সংস্কৃতিতে পরিণত হয়ে গেছে। এটা থাকবেই। বাধা–বিপত্তি অতিক্রম করেই স্থানীয় সরকারে কাজ করতে হয়। শুধু আমি না, দেশের সব স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদেরই নানা বাধা পেরোতে হয়। টানা দ্বিতীয়বারের মতো দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ডা. আইভী। মনোনয়ন পাওয়ার পথ সহজ ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, দলের মনোনয়ন নিয়ে দলীয় প্রতিযোগিতা অবশ্যই ছিল। গত দেড় বছর ধরে এই প্রতিযোগিতাই চলল। এখানে আমার জন্য পথ মোটেও সহজ ছিল না। এখানে আমার বিরুদ্ধে ধর্মীয় ইস্যুও তোলা হয়েছে। জবরদখলের কথা বলা হয়েছে। এসব নিয়ে নানা প্রপাগান্ডা ছড়ানো হয়েছে। তাই পথ সহজ ছিল না। তবে এটা ঠিক, দলীয় প্রধানের একটা আস্থা ছিল আমার কাজে। শুধু তাঁর না, দলের অনেকেরই ছিল। তাঁরা মনে করেছেন, বাধা-বিপত্তির মধ্যেই আমি কাজগুলো করতে পারব। করেছিও তাই। তিনবার দল আমাকে এখানে দেখেছে। বরাবরের মতো অবশ্য এবারও সন্দিহান ছিলাম কী হয়। আমি আমার মতো করেই কাজ করেছি।
‘আপনার বিরোধিতাকারীরা এখনো যথেষ্ট শক্তিশালী?’ এই প্রশ্নের জবাবে সিটি মেয়র বলেন, তাঁরা ১০০ ভাগ শক্তিশালী আছে। তবে এই প্রতীকের নির্বাচনে আমার সবাইকেই প্রয়োজন আছে। প্রতিযোগিতার কারণে কেউ আমার বিরোধিতা করতেই পারে। তবে সত্য জয়ী হয়। পুনরায় দলীয় মনোনয়ন পাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্থানীয় সরকারে অনেক কাজ করার জায়গা আছে। এটা এমন একটা জায়গা, যেখানে সমাজের সবস্তরের মানুষের কাছে যাওয়া যায়, সবার মঙ্গলে অনেক কাজ করা যায়। ভালো লাগছে দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। যদি আল্লাহ হায়াত দেন এবং মানুষ আমাকে নির্বাচিত করে, তবে আমি আবারও মানুষের সেবার সুযোগ পাব আরও পাঁচ বছর। তিনি আরও বলেন, মনোনয়নের বিষয়টি জেনেছি টেলিফোনে। কোভিডের কারণে এখন দূরত্ব বজায় রাখা হচ্ছে। তাই নেত্রীর (শেখ হাসিনা) সঙ্গে আমার দেখা হয়নি। তবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আমাকে আশীর্বাদ করেই তিনি মনোনয়ন দিয়েছেন। নগরের ফুটপাতে দখলদারিত্বের বিষয়ে আইভী বলেন, ফুটপাতের বিষয়টি নিয়ে আমি নিজে মর্মাহত। কারণ, দুই বছর আগে এই ফুটপাত নিয়েই আমার ওপর হামলা হয়েছিল। দুই মাস আগে হকারই আরেক হকারকে মেরে ফেলেছে। তারপরও প্রশাসন কেন এত শৈথিল্য দেখাচ্ছে, তা আমার বোধগম্য নয়। যখন প্রশাসন চায় না ফুটপাতে হকার বসবে না, তখন বসে না। পুলিশ প্রশাসন চাইলে ফুটপাতের সমস্যা সমাধান করতে পারে। ফুটপাতে বসার কোনো কারণ নেই। কারণ, একটি মার্কেট আমরা করেছি, যেখানে ছয় শর বেশি দোকানের ব্যবস্থা আছে। তাই এভাবে ব্যাপক হারে ফুটপাত দখল করে দোকান বসানোর কোনো কারণ নেই। শক্তির বলে নারায়ণগঞ্জে এটা হচ্ছে। রাগে-ক্ষোভ-দুঃখে এখন আর বলি না। অনেকবার পুলিশ প্রশাসনকে বলেছি। এটার পেছনে কাদের হাত, সেটা সবাই বুঝি; কিন্তু বুঝেও কিছু করতে পারি না। ফুটপাতের হকার সমস্যা দূর হচ্ছে না চাঁদাবাজির কারণে, এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ১০০ ভাগ চাঁদাবাজি। তা না হলে এখানে হকার বসতে দেবে কেন? সাধারণ মানুষ চায় না, মেয়র চায় না, হাইকোর্টের নির্দেশনা আছে। তবু কাজ হচ্ছে না। সম্প্রতি এক সাংবাদিককে হকাররা পিটিয়েছে। এসব অপরাধ হচ্ছে। তবু ফুটপাত দখলমুক্ত হচ্ছে না। এর পেছনে কোনো না কোনো বড় শক্তি আছে। শহর থেকে বাস টার্মিনাল সরানোর বিষয়ে করা প্রশ্নের জবাবে সিটি মেয়র বলেন, হ্যাঁ, এ কাজটি জরুরি। আমরা টার্মিনালকে শহরের বাইরে নিতে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে নতুন টার্মিনাল নির্মাণের জন্য একটি প্রস্তাব স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। শহরের বাইরের জায়গা অধিগ্রহণ নিয়ে একটু সমস্যা আছে। কারণ, জেলখানার পাশের এই জায়গাটি জেলখানাও পেতে চায়। সেটা নিয়ে সমস্যা আছে। ‘সাংসদ শামীম ওসমান আপনার নির্বাচনী প্রচারে এলে কী করবেন?’ প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, উনি তো নির্বাচনী প্রচারে আসতেই পারেন। কারণ, প্রতীক নৌকা। এটা দলের প্রতীক। নৌকা প্রতীকের পক্ষে উনি কাজ করবেন, এটাই তো স্বাভাবিক। আমার মনে হয়, উনি নৌকার পক্ষেই কাজ করবেন।তিনি আরও বলেন, আমার অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী আছেন, যাঁরা সংস্কৃতিমনা, বাম দলের। তাঁরা কিন্তু নৌকাকেই ভোট দেন। সে ক্ষেত্রে এ জন্যই সমস্যা হবে না, কারণ, নির্বাচনী প্রচার কিন্তু একসঙ্গে হয় না। কারও সঙ্গে কারও দেখা হবে না। আমার জন্য মানুষ ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে নিজেদের উদ্যোগে ভোট চায়। আমার আহ্বানের অপেক্ষায় থাকে না।