নবকুমার:
দিনটি ছিলো ২০১৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারী। সেদিন ঋণগ্রস্থ তারাব পৌরসভার দায়িত্ব গ্রহণ করেন নারায়ণগঞ্জ ১ আসনের সংসদ সদস্য বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীকের সহধর্মীণী হাছিনা গাজী। মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সর্বপ্রথম তিনি মাদক চাঁদাবাজ সন্ত্রাসমুক্ত শান্তিময় পৌরসভা গড়তে কাজ শুরু করেন। এর পর তিনি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ছুটে বেড়ান । নিয়ে আসেন একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্প। দূর করেন জলাবদ্ধতা ও রাস্তাঘাটের সমস্যা। ২০১৮/১৯ অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়নে দেশের বাঘা বাঘা পৌরসভাকে পেছনে ফেলে প্রথম হয় তারাব পৌরসভা। তার জন্য সরকার ১০ কোটি টাকার অনুদান দেয় তারাব পৌরসভাকে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মাধ্যমে তারাব পৌরসভার ৩৫ হাজার মানুষকে চিকিৎসা সেবা দেয়ার ব্যবস্থা করছেন তিনি । একটি প্রাইমারি হাসপাতালও নির্মাণ হচ্ছে। পৌরসভায় কোনো তথ্য ও অনুসন্ধান কেন্দ্র ছিলো না বর্তমানে তথ্য ও অনুসন্ধান কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। নতুন ২য় তলা পৌর ভবন নিমাণসহ পুরাতন ভবনকে সম্প্রসারণ করে ৩য় তলায় করা হয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসনের ফলে ঢাকার চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে তারাব। একটি গার্ভেজ ট্রাকের পরিবর্তে ৬ টি ট্রাক ও শতাধিক পরিচ্ছন্ন কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নতুন রাস্তা নির্মাণ পাম্প স্থাপন খাল খনন ড্রেন নির্মাণ সড়কে বাতি স্থাপনের কাজ শুরু হয়ে তা অব্যাহত রয়েছে। পৌরবাসী পানির সমস্যা দূর করার জন্য পাইপ পানি সরবরাহ প্রকল্পের জন্য নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় ১ একর জমি ক্রয় করা হয়েছে। ২০১৮ সালে সরকারের নিকট থেকে ২.৫ কোটি টাকার স্পেশাল অতিরিক্ত এডিপি বরাদ্দ এসেছে । পৌরসভায় মাধ্যমিক বিদ্যালয় নির্মানের জন্য সরকার স্বীকৃতি দিয়েছে। পৌরসভা আলোকসজ্জা করা হয়েছে। দারিদ্র বিমোচনের জন্য মহিলাদের সেলাই মেশিন প্রদান এবং প্রশিক্ষণ ও মেধাবীদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়েছে। বয়স্কভাতা বিধবাভাতা স্বামী পরিত্যক্তা ভাতা প্রতিবন্ধী মাতৃত্বকালীন ভাতাসহ সকল প্রকার ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। বাল্যবিবাহ শিশু ও নারী নির্যাতন হ্রাস পেয়েছে। বৃদ্ধি পেয়েছে রাজনীতিতে নারীদের সক্রিয়তা। খাল খনন হচ্ছে নিয়মিত। মশা নিধন অব্যাহত রয়েছে। তারাব পৌরসভাকে ই- সেবার আওতায় নিয়ে এসেছেন হাছিনা গাজী। গত বছর ২০ অক্টোবর তারাব পৌরসভার ডিজিটাল মিউনিসিপালিটি সার্ভিস সিস্টেম এর উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র ও আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। এই ডিজিটাল মিউনিসিপালিটি সার্ভিস সিস্টেম এর মাধ্যমে এখন থেকে তারাব পৌরবাসী ঘরে বসে ৫ টি নাগরিক সেবা সম্পাদন করতে পারছে । সেবাগুলোর মধ্যে রয়েছে অনলাইনে হোল্ডিং ট্যাক্স , অনলাইনে পানির বিল প্রদান , অনলাইনে সিটি করপোরেশন সার্টিফিকেট সার্ভিসেস, অটোমেটেড প্রোপার্টি ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস, ই-ট্রেড লাইসেন্স সার্ভিসেস । ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবার আওতায় এসেছে পৌরসভা। নগরবাসীকে পেয়েছে স্মার্টকার্ড। গন্ধর্বপুরে বাস্তবায়ন হচ্ছে দৈনিক ৫০ কোটি লিটার পানি শোধনাগার। মেয়রের চেষ্টায় দূর হয়েছে ঢাকা ওয়াসার সাথে আটানী সমাজের বিরোধ। নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিসহ পৌরসভায় ডে -কেয়ার সেন্টার চালু করা হয়েছে । ২০১৯ -২০ অর্থ বছরে তারাব পৌরসভার মোট ১ শ ২৫ কোটি ৩৮ লাখ ৭০ হাজার টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয় । এটা তারাব পৌরসভার সবচেয়ে বড় বাজেট। বাজেটে মোট রাজস্ব আয় ২১ কোটি ৮৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা। মোট রাজস্ব ব্যয় ১০ কোটি ৩৭ লাখ ৫ হাজার টাকা। মোট উন্নয়ন আয় ১ শ ১৪ কোটি৭৮ লাখ টাকা। মোট উন্নয়ন ব্যয় ১ শ ১৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা। পৌরসভায় বিগত ৪ বছরে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর সার্বিক সহযোগিতায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় জেলা পরিষদের বরাদ্দ সহ প্রায় ২৮০ কোটি টাকার কাজ বাস্তবায়ন হয়েছে। যা বাংলাদেশের অন্য পৌরসভাগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। বাজেট বাস্তবায়নে হাছিনা গাজী স্বচ্ছতা জবাবদিহিতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি জনগণের মুখোমুখি হয়েছেন নিয়মিত। চার বছরে তিনি জনকল্যাণ ও উন্নয়নের মাধ্যমে পৌরবাসীর প্রশংসা পেয়েছেন। প্রথম নারী মেয়র হিসেবে তিনি ভীষণ জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। সম্প্রতি তারাব পৌরসভা পরিদর্শন করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। তিনি মেয়রের কাজে মুগ্ধ হয়েছেন। যার ফলে সরকার বিশেষ প্রকল্প বরাদ্দ দিয়েছে । যেমন সিআরডিপি,ইউজিআইপি৩, বিএমডিএফ, ওয়াটার সাপ্লাই এন্ড স্যানিটেশন, আরবান আইসিটি প্রকল্পে নতুন করে অন্তরভূক্ত হয়েছে।
আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি ৪ বছরপূর্ণ হবে হাছিনা গাজীর। তিনি নির্বাচনের আগে জনগণকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তার দ্বিগুনেরও বেশি কাজ বাস্তবায়ন করেছেন । তিনি পৌরসভাকে ঋণমুক্ত করেছেন। নাগরিকদের উপর কর আরোপ করেন নাই। তার উপর নাগরিকদের আস্থা বাড়ছে। পৌরসভা এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ হচ্ছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পৌর মেয়র হাসিনা গাজী নিয়মিত কার্যালয়ে অবস্থান করছেন। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত তিনি কার্যক্রম চালিয়ে যান। পৌরবাসী নিজেদের অসুবিধা- সুবিধা নিয়ে মেয়রের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন। পৌরসভার মাধ্যমে সমাধানযোগ্য হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেন। প্রয়োজনে আর্থিক সহযোগিতা ও সমাধানের পথ দেখিয়ে দেন। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তিনি আমন্ত্রণ পাওয়া মাত্র অংশ নেন। তাছাড়া কাজের জন্য তিনি বঙ্গমাতাসহ বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছে ।