নিজস্ব প্রতিবেদক:
আগামী ডিসেম্বরের শেষের দিকে অনুষ্ঠেয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ কিংবা বর্জনের সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করেই প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করবে সরকারি দল। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে এক রকম, না নিলে আরেক রকম কৌশল অবলম্বন করা হবে। তবে যে কোনো পরিস্থিতিতে আগেভাগেই দলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার প্রস্তুতি রয়েছে আওয়ামী লীগে। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক নেতারা আজ বৃহস্পতিবার জরুরি বৈঠকে বসছেন।
সন্ধ্যা ৭টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে এই বৈঠক ডাকা হয়েছে। কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের এই বৈঠকে মূলত আগামী সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দলের কৌশল নিয়ে আলোচনা হবে বলে নেতারা মনে করছেন। প্রধানমন্ত্রী এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর তিনজন প্রভাবশালী সদস্য গতকাল জানিয়েছেন, অন্যান্য রাজনৈতিক প্রসঙ্গের পাশাপাশি আগামী নির্বাচনের বিষয়টিও আজকের বৈঠকের আলোচনায় স্থান পেতে পারে। সে ক্ষেত্রে দলের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবশ্য এরই মধ্যে জরিপের মাধ্যমে প্রার্থী তালিকা গুছিয়ে এনেছেন।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে চাননি দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তবে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ জানিয়েছেন, আগামী ২৯ অক্টোবরের পর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। এ জন্য কয়েকটি বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বৃহস্পতিবারের জরুরি বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর আরেকজন সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেওয়ার জন্য এ মাসে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাবেন। আবার নির্বাচনের দিনক্ষণও ঘনিয়ে আসায় দলীয়ভাবে বেশ কিছু জরুরি বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে। আজকের বৈঠকে কেন্দ্রীয় নেতাদের এসব বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কার্যনির্বাহী সংসদের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা বলেছেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ কিংবা বর্জন নিয়ে বিএনপির সিদ্ধান্ত জানার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে আছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে এলে বিএনপির বিরুদ্ধে শক্ত নির্বাচনী জোট গড়বে সরকারি দল। আর বিএনপি নির্বাচনে না এলে মহাজোটের আকার কিছুটা ছোট করা হবে। অর্থাৎ বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটকে আরও শক্তিশালী করা হবে। মহাজোটের আকার আরও বাড়ানোর প্রস্তুতি এরই মধ্যে সম্পন্ন করে রাখা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে মহাজোটে আসতে পারে কয়েকটি ইসলামী দল। আর বিএনপি নির্বাচনে না এলে এইচ এম এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি মহাজোটের বাইরে গিয়ে আলাদা জোট গড়ে তুলবে।
তবে আজকের বৈঠকে এ বিষয়গুলোর পাশাপাশি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য দিনক্ষণ নিয়েও আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পদ্ধতির ব্যবহার নিয়েও আলোচনা হতে পারে। নির্বাচনকালীন সরকার প্রসঙ্গেও আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে।
আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা বলেছেন, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে দলের প্রস্তুতি অনেক আগে শুরু হলেও চলতি সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। তাদের মতে, এই দুই মাসে সব প্রস্তুতি শেষ করেই সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মাঠে নামাতে হবে। এ লক্ষ্য নিয়ে দলকে সাংগঠনিকভাবে আরও গুছিয়ে আনার লক্ষ্যও নেওয়া হয়েছে। তৃণমূলে দলের সব ধরনের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-কোন্দল ও নেতাদের অনৈক্য দূর করার পদক্ষেপ নিয়েছেন দলীয় নেতারা।
এরই মধ্যে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ শীর্ষ নেতারা সিলেট সফর করে সেখানকার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ৮ ও ৯ সেপ্টেম্বর উত্তরাঞ্চল সফর করে ওই অঞ্চলের জেলা নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন তারা। এর আগে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা আজ বৃহস্পতিবার দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রাজশাহী জেলা ও মহানগর নেতাদের সঙ্গেও মতবিনিময় করবেন। দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের আজকের বৈঠকে দলকে শক্তিশালী করার কর্মসূচিগুলো নিয়েও আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের দিকনির্দেশনা দেবেন।
ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি দলীয় ফোরামের এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রস্তুতির পুরো কার্যক্রম সেপ্টেম্বর মাসেই শুরু হয়ে মাসের শেষ দিকে চূড়ান্ত রূপ নেবে। বেশিদূর গেলে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত যেতে পারে।
স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠক :কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকের আগে আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় গণভবনে দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।