আজ মঙ্গলবার, ৪ঠা অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায়কে ঘিরে সতর্ক পুলিশ-র‌্যাব

একুশে আগস্ট গ্রেনেড

একুশে আগস্ট গ্রেনেড

সংবাদচর্চা রির্পোট:

দীর্ঘ ১৪ বছরের প্রতীক্ষার পালা শেষ হতে চলেছে। আগামী কাল ১০ অক্টোবর একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়কে ঘিরে রাজধানীসহ সারাদেশে বিশেষ নিরাপত্তা প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।  সবার নজর এখন পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের আদালতের দিকে।

এ রায়কে কেন্দ্র করে যেন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সে লক্ষ্যে সারাদেশের পুলিশকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। তাই রায়ের দিন শুধু রাজধানীতেই মোতায়েন করা হবে পুলিশ-র‌্যাবের চার হাজার সদস্য। আদালত এলাকা ঘিরে থাকছে পৃথক নিরাপত্তাবলয়। কারা কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ আসামি আনা-নেওয়া ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতে যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।

এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, একুশ আগস্টের নৃশংস হামলায় জড়িতদের মতো ধিক্কৃত ও ঘৃণিত আর কেউ হতে পারে না। পুরো জাতিই ধিক্কার জানায় তাদের। এ রায়ের মাধ্যমে জাতি একটি কলঙ্ক থেকে মুক্ত হবে। রায়কে ঘিরে দেশে কোনো বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা নেই। জঙ্গিরা যেমন নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, যারা রায়কে ঘিরে বিশৃঙ্খলা তৈরি করার চেষ্টা চালাবে, তাদেরও একই পরিণতি হবে। পুলিশ ও গোয়েন্দারা যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা রুখতে প্রস্তুত রয়েছেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অপারেশন) কৃষ্ণপদ রায়  বলেন, রায়কে কেন্দ্র করে যাতে কেউ বেআইনি কার্যক্রম করতে না পারে, সে লক্ষ্যে রাজধানীজুড়ে থাকছে বিশেষ নিরাপত্তা। আদালত ঘিরেও থাকছে নিরাপত্তাবলয়। নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে সর্বক্ষণ গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি (গোপনীয়) মো. মনিরুজ্জামান  বলেন, রায়কে ঘিরে যাতে অতীতের কোনো নৈরাজ্যকর ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়, সে জন্য সারাদেশের পুলিশকে সতর্ক করা হয়েছে। নৈরাজ্য ঠেকাতে থাকছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান  বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির যেন কোনো অবনতি না হয় সে জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রয়েছে তাদের। এরই মধ্যে দেশের সব ব্যাটালিয়নকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।

একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেন কাজল  বলেন, ১৪ বছর ধরে জাতি এ রায়ের জন্য অপেক্ষা করছে। নিহত এবং আহতদের স্বজনরাও বিচারের প্রত্যাশায় রয়েছেন। কাঙ্ক্ষিত রায়ের মধ্য দিয়ে নিহতদের আত্মা শান্তি পাবে।

এদিকে রায়কে ঘিরে কোনো কুচক্রী মহল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে কি-না, তা শনাক্ত করতে সক্রিয় রয়েছেন সাইবার ক্রাইম বিভাগের সদস্যরা।

পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, গত কয়েক দিনের গোয়েন্দা তথ্যে একুশে আগস্টের রায় ঘিরে বড় ধরনের কোনো নাশকতা কেউ ঘটাতে পারে, এমন তথ্য পুলিশের কাছে নেই। তবে তাৎক্ষণিকভাবে যাতে কেউ বিশৃঙ্খলা ঘটাতে না পারে, সে দিকেও সর্বোচ্চ প্রস্তুতি রয়েছে তাদের। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপর যাতে কোনো হামলা না হতে পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক হয়ে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাদের।

পুলিশের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, এর আগে ২০১৩ সালে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায়কে ঘিরে চরম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি দেখা দেয়। ‘সাঈদীকে চাঁদে দেখা গেছে’- এমন কাল্পনিক তথ্য ছড়িয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরি করা হয়। তবে এরপর আরও অনেক যুদ্ধাপরাধীর রায় ঘোষণা ও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। কিন্তু দেশে বড় ধরনের কোনো নাশকতা ঘটাতে পারেনি অপরাধী চক্র। এরপরও রায় ঘিরে নিরাপত্তার আয়োজনে কোনো ত্রুটি রাখতে চান না আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

নানা বিবেচনায় ২১ আগস্টের রায় অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ রাষ্ট্রীয় শক্তিকে ব্যবহার করে সংঘবদ্ধভাবে একটি রাজনৈতিক দলের প্রধানকে হত্যার নীলনকশা পৃথিবীর ইতিহাসে খুব একটা দেখা যায়নি। বর্বরোচিত এ হামলা নিয়ে সাজানো হয় ‘জজ মিয়া’ কাহিনী। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার মামলার পুনর্তদন্ত শুরু হয়। এ সময় বেরিয়ে আসতে থাকে অনেক অজানা তথ্য। এ দেশের ইতিহাসে অন্য কোনো মামলায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার এতসংখ্যক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা আসামি হয়েছে- এমন ঘটনাও নজিরবিহীন। বিএনপি-জামায়াতের শীর্ষ নেতা, জঙ্গি থেকে শুরু করে সরকারি কর্মকর্তারাও এ হামলার নীলনকশায় জড়িয়ে পড়েন।

দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, একুশ আগস্টের রায় ঘিরে আসামিদের এলাকা ঘিরে বাড়তি নিরাপত্তা থাকবে। তাই অতীতে যারা রাজপথে ভাংচুর-নাশকতা করেছিল তাদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করেছে পুলিশ। জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের গতিবিধির ওপরও রাখা হচ্ছে নজরদারি। এমনকি জঙ্গিদের অনলাইন কার্যক্রম ও গোপন তৎপরতার ব্যাপারেও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।

একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আসামিদের গাজীপুরের হাই সিকিউরিটি কারাগার এবং কাশিমপুর ১ ও ২ নং কারাগারে রাখা হয়েছে। এ তিন কারাগারে তাই নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হয়েছে। রায়ের দিন তাদের বহনকারী প্রিজন ভ্যানের সামনে-পেছনেও থাকবে বাড়তি নিরাপত্তা।

পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, আদালতের রায়ের ওপর সবাইকে শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। রায় ঘোষণার পর আইনি পথেও যে কোনো আসামি তা মোকাবেলা করতে পারেন। নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করার সুযোগ রয়েছে।

একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলার অধিকতর তদন্তের পর ২০০৮ সালের ১১ জুন দেওয়া হয় অভিযোগপত্র। এতে বিএনপি নেতা আবদুস সালাম পিন্টু, তার ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন ও হুজি নেতা মুফতি হান্নানসহ ২২ জনকে আসামি করা হয়। তখন জানা যায়, শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে হামলার ছক করা হয়েছিল। পাকিস্তান থেকে এসেছিল হামলায় ব্যবহূত আর্জেস গ্রেনেড। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এ হামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পর অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। দুই বছর তদন্তের পর ২০১১ সালের ৩ জুলাই ৩০ জনকে আসামি করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এ নিয়ে এ মামলায় মোট আসামির সংখ্যা হয় ৫২।