মোঃ মোমিনুল ইসলামঃ
উত্তাল নারায়ণগঞ্জে এখন স্বস্তির হাওয়া। চলমান বেশ কিছু ঘটনার জেরে নারায়ণগঞ্জ নগরীতে যে আতঙ্ক বিরাজমান ছিল তার আংশিক সমাপ্ত শান্তির বার্তা দিয়ে হলো। গত মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) মহাতীর্থ লাঙলবন্দ স্লান উৎসব উপলক্ষে জেলা পুলিশ সুপারে কার্যালয়ে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান ও জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ এক মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করেন। সভায় লাঙলবন্দ স্লান উৎসব এর নিরাপত্তা জনিত বিষয় সহ অন্যান্য আংশিক বিষয়ের পাশাপাশি নগরির চলমান বেশ কিছু বিষয়ের উপর আলোকপাত করা হয়। উক্ত আলোচনায় জেলা পুলিশের অভিযান সহ নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের সাথে পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদের যে রেশারেশি ছিলো সেই ঝামেলাটাকে মিটানোর জন্য মধ্যস্থতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। নগরবাসীর মতে গত কিছুদিনে নারায়ণগঞ্জে যে ধরনের প্রেক্ষাপট সৃষ্টি হয়েছে তা দেখে নগরবাসি এক প্রকার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকায় করেছিলো। তবে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ থেকে শেষ রক্ষা হয়েছে বিষয়টি আলোচনার টেবিলে উপস্থাপন করার ফলে।
নগরীর বোদ্ধামহল মনে করেন, নারায়ণগঞ্জের জনপ্রতিনিধি এবং পুলিশ প্রশাসন কাধে কাধ মিলে একযোগে কাজ করলে নারায়ণগঞ্জ নগরী সহ সম্পূর্ণ জেলা একটি উন্নয়নের রোল মডেল জেলা হিসেবে বাংলার মানচিত্রে স্থান করে নিবে। তাঁরা আরো মনে করেন, নগরীর চলমান বেশ কিছু সমস্যার অন্তরালে জনপ্রতিনিধরা নয়, জনপ্রতিনিধিদের সাথে থাকা বিতর্কিত লোকের এ সকল সমস্যাগুলোকে সৃষ্টি করছে। তবে যারা জনপ্রতিনিধি রয়েছেন তাঁদের অবশ্যই এ সকল বিষয়গুলোকে লক্ষ্য রাখতে হবে যে, তাঁদের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা কোন ভাবে যাতে তাঁদের নাম, ছবি, ব্যানার ও পোষ্টার ব্যবহার করে কোন প্রকার অবৈধ কিংবা অপরাধমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করতে না পারে। অপর দিকে পুলিশ প্রশাসনকেও অতি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যে অপরাধী কোন দল কিংবা কোন জনপ্রতিনিধির লোক হতে পারে না। একজন অপরাধী শুধুই একজন অপরাধী সে যে দলের হোক কিংবা একজন সংসদ সদস্যের পরিবারের সদস্য হোক আইন তার যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে অপরাধীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করবে।
একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে এই শহরে চাঁদাবাজী করা সম্ভব নয়, একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে ভূমিদস্যুতা করা সম্ভব নয়, সম্ভবনয় অবৈধ কোন ব্যবসা পরিচালনা করাও। এ সকল অপরাধমূলক কর্মকান্ডগুলো তারাই পরিচালনা করে যাদের আছে রাজনৈতিক পরিচয়। এ সকল কথিত রাজনৈতিক পরিচয়ধারীরা সংসদ সদস্য সহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধিদের নাম ভাঙিয়ে এই শহরে এ সকল অপকর্মগুলো করছে। অপর দিকে লক্ষনীয় বিষয় পুলিশের অভিযানে যেসকল আসামীরা আটক কিংবা গ্রেফতার হচ্ছে তাঁরা নিছক হুকুমের গোলাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করে এতে করে ধরা ছোঁয়ারে বাহিরে রয়ে যায় হুকুমদাতারা।
