আজ শনিবার, ১৩ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৮শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ঋণখেলাপি প্রার্থীর খোঁজে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

ঋণখেলাপি প্রার্থীর

ঋণখেলাপি প্রার্থীর নিজস্ব প্রতিবেদক:

আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে যাতে কোনও ঋণখেলাপি প্রার্থী হতে না পারেন, সেজন্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ঋণ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। নির্বাচন কমিশন থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ঋণ সংক্রান্ত তথ্য চাওয়া হয়। এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ঋণের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও। কেন্দ্রীয় ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে বাংলাদেশ ব্যাংককে যেভাবে বলা হয়েছে, আমাদের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সেভাবেই কাজ করছে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি টিমও তৎপর রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘ঋণখেলাপি প্রার্থীদের তথ্য হালনাগাদ তৈরি করতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকেও প্রয়োজনীয় নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে গেছে, নির্বাচনে যাতে কোনও ঋণখেলাপি প্রার্থী হতে না পারেন, সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে বলেছে ইসি। কেন্দ্রীয় ঋণ তথ্যভান্ডার (সিআইবি) হালনাগাদ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে ইসি।

ইসির চিঠি পাওয়ার পরই বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ঋণখেলাপিদের তথ্য হালনাগাদের জন্য মৌখিকভাবে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নির্দেশনায় ঋণখেলাপি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা ছাড়াও নাগরিকত্ব, প্রার্থী কোনও প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ছিলেন কিনা, প্রার্থী নির্বাচনি এলাকার বাইরে ঋণখেলাপি কিনা তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)  বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, পত্র-পত্রিকায় যাদের নাম আসছে, আমরা তাদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছি। যাতে কোনও ঋণখেলাপি আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হতে না পারেন, সে ব্যাপারে আমরা শাখা ব্যবস্থাপকদেরও নির্দেশনা দিয়েছি।’

এদিকে, বিস্তারিত করণীয় জানিয়ে শিগগিরই ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। চিঠির বিষয়বস্তু চূড়ান্ত করা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের নির্দেশনা পাওয়ার পর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে করণীয় সম্পর্কে চিঠি দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক কর্মকর্তা  বলেন, পত্র-পত্রিকায় যেসব ব্যক্তির নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য নাম উঠে আসছে তাদের তথ্য হালনাগাদ করা হচ্ছে। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি টিম কাজ করছে।

এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিআইবিতে ব্যাংকের পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণগ্রহীতাদেরও তথ্যভান্ডার গড়ে তোলা হয়েছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বড় অংকের ঋণখেলাপিদের তথ্য সিআইবিতে হালনাগাদ করে মাসিকভিত্তিতে। আর অন্য খেলাপিদের তথ্য হালনাগাদ করে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে। এরইমধ্যে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খেলাপিদের তথ্য হালনাগাদ করা হয়েছে।এখনও যারা খেলাপি ঋণ নিয়মিত করছে তাদের তথ্য সঙ্গে সঙ্গে হালনাগাদ করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ঋণখেলাপি কোনও প্রতিষ্ঠানের পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করলেও তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। যদি তার নাম রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস থেকে সংশোধন করা না হয়। আর প্রচলিত আইনের আওতায় কোনও কোম্পানি বা ফার্ম ঋণখেলাপি হলে তার পরিচালক বা অংশীদাররাও খেলাপি হবেন। একইসঙ্গে কোনও ব্যক্তিস্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোম্পানি খেলাপি হলেও তিনি খেলাপি বলে গণ্য হবেন।

প্রচলিত গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ অনুযায়ী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণখেলাপিরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার কমপক্ষে ৩০ দিন আগে খেলাপি ঋণের দুর্নাম মুক্ত থাকার বিধান করা হয়েছিল। পরে সেটি সংশোধন করে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সাতদিন আগে খেলাপি ঋণের দুর্নামমুক্ত থাকার বিধান করা হয়। সম্প্রতি বিধানটি আংশিক সংশোধন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, কোনও কোম্পানির পরিচালক বা ফার্মের অংশীদার প্রার্থী হলে তাদের নামে কোনও খেলাপি ঋণ না থাকলে বা মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন পরিশোধিত হলেও তিনি প্রার্থী হতে পারবেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন ঋণ পরিশোধ করার সুযোগ দেওয়ায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বাড়তি চাপের সৃষ্টি হয়েছে। মনোনয়নপত্র দাখিলের দিন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে যেসব সম্ভাব্য প্রার্থী খেলাপিমুক্ত হবেন, তাদের তথ্য ওইদিন সংগ্রহ করা কঠিন হবে।