আজ সোমবার, ১৩ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আ.লীগ নেতাদের মারধরে মৃত্যু

সংবাদচর্চা রিপোর্ট
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার কুতুবপুরে ক্ষমতাসীন দলের একটি পক্ষের নির্মমতায় প্রাণ হারিয়েছেন একই দলের সমাজ কল্যাণ সম্পাদক কাদের। রোববার সকালের দিকে তিনি কুত্বুপুরের রসূলপুর ভাঙ্গাপুল পঞ্চায়েত সভাপতি ইব্রাহিম খান ও একই ইউনিয়নের সদস্য রোকনউদ্দিন গ্রুপের নির্মমতায় মারা যান।
এর আগে শনিবার সন্ধ্যার পর কাদেরকে একটি বৈঠকের মধ্যেই মারধর করে ইব্রাহিম খান ও রোকন মেম্বার গ্রুপের সন্ত্রাসীরা। অবস্থা বেগতিক দেখে কাদের দৌঁড়ে বাড়িতে চলে আসে। পরে সন্ত্রাসীরা কাদেরের বাড়ি ও সামনের দোকানের সার্টারে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করে সেখানেই অবস্থান নেয়।
এদিকে কাদের সন্ত্রাসীদের দ্বারা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়ে বাড়িতে যেয়েই অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরিবারের দাবি সন্ত্রাসীরা তার বুকে লাত্থি, ঘুষি মেরেছিল। বাড়িতে এসেই সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। কিন্তু ওষুধের জন্য ছেলে বারবার বাইরে যেতে চেয়েছিল। যেতে দেওয়া হয়নি। বাইরে থেকে খবর পেয়ে একজন ওষুধ নিয়ে আসতে চেয়েছিল। তাকেও মারধর করা হয়। পরে শেষ রাতের দিকে ওই ছেলে লুকিয়ে বাড়ির ছাদ দিয়ে একটি ওষুধ দেয়। কিন্তু এতে লাভ হয়নি। সে মারা যায়।
ঘটনার সূত্রে জানা গেছে, রসূলপুর এলাকায় একটি চুরির অভিযোগ তুলে ৯ মে স্থানীয় পঞ্চায়েত কমিটিতে একটি ছেলেকে মারধর করে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগি পরিবারের সঙ্গে কাদের গিয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় একটি অভিযোগ করে। এই অভিযোগ করার রেশ ধরে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। ফলশ্রুতিতে স্থানীয় লাল মিয়ার বাড়িতে শনিবার সন্ধ্যার দিকে এ ব্যাপার মিমাংসার জন্য বসা হয়। কিন্তু এখানে কাদেরকে শারীরিক ভাবে এক দফা লাঞ্ছিত করে ইব্রাহিম খান ও রোকন মেম্বারের লোকজন। পরে বৈঠক থেকে উঠে যায় কাদের। এরপরই সশস্ত্র বাহিনী কাদেরকে ধাওয়া করলে সে তার বাড়িতে দৌঁড়ে গিয়ে গেট আটকে দিলে সন্ত্রাসীরা বাড়ি টিন, বাড়ির সামনে দোকান পাটে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে আর পুরো বাড়ি অবরুদ্ধ করে রাখে।
কাদেরের স্ত্রী ফিরোজা বেগম অভিযোগ করে বলেন, বাড়িতে এসেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন কাদের। তখন তার প্রেশার বেড়ে যায়। তখন ওষুধ আনার জন্য যেতে চাইলেও বাড়ি থেকে বের হয়নি। এমনকী আশিক নামে বাড়ির ভাড়াটে এক যুবক পুনরায় ওষুধের জন্য বাড়ি থেকে বের হতে চাইলে তাকেও মারধর করে। ওষুধ আনতে যেতে দেয়নি।
তিনি আরও জানান, শেষ রাতের দিকে একজন খবর পেয়ে লুকিয়ে ওষুধ নিয়ে এসে ছাদে এসে দিয়ে যায়। কিন্তু ততক্ষণে কাদের মারা যায়। পরে ভোরের দিতে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে এ ঘটনার খবরে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ রোববার বিকেল তিনটার দিকে রসূলপুর এলাকা থেকে নিহত কাদের মিয়ার মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করেছে। নিহতের স্ত্রী এ ঘটনায় বাদী হয়ে থানা অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ মূল অভিযুক্ত ইব্রাহিম খানসহ দুজনকে আটক করেছে।
ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি) মো. আসলাম হোসেন বলেন, আমরা লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছি। তদন্ত রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে মামলা হবে। এ ঘটনায় দুজন আটক হয়েছে।