নবকুমার:
একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আর মাত্র চার মাস বাকী। সারা দেশে নির্বাচনী হওয়া বইছে। নির্বাচন কমিশন সংসদ নির্বাচন আয়োজনের প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করছে।
আওয়ামীলীগ বিএনপি সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রায় শেষ করছে। নারায়ণগঞ্জে-৫ টি আসন রয়েছে। এখানে চলছে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের সর্বশেষ জরিপের কাজ। বিএনপিও পিছিয়ে নেই তারা বিভিন্ন কৌশলে নির্বাচনী প্রচারণা করছে। বিএনপির নির্বাচন প্রচারণার জন্য কেন্দ্র হতে একটি ওয়েব সাইড খোলার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে । যে কোন সময় তা চালু করা হবে।
জাতীয় নির্বাচনের আগে ঈদকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামীলীগ বিএনপি জাপাসহ বামজোটের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নিজেদের অবস্থানের জানান দিচ্ছে। সারা নারায়ণগঞ্জে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ব্যানার ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। ক্ষমতাসীনদের সংখ্যা বেশি।
আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা জাতীয় শোক দিবস পালনের মাধ্যমে নিজেদের পদচারণা বৃদ্ধি করছে।
অনেক মনোনয়ন প্রত্যাশী কোরবানীর পশু কর্মীদের মাঝে বিতরণ করছে। বৃদ্ধির চেষ্টা করছে নিজেদের বলয়ের লোকের পরিমাণ।
নারায়ণগঞ্জে ৫টি আসনের মধ্যে ৩টি আসন ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের এবং ২টি আসন জাতীয় পাটির দখলে রয়েছে।
নারায়নগঞ্জ-১ আসনে (রূপগঞ্জ) আওয়ামীলীগ সমর্থিত বর্তমান এমপি গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক। তিনি নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামানকে প্রায় ৫০ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে। নির্বাচিত হওয়ার পর গোলাম দস্তগীর গাজী রূপগঞ্জে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গোলাম দস্তগীর গাজী প্রায় ১ লক্ষ ভোটের ব্যবধানে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে পরাজিত করে দ্বিতীয় বারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি আগামী নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী তবে তার মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত বলে জানা গেছে। রূপগঞ্জে বিএনপির তিন জন মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছে। তারা তিনটি বলয়ে বিভক্ত। তারা হলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান, সাবেক সভাপতি ও খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা এড.তৈমুর আলম খন্দকার, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভূইয়া। ঈদকে সামনে রেখে দিপু ভূইয়া গোপনে লবিং চালিয়ে যাচ্ছে তবে কাজী মনির ও তৈমুর বসে নেই।
নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে (আড়াইহাজার) ঈদকে সামনে রেখে জমে উঠেছে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ত্রিমুখী শেষ মুহূর্তের প্রচারণা। এখানে বর্তমানে নজরুল ইসলাম বাবু ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের এমপি । তিনি আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। আড়াইহাজারে আওয়ামীলীগের তিন জন মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছে। তারা হলেন জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ইকবাল পারভেজ, সাবেক রাষ্ট্রদূত আওয়ামীলীগ নেতা মমতাজ আলী। জাতীয় পাটির একক প্রাথী আলমগীর হোসেন লোটন। বিএনপির আজাদ সহ একাধিক প্রার্থী রয়েছে। তারা গোপনে প্রচারণা চালাচ্ছে সরকারের ভুল বিভিন্ন কাজের সমালোচনা করছে।
নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে বর্তমান এমপি জাতীয় পাটির লিয়াকত হোসেন খোকা । খোকা আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে পিছিয়ে নেই জাপা নেত্রী মৌসুমী। সোনারগাঁয়ে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে যারা রয়েছে তারা হলেন জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ডাঃ আবু জাফর চৌধুরী বীরু, সাবেক সংসদ সদস্য কায়সার হাসনাত, মাহফুজুর রহমান কালাম। এখানে বিএনপির একাধিক প্রার্থী রয়েছে, তাদের মধ্যে অন্যতম সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেজাউল করিম, এটি এম কামাল, আজাহারুল ইসলাম মান্নান। তারা সবাই ঈদকে সামনে রেখে পর্দার আড়াল থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে (ফতুল্লা- সিদ্ধিরগঞ্জ) বর্তমান এমপি আওয়ামীলীগের শামীম ওসমান। এখানেও আওয়ামীলীগের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। তারা হলেন শ্রমিকলীগ নেতা কাউছার আহমেদ পলাশ,আওয়ামীলীগ নেতা কামাল মৃধা। শামীম ওসমান ইতিমধ্যে বিভিন্ন ওয়ার্ডে কেন্দ্র কমিটি গঠণের মাধ্যমে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এদিকে পলাশের রয়েছে শ্রমিকদের বিশাল ভোট ব্যাংক। তাই শ্রমিকদের নিয়ে অনেকটা কৌশলে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি। অন্যদিকে কামাল মৃধা আওয়ামীলীগের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে বেশ কিছু পোষ্টার লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে সবার আলোচনায় আসেন । তাছাড়া ফতুল্লা সিদ্ধিরগঞ্জে বিএনপির প্রায় ৩ জন প্রার্থী রয়েছে, তাদের মধ্যে অন্যতম শাহ আলম, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, গিয়াস উদ্দিন। এখানে শামীম ওসমান ঈদকে সামনে রেখে বৃহৎ ঈদের জামায়াত আয়োজনের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের মধ্যে দুরুত্ব কমাতে চেষ্টা করছে। তবে বাকী প্রার্থীরাও বসে নেই।
নারায়ণগঞ্জ ৫ আসনে (সদর- বন্দর) বর্তমান এমপি জাপার সেলিম ওসমান। এখানে জাতীয় পাটিকে হটাতে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা পৃথক পৃথক ভাবে গণসংযোগ করে যাচ্ছে। আওয়ামীলীগের মধ্যে যারা রয়েছে তারা হলেন আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এড.আনিছুর রহমান দিপু, জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ান, মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এড.খোকন শাহ,শ্রমিক নেতা শুকুর মাহমুদ। এখানে বিএনপির একাধিক প্রার্থী রয়েছে। তারা হলেন সাবেক এমপি আবুল কালাম,খোরশেদ আলম খন্দকার, এ্যাড সাখাওয়াত। জাতীয় নির্বাচনে আগে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ঈদকে টার্গেট করে সর্ব শক্তি নিয়ে পুরোদমে মনোনয়নের তৎপরতা চালাচ্ছে।
এ তৎপরতায় যে দলের প্রার্থী দলীয় প্রধানের আস্থা অর্জন করতে পারবেন সেই পেয়ে যাবেন আগামী নির্বাচনের কাঙ্খিত টিকেট। আর যারা পারবেন না তাদের আবার ৫বছর অপেক্ষা করতে হবে।