নারায়ণগঞ্জের জনপ্রতিনিধি ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে নগরির সাধারণ মানুষের আশা আকাঙ্খা সম্পর্কে জানতে চাইলে একাধিক সচেতন নাগরিক নাম না প্রকাশ করার শর্তে দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, নারায়ণগঞ্জের উন্নয়ন ধমকে গেছে কিছু বিতর্কের কারণে। আমাদের এই নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিবিদরা একে অপরকে খুব একটা সম্মান কিংবা শ্রদ্ধা করেন না। একেকজন জন প্রতিনিধি অপর জনপ্রতিনিধিদের প্রতিপক্ষ মনে করেন। কার কত লোক আছে, কার কতো ক্ষমতা রয়েছে সেই সকল বিষয়গুলোকে নিয়ে তাঁরা বছরের পর বছর ব্যস্ত সময় পার করছেন। অথচ তারা কিন্তু এমনো প্রতিযোগিতা করতে পারতেন যে, ঐ জনপ্রতিনিধি তাঁর এলকার সাধারণ মানুষদের জন্য এই ভাবে কাজ করেছে আমি তাঁর চেয়ে ভালো কিছু করবো আমার এলাকার সাধারণ মানুষদের জন্য। তারা কিন্তু এমনটা করছেন না। তারা যদি এমনটা করতেন তাহলে হয়তো নারায়ণগঞ্জের চলমান অনেক সমস্যাই সমাধান হয়ে যেত। এই সচেতন নাগরিক পুলিশ প্রশাসনের প্রশংসা করে বলেন, নারায়ণগঞ্জের জেলা পুলিশ বর্তমানে যে ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন সেটা অবশ্যই আমাদের আশার আলো দেখাচ্ছে। আমরা এখন পুলিশের উপর ভরসা করতে পারি তবে তাঁরপরও কিছুটা ভয় থেকে যায়। তার কারণ পুলিশের পক্ষপাতমূলক আচরণ। মাঝে মাঝে পুলিশের পক্ষপাত মূলক আচরণ গুলো আমাদের হতবাক করে। পুলিশ কেন কারো পক্ষ নিয়ে কথা বলবে? সরকার পরিবর্তন হবে। হবে জনপ্রতিনিধির পরিবর্তন।
কিন্তু পুলিশ প্রশাসনে যারা দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন তাঁদের কি পরিবর্তন হবে। পরিবর্তন হলে হবে শুধু স্থানের পরিবর্তন কিন্তু চাকরী চলে যাবে কিংবা তাঁদের পুলিশ প্রশাসন থেকে সরিয়ে রাষ্ট্রে ভিন্ন দপ্তরে প্রেরণ করবে এমনতো নয়। রাষ্ট্র যেমন সংবিধান অনুসরণ কর চলে ঠিক তেমনি পুলিশ প্রশাসনেরও রয়েছে নিজস্ব প্রটোকল। পুলিশের যে বিধান কিংবা আইন রয়েছে সেই আইন তাঁদের রাষ্ট্রের অন্যতম রক্ষাকর্তা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। বিধান অনুসারে চললে দলমত নির্বিশেষে পুলিশ তার উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারবে। কেননা আইনের দৃষ্টিতে কোন বৈষম্য নেই। আইন সকলের জন্য সমান।
নগরির চাষাড়া এলাকার বাসিন্দা সৈয়দ মোহাম্মদ রিফাত দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, এতো সমস্যা কখনোই হতোনা যদি মেয়র ডা: সেলিনা হায়াৎ আইভী এবং শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমান ঝগড়া বিবাদকে পেছনে ফেলে একযোগে নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নের জন্য কাজ করতেন। আমরা নরায়ণগঞ্জবাসী পিছিয়ে পড়েছি শুধু মাত্র তাঁদের এই বিবাদের কারণে। আমরা আর বিবাদ চাইনা। আমরা চাই শান্তি। বর্তমানে আমাদের নারায়ণগঞ্জ পুলিশ প্রশাসনের দায়িত্বে যিনি আছেন তিনি অত্যন্ত সৎ ও কর্মঠো একমন ব্যক্তিত্ব। শামীম ওসমান, আইভী, সেলিম ওসমান সহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধিরা এই সময়ে যদি একযোগে উন্নয়ন মূলক কাজ করে এবং অপর দিকে পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে জেলা পুলিশ কঠোর হস্তে অপরাধীদের দমন করেন তাহলে আমাদের নারায়ণগঞ্জকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হবে না। আমরা এগিয়ে যাবো এবং বঙ্গবন্ধুর সোঁনার বাংলার প্রথম জেলা হিসেবে নারায়ণগঞ্জের নাম সবার উপরে থাকবে। তিনি আরো বলেন, অনেক দেড়িতে হলেও আমাদের
নারায়ণগঞ্জবাসীর বহু আকাঙ্খার প্রতিফল হিসেবে সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতিক)কে একজন মন্ত্রী হিসেবে আমরা পেয়েছি। একজন প্রবীন রাজনীতিবিদ হিসেবে আমাদের নারায়ণগঞ্জের জনপ্রতিনিধরা তাঁর কাছ থেকে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা নিতে পারেন। অপর দিকে রয়েছে লিয়াকত হোসেন খোকা এবং নজরুল ইসলাম বাবু। সকললে সমন্বয় নিজ নিজ স্থানে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখলে নারায়ণগঞ্জকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হবে না।