নবকুমার:
গোলাম দস্তগীর গাজী বাংলাদেশের রাজনীতির এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি ১৯৪৮ সালের ১৪ আগস্ট জন্ম গ্রহণ করেন। তার বাবার নাম গোলাম কিবরিয়া গাজী মায়ের নাম শামসুনেচ্ছা বেগম। তার পৈতৃক বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। তিনি পড়াশুনা শুরু করেছেন পুরান ঢাকার বিদ্যাপিঠে।মাধ্যমিক পাশ করার পর ভর্তি হন নটরডেম কলেজে।
১৯৭১ সালে ছাত্র থাকা কালীন সময়ে গোলাম দস্তগীর গাজী রাজনীতি জড়িয়ে পড়েন। আইন বিভাগের ছাত্র অবস্থায় গোলাম দস্তগীর গাজী বঙ্গবন্ধুর ডাকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। তিনি ২ নং সেক্টরের অধীনে রণাঙ্গণে যুদ্ধ করেছেন। যুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ এবং ভারত সরকার যৌথভাবে তাকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করে। স্বাধীনতা বিরোধীরা ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে স্ব পরিবারে হত্যা করলে গোলাম দস্তগীর গাজী বঙ্গবন্ধুকে হত্যার বিচার চেয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন। গোলাম দস্তগীর গাজী একজন সফল ব্যবসায়ী। তিনি ৮ বছর যাবত বাংলাদেশের শীর্ষ করদাতা। তিনি এফবিসিসিআইয়ের সহ সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ক্রীড়া অঙ্গনে গোলাম দস্তগীর গাজীর বিরাট অবদান রয়েছে। তিনি বিসিবির সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তার দুই ছেলে । বর্তমানে গাজী গোলাম মর্তুজা পাপ্পা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক । অপর ছেলে এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক। গোলাম দস্তগীর গাজীর স্ত্রী হাছিনা গাজী তারাব পৌর সভার মেয়র।
আওয়ামীলীগের আন্দোলন সংগ্রামে গোলাম দস্তগীর গাজীর অবদান ভুলবার নয়। ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি জামায়াতের দু:শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন। আন্দোলন করতে গিয়ে গোলাম দস্তগীর গাজী গুলি খেয়েছেন। তিনি আন্দোলন করে গোটা নারায়ণগঞ্জ কে কাপিয়ে তুলেছেন। গোলাম দস্তগীর গাজী ওয়ান ইলেভেনের সময় কারাবন্দী শেখ হাসিনাকে মুক্তির মহানায়ক ছিলেন। তিনি নেত্রীর জন্য জেল খেটেছেন। ফখরুদ্দিন মঈনুদ্দিনের সরকার গোলাম দস্তগীর গাজী বলেছিলো শেখ হাসিনার নামে মিথ্যা দুর্নীতির মামলা দায়ের করতে । সে দিন গোলাম দস্তগীর গাজী সেনাবাহিনীকে বলেছিলো আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা বঙ্গবন্ধুর ডাকে আমি যুদ্ধ করেছি আমাকে মেরে ফেলুন তবু আমি শেখ হাসিনার নামে মামলা দেব না। তখন সেনাবাহিনী অমানবিক নির্যাতন করেছিলো গোলাম দস্তগীর গাজী কে ।
২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ ১ আসনে গোলাম দস্তগীর গাজী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান। সেই নির্বাচনে গোলাম দস্তগীর গাজী বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী কাজী মনিরুজ্জামান কে প্রায় ৫০ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে সবাইকে অবাক করে দেন।
২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের ৪ জন এমপি বিনাপ্রতিদ্ব›দ্বীতায় নির্বাচিত হয়। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের মধ্যে রূপগঞ্জে গোলাম দস্তগীর গাজী জনগণের ভোটের মাধ্যমে এমপি নির্বাচিত হয়। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গোলাম দস্তগীর গাজী ১ লাখের অধিক ভোটের ব্যবধানে স্বতন্ত্র প্রার্থী কে পরাজিত করে দ্বিতীয় বারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়।
গোলাম দস্তগীর গাজীর পদচারণায় বদলে গেছে রূপগঞ্জের উন্নয়ন চিত্র। আওয়ামীলীগ সরকার গত দুই মেয়াদে রূপগঞ্জের উন্নয়নের জন্য যতগুলো প্রকল্প দিয়েছে তা সফল ভাবে বাস্তবায়ন করেছেন গোলাম দস্তগীর গাজী । তার নামে নেই কোন দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গোলাম দস্তগীর গাজী বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী কাজী মনিরুজ্জামান কে ২ লাখের অধিক ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে টানা তৃতীয় বারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এবার গোলাম দস্তগীর গাজী কে পরাজিত করতে লন্ডন থেকে তারেক রহমান ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভোট ক্যাম্পেইন করেছেন। কিন্তু গোলাম দস্তগীর গাজীকে পরাজিত করতে পারে নাই।
স্বাধীনতার পরে আওয়ামীলীগ সরকার নারায়ণগঞ্জ থেকে কোন মন্ত্রী দেয় নাই। বিএনপির আমলে নারায়ণগঞ্জ থেকে একাধিক মন্ত্রী দিয়েছে। রূপগঞ্জ নারায়ণগঞ্জের সবচেয়ে গুরুত্ব পূর্ণ আসন। জাতীয় সংসদে যতগুলো হেভিওয়েট আসন রয়েছে তার মধ্যে নারায়ণগঞ্জ ১ আসন অন্যতম । এ আসনে মতিন চৌধুরী ১৯৯১ সালে বিএনপির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। তিনি ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বস্ত্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর মন্ত্রীর দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠে গোটা নারায়ণগঞ্জ বাসি। মন্ত্রী হওয়ার জন্য লবিং শুরু করে দেয় নারায়ণগঞ্জ ২ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু,নারায়ণগঞ্জ ৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। আওয়ামীলীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার নারায়ণগঞ্জ বাসিকে মন্ত্রীত্ব থেকে বঞ্চিত করেন নাই। তিনি নারায়ণগঞ্জ থেকে মন্ত্রীত্ব দিয়েছেন। নতুন মন্ত্রিপরিষদে স্থান পেয়েছে নারায়ণগঞ্জ ১ আসনের সংসদ সদস্য বিশিষ্ট শিল্পপতি গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীক।গতকাল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে গোলাম দস্তগীর গাজীকে ফোন দেয়া হয়। পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে গোলাম দস্তগীর গাজী কে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। সোমবার বন্ত্র ও পাট মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীক । গোলাম দস্তগীর গাজী মন্ত্রী হওয়ার কথা শুনে সারা নারায়ণগঞ্জে উ’সবের আমেজ বাইছে। রূপগঞ্জের সর্বস্তরের মানুষ আনন্দে ফেটে পড়েছে। গোলাম দস্তগীর গাজী নারায়ণগঞ্জ বাসীর মুখ উজ্জ্বল করেছেন। আওয়ামীলীগের সকল সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ নারায়ণগঞ্জের সর্বস্তরের মানুুষ গোলাম দস্তগীর গাজী ফুলের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছে, আওয়ামী লীগের আন্দোলন সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় সার্বিক বিবেচনায় গোলাম দস্তগীর গাজীকে মন্ত্রী করা হয়েছে। গোলাম দস্তগীর গাজী নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের হয়ে ইতিহাস গড়েছেন। যেটা শামসুজোহা, শফিউল্লাহ, শামীম ওসমান , সাহারা বেগম কবরী, নজরুল ইসলাম বাবু করতে পারেন নাই